প্রকাশ: ০৩:৪৯:২০ PM, শনিবার, জানুয়ারী ২, ২০১৬ | |
মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের কাছ থেকে গোপাল মাঝে মাঝে নানান অভাব-অনটনের কথা বলে বা মহারাজকে সন্তুষ্ট করে প্রচুর টাকা বখশিস পেত। মহারাজকে অনেক বিপদ আপন থেকে বুদ্ধির জোরে বাচাঁত গোপাল। মহারাজ সেজন্য দু-হাত ভরে পুরষ্কার দিতেন। কিন্তু নতুন বড় বাড়ি করার সময় গোপালের আর্থিক টান পড়ল। মাত্র কিছুদিন আগেই গোপাল রাজা কৃষ্ণচন্দ্রকে কথায় মুগ্ধ করে বেশ কিছু টাকা এনেছে, অথচ মজুরদের বকেয়া পাওনা মিটিয়ে দেওয়ার জন্য আরো কিছুটাকা না আনলে চলবে না। টাকা না দিলে মজুরেরা আর কাজ করবে না। কিন্তু মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের কাছে অভাব অনটনের কথা বলে আবার হাত পাততে গোপালের খুব লজ্জা হচ্ছিল। আর হাত পাতলেই যে তিনি আবার টাকা দেবেন তেমন নিশ্চয়তাই বা কোথায়? যদি না দেন লজ্জায় মাথা কাটা যাবে মহারাজ হাসবেন। এছাড়া কিছু মনে করতেও পারেন। তাই গোপাল মহারাজ কুষ্ণচন্দ্রের কাছ থেকে টাকা আনবার এক অভিনব উপায় বের করল। এবার ছেলেকে ভালোভাবে বুঝিয়ে সুজিয়ে রাজবাড়িতে পাঠিয়ে দিল। গোপালের ছেলেটিও কম সেয়ানা নায় যাকে বলে একবারে বাপকা বেটা। গোপাল ডালে ডালে চললে ও পাতায় পাতায় চলে। এমনি তার চালাকির দৌড়! বাপের পরামর্শমতো গোপালের ছেলে রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের কাছে গিয়ে কাঁদো কাঁদো হয়ে বললে, মহারাজ, গতকাল রাত্রে আমার বাবার কৃষ্ণপ্রাপ্তি ঘটেছে। আপনি দেখবেন চলুন কি অবস্থায় বাবার কৃষ্ণপ্রাপ্তি হয়েছে।
গোপালের ছেলের কথা শুনে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র ভীষণ দুঃখ বোধ করলেন। রাজা মনে মনে ভাবলেন, কৃষ্ণপ্রাপ্তি , মানে মৃত্যু। এ সময় গোপালের বাড়িতে গেলে গোপালের মা এবং স্ত্রী কান্নাকাটি করবে। তার চেয়ে টাকাকড়ি দিয়ে দিই, যাতে কাজটা ঠিকমত হয়ে যায়। গোপাল তাঁর মিত্রতুল্য এবং বয়স্য। শুধু তাই নয়, অনেক সময় নানান বিপদ আপদ থেকে মহারাজকে উদ্ধার করেছে গোপাল। সেই গোপালের এই আকস্মিক মৃত্যুতে মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের পক্ষে শোকভিভূত হওয়াই স্বাভাবিক। গোপালের মত বন্ধু হারানো অতীব দুঃখের ব্যাপার। তিনি খাজাঞ্জিকে ডেকে গোপালের ছেলেকে দু-হাজার টাকা দিতে বললেন। পরে শ্রাদ্ধাদি কাজের জন্য আরও পাঁচ হাজার টাকা দিবেন বলে গোপালের ছেলেকে প্রতিশ্রুতি দিলেন, যেন গোপালের কাজ ভালভাবে হয় যাতে বাকি কাজের কোন অসুবিধে না হয়। আর যদি কোন অসুবিধায় পড়ে এখানে এসে যেন খবর দেয়। তার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। গোপালের ছেলে রাজার দেওয়া দুহাজার টাকা ট্যাকে গুজে দিব্যি নাচতে নাচতে বাড়ি ফিরে গেল এবং বাবাকে সব কথা খুলে বলল। গোপাল মনে মনে হেসে নিল। যাক এখনকার মত কাজটা মিটে গেল বটে তবে পরে কি হবে সেটাই ভাবনা।
কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র গোপালের এক প্রতিবেশীর মুখ থেকে জানতে পারলেন যে, গোপাল মোটেই মারা যায়নি, দিব্যি বহাল তবিয়াতে বাড়ি তৈরির কাজ তদারক করছে। সে এখনি এই মাত্র তাই দেখে এসেছে বলল। একথা শুনে মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র ভীষণ চনে গেলেন। রাগের বশে তক্ষুনি কয়েকজন পেয়াদা পাঠালেন গোপালকে বেঁধে আনার জন্য। যে অবস্থায় থাকে সেই অবস্থায় যেন নিয়ে আসে, কোন ওজর আপত্তি না শুনে সঙ্গে ছেলেকেও যেন ধরে নিয়ে আসে।
তলব পেয়েই গোপাল ছেলে সহ পেয়াদাদের সঙ্গে সহজ ভাবেই রাজসভায় এসে হাজির হল। যেন কোন কিছুই হয়নি। মাত্র গায়ে একখানা চাদর দিয়েই আছে। আর গায়ে কিছুই বস্ত্র নেই। মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র গোপালকে বললেন, তুমি আর তোমার ছেলে দুজনেই ঠক ও জোচ্চোর। এত স্পর্ধা তোমাদের যে আমার সঙ্গেও প্রতারণ করতে সাহস পাও। তোমাকে আজও শুলে চড়ানো হবে। রাজসভায় ভাঁড় বলে কোন খাতির করা হবে না। তোমাকে বহুবার ক্ষমা করেছি, এবার কোনমতে ক্ষমা করা চলবে না।
মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের কথা শুনে রাজসভার অন্য সকলেই ভাবল, গোপালের আর নিস্তার নেই। গোপলকে শূলে চড়তেই হবে মহারাজকে মিথ্যে বলে টাকা নেওয়ার জন্য। মহারাজকে চাইলেই টাকা পেত, তবে কেন মিথ্যে বলে টাকা নিল। মহারাজ কৃষ্নচন্দ্র ভীষণ চটে গেছেন। এ যাত্রায় আর গোপালের নিস্তার পাওয়ার কোনও উপায় নেই। সকলেই দুঃখ করতে লাগল গোপালের এই অবস্থা দেখে। রাজসভায় সকলেই যখন গোপালের ভবিষ্যতের কথা ভেবে শঙ্কিত গোপাল তখবন পূর্বের মতোই নির্বিকার যেন কিছুই হয়নি এমনি নির্বিকার চিত্তে দাঁড়িয়ে আছে। মুখে কিছু বলছে না।
গোপালের নির্বিকার ভাব দেখে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র প্রচন্ড রেগে গিয়ে বললেন, তোমাকে শূলে চড়াবার আদেশ এখনই দিচ্ছি। তোমার পরামর্শেই তোমার ছেলে আমাকে এভাবে ঠকিয়ে টাকা নিয়ে গেছে। আমার সঙ্গে চালাকি? দাঁড়াও মজা দেখাচ্ছি।
তখন গোপাল চাদরের নিচে থেকে একটি পাথরের কৃষ্ণমূর্তি বের করে রাজাকে বললে, হুজুর আমার ছেলে আপনাকে মোটেই প্রতারণা করেনি। সে কোন মিথ্যা কথাও বলেনি। সত্যি সত্যিই কাল রাতে পাথরের এই কৃষ্ণমূর্তিটি পেয়েছি। কৃষ্ণপ্রাপ্তির জন্য যদি শূলে চড়াতে চান-চড়ান। আমি যেখানে বাড়ি তুলছি মাটির নিচেই এই নটবর শ্যামল কিশোকে পাওয়া গেছে। দেখুন কি সুন্দর মুর্ত্তি।
গোপালের মূর্ত্তির কথা শুনে মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র হতভম্ব হয়ে গেলেন। কোনও কথাই আর বলতে পারলেন না। নিজের বোকামির জন্য মনে মনে নিজেকেই ধিক্কার জানাতে লাগলেন। গোপালের মুখে তার কৃষ্ণপ্রাপ্তি প্রসঙ্গ শুনে রাজসভার অন্য সকলেই হো হো করে হেসে উঠল। মহারাজও না হেসে পারলেন না। ভাবলেন, হ্যাঁ- এ কৃষ্ণপ্রাপ্তিই বটে! আমারই বোঝার ভুল। সঙ্গে সঙ্গে প্রতিশ্রুতি মত আরও পাঁচ হাজার টাকা ও গোপালকে হয়রানি করার জন্য আর কিছু পুরষ্কার তৎক্ষণাৎ দিতে আদেশ দিলেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected] |