logo
প্রকাশ: ০১:২৩:৫৪ PM, সোমবার, সেপ্টেম্বর ৯, ২০১৯
পীরগঞ্জের রাজা নীলাম্বরের রাজধানীকে পর্যটন কেন্দ্র করার উদ্যেগ
বখতিয়ার রহমান, পীরগঞ্জ (রংপুর)

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার চতরা ইউনিয়নের রাজা নীলাম্বরের রাজধানীকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যেগ গ্রহণ করা হয়েছে । গত ৩০ জুলাই জাতীয় সংসদের স্পিকার ও রংপুর-৬ পীরগঞ্জ আসনের এমপি ড.শিরীন শারমীন চেীধুরী নীলদরিয়া পর্যটন কেন্দ্র কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন এবং বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড কর্তৃক নীলদরিয়াতে পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণের জন্য ইতিমধ্যে ১ কোটি ৩ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে । বরাদ্ধকৃত অর্থে এখানে শিশুদের খেলনা, লেডিস ও জেন্স ওয়াশ রুম ও পর্যটকদের যাতায়াতের জন্য টাইলস এর রাস্তা নির্মাণসহ বেশ কিছু উন্নয়ন কাজ অন্তর্ভুক্ত থাকবে ।

একাধিক তথ্যে জানা গেছে, প্রাচীনকালে রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় অনেক পীর আউলিয়া ও রাজা বাদশাহ ছিলেন। তাদের র্কীতি কাহিনী আজ ও উপজেলার মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত। সেই রাজাদের অন্যতম একজন ছিলেন রাজা  নীলাম্বর দেব। তাঁর নামে নীলাম্বরের কয়েকটি রাজধানী ছিল।  সেগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি ছিল চতরায়। পীরগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দক্ষিণে চতরা বাজারের অদূরে নীলদরিয়া নামক স্থানে ছিল সেই রাজধানী। 

এদিকে ১২ শ শতাব্দীতে বাংলায় যখন হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতাপ ছিল তখন পাক-ভারতের রাজধানী ছিল গৌড়ে । আর লক্ষন সেন ছিলেন গৌড়ের রাজা। তারই অধীনে ছিলেন পীরগঞ্জের কিংবদন্তীর রাজা নীলাম্বর দেব। তিনি গৌড়ের রাজা লক্ষন সেনকে কর দিতেন। সে যুগে হিন্দু রাজা বাদশাহরা নিরীহ প্রজাদের উপর নানা ধরনের নির্যাতন চালাতো। তাদের অত্যাচারের মাত্রা এতই প্রখর ছিল যে রাজার হুকুম ছাড়া প্রজারা কন্যা পর্যন্ত পাত্রস্থ করতে পারতো না । এ ভাবে তারা প্রজাদের উপর মর্মান্তিক নির্যাতন বা ষ্টীম রোলার চালাতো। দিনের পর দিন যখন হিন্দু রাজাদের অত্যাচারের মাত্রা বেড়েই চলছিল সে সময় ১৭ জন মুসলিম আউলিয়ার আগমন ঘটে পাক-ভারতে। এই আউলিয়াগণ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়ে ইসলাম ধর্মের কথা প্রচার করতে থাকেন। লোকজন তাদের সাথে সহজে মিশতে এবং কথা বলতে পারায় সাধারণ মানুষ ইসলাম ধর্মের প্রতি আসক্ত হতে থাকেন। এ খবর গৌড়ের রাজা জানতে পেরে মুসলমানদের সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। সে যুগে যুদ্ধ চলতো তীর ধনুক দিয়ে। মুসলমানদের সাথে যুদ্ধে গৌড়ের রাজা পরাজিত হন এবং গৌড় মুসলমানদের দখলে আসে। 

জানা যায় ১৭ জন আউলিয়ার মধ্যে একজন ছিলেন শাহ ইসমাইল গাজী (রহঃ)। তিনি পীরগঞ্জের বড় দরগাহতে আস্তানা গড়ে তোলেন। সেখান থেকে কর আদায়ের হিন্দু রাজা নীলাম্বর দেবের কাছে তার রাজধানী চতরায় জন্য লোক পাঠান। কিন্তু নীলাম্বর মুসলমানদের কর দিতে অস্বীকার করলে শাহ ইসমাইল গাজী (রহঃ) রাজা নীলাম্বরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। তখন প্রতিপক্ষের আক্রমন থেকে রক্ষা পেতে রাজা নীলাম্বর রাজধানীর চারপাশে আশি হাত প্রস্থ এবং আশি হাত গভীর ৫৬ একর জমিতে একটি পরিখা খনন করেন। খননকৃত ওই পরিখার মাটি দিয়ে রাজধানীর চারপার্শ্বে উঁচু করে ইটের প্রাচীর নির্মাণ করেন। প্রাচীরের দক্ষিণ দিকে রাখা হয় একটিমাত্র সদর দরজা। এই দরজা বন্ধ করা হলে রাজধানীর ভিতরে প্রবেশ করার কোন উপায় ছিল না। রাজধানী সুরক্ষার কাজ সমাপ্ত করে নীলাম্বরের সৈন্যরা রাজধানী থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দুরত্ব পর্যন্ত মাটি দিয়ে অসংখ্য বেড় (গড়) তৈরী করেন। সেই গড়ে হাতি পর্যন্ত লুকিয়ে থাকতে পারতো। এখনও কালের স্বাক্ষী হিসেবে গড়গুলো বিদ্যমান রয়েছে।

রাজধানী থেকে সর্বশেষ গড়টি ছিল পীরগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দক্ষিণ গাড়াবেড় পর্যন্ত। নীলাম্বরের সৈন্যরাও এ গাড়াবের পর্যন্ত এগিয়ে ছিল । গড় গুলো তৈরীর উদ্দেশ্য ছিল প্রতিপক্ষকে বাধা দেয়া যাতে তারা সহযে রাজধানী আক্রমন করতে না পারে । এক পর্যায়ে শাহ ইসমাইল গাজী (রহঃ) রাজা নীলাম্বরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা দিয়ে সৈন্য সহ যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। দীর্ঘ সময় যুদ্ধ চলায় মুসলমান সৈন্যদের সাহস ও যুদ্ধের কৌশলের কারণে নীলাম্বরের সৈন্যরা পিছু হটে চতরার সেই রাজধানীতে গিয়ে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। পিছুহটে রাজধানীতে আশ্রয় নেয়ার পর মুসলমান সৈন্যদের রাজধানীর অভিমুখে অগ্রসর হবার খবরে রাজা সকল সৈন্য ও প্রচুর খাদ্য সামগ্রী নিয়ে রাজধানীর ভিতরে প্রাচীর বেষ্টিত সদর দরজা বন্ধ করে অবস্থান করেন। এদিকে মুসলমান সৈনিকরা রাজধানী ঘিরে ফেলেন এবং অবরোধ সৃষ্টি করেন। যাতে নীলাম্বরের কোন সৈন্য বাইরে গিয়ে খাবার সংগ্রহ করতে না পারে। এ ভাবে কিছুদিন অতিবাহিত হবার পর নীলাম্বরের রাজকোষ শূন্য হয়ে যায়। শুধু পানি পান করে সৈন্যরা দিন কাটাচ্ছিল। ফলে শারীরিক দিক থেকে সৈন্যরা দুর্বল হয়ে পড়ে। এই সুযোগে মুসলমান সৈন্যরা রাজধানীর সদর দরজা ভেঙ্গে এক যোগে রাজধানী আক্রমণ করে এবং একে একে সমস্থ সৈন্যকে  হত্যা করে ও রাজা নীলাম্বর দেব কে বন্দি করে গৌড়ে  পাঠিয়ে দেন। এরপর নীলাম্বরের কি পরিণতি হয়েছে ? আজও তা অজানা রহস্যই রয়ে গেছে।

এখন রাজা নীলাম্বরের রাজধানীর মুল প্রাসাদের নেই কোন অস্তিত্ব। বিলীন হয়ে গেছে আবহমান কালের গতিতে। আছে শুধু প্রাচীরের ধংসাবশেষ ও রাজধানীর চতুর পার্শের খননকৃত পুকুর ।

চতরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এনামুল হক শাহিন এ ব্যাপারে তার প্রতিক্রিয়ায় জানান, সরকার নীলদরিয়াকে পর্যটন কেন্দ্র করার উদ্যেগ গ্রহন করায় চতরা বাসী আনন্দিত এবং এ থেকে সরকারের মোটা অংকের রাজস্ব আদায়ও সম্ভব হবে । 

সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected]