প্রকাশ: ০৩:১৮:৫৪ PM, শুক্রবার, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৯ | |
মেধা, ইচ্ছা শক্তি আর অভিজ্ঞতা থাকলে কোন বাধাই কাউকে থামিয়ে রাখতে পারে না। এমনটাই প্রমাণ করেছেন শেরপুরের নকলা উপজেলার বানেশ্বরদী ইউনিয়নের “ভূরদী খন্দকারপাড়া কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যাণ সংস্থার সদস্যরা।
এ সংস্থার ২৫ সদস্যের সবাই তাদের মেধা, ইচ্ছা শক্তি আর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে প্রত্যকে একজন কৃষি বিষয়ক পরামর্শদাতায় পরিণত হয়েছেন। তাদের পরামর্শে এলাকার কৃষকরা উপকার পাওয়ায় অনেকে তাদের কৃষি ডাক্তার বলে ডাকেন।
জানা গেছে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আইপিএম কৃষক মাঠ স্কুলের মাধ্যমে ২০১৪ সালে ১৪ সপ্তাহের কৃষি বিষয়ক প্রশিক্ষণ নেন তারা। ওই প্রশিক্ষণ জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে এবং কৃষি তথ্য সেবা কেন্দ্রে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কৃষি সমস্যা বিষয়ে পরামর্শ নিয়ে তারা সবাই সুনাম অর্জন করেছেন।
প্রতি শুক্রবার সন্ধ্যায় আলোচনায় বসেন তারা। সেখানে কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলাপ আলোচনা করা হয়। নিজেদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সমস্যা সমাধান দেয়া হয়। সমস্যা সমাধানে কোন প্রকার দ্বিমত সৃষ্টি হলে, ওই বিষয়ে সরাসরি কৃষিতথ্য সেবার ১৬১২৩ নাম্বারে ফোন দিয়ে জেনে নেন তারা। আর কৃষিতথ্য সেবার দেওয়া পরামর্শ তাদের সংস্থার নির্দিষ্ট ডায়েরীতে লিখে রাখেন। পরবর্তী মৌসুমে একই সমস্যা দেখা দিলে তারা নিজেরাই ডায়েরীতে লিখে রাখা পরামর্শ অনুযায়ী কৃষি মাঠে ব্যবহার করেন।
দীর্ঘদিন এভাবে চলতে থাকায়, অর্জিত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তারা সবাই যেন এখন কৃষি ডাক্তারে পরিণত হয়েছে। তাতে সুফল পাচ্ছেন এলাকার কৃষকরা। তাদের দেওয়া পরামর্শে লাভবান হওয়ায় ভূরদী, ছাল্লাতুলা, খন্দকারপাড়া, বানেশ্বরদী, কান্দাপাড়া, পোলাদেশী, কায়দা, মোছারচর, মোজার, বাউসা, কবুতরমারি, আন্দাড়িয়াসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার কৃষকরা তাদের কৃষি সমস্যায় দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে সরাসরি ভূরদী খন্দকারপাড়া কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যাণ সংস্থার সদস্যদের সরণাপন্ন হতে থাকেন।
ওই সংস্থার কৃষকদের পরামর্শ সফল হওয়ায় সুনাম ছড়িয়ে পড়ছে উপজেলা ছাড়িয়ে জেলা পর্যায়ে। অনেকেই তাদের কৃষি ডাক্তার বলে ডাকেন। এ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ অনেক সুবিধাভোগী এসব তথ্য জানান।
সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ্ব মো. ছাইদুল হক জানান, কৃষি প্রধান এই সোনার বাংলাদেশে অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি কৃষি কাজের সাথে জড়িত থাকতে পেরে এবং কৃষি বিষয়ক সাধারণ সমস্যা গুলো নিজেরা সমাধান দিতে পেরে তারা সবাই গর্ববোধ করেন।
তিনি বলেন, ২০১৪ সালে নকলা কৃষি অফিসের আওতায় ১৪ সপ্তাহের কৃষি বিষয়ক প্রশিক্ষণ শেষে তারা মনস্থির করেন যে, এলাকায় কৃষকদের জন্য কিছু করবেন। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। আইপিএম কৃষক মাঠ স্কুলের প্রশিক্ষণার্থী ও স্থানীয় কৃষকের পরামর্শ ক্রমে ২০১৫ সালের পহেলা সেপ্টেম্বরে প্রতিষ্ঠা করেন ‘ভূরদী খন্দকারপাড়া কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যান সংস্থা’ নামে সম্পূর্ণ স্বেচ্ছা সেবী একটি সংগঠন। স্বেচ্ছা শ্রমে এলাকায় কৃষি বিষয়ক সমস্যা সমাধান ছাড়াও অল্প পরিসরে শুরু করেন সামাজিক বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কাজ। তার মধ্যে কৃষিপণ্য উৎপাদন ও বিপনন, বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ, মাদক রোধ, বৃক্ষ রোপন, রাস্তার ভাঙা অংশে মাটি ভরাট, রাস্তা ভাঙন রোধ উল্লেখ যোগ্য।
আর এসবের ব্যয়ের বিষয়ে তিনি জানান, প্রয়োজন অনুসারে আমরা সবাই এলাকার লোকজনদের নিয়ে আলোচনা করে, প্রয়োজনীয় টাকা সংগ্রহ করে এসব কাজ করেন তারা। তাছাড়া অনেকে স্বপ্রণোদিত হয়েও তাদের সাথে আর্থিক শেয়ার করেন। উন্নয়ন মূলকা এসব কাজে বিশেষ করে এলাকার চাকরীজীবীরাই আর্থিক ভাবে বেশি সহযোগিতা করেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাস বলেন, দেশের প্রতিটি এলাকায় এমন কৃষি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হলে, অর্থনীতিতে কৃষি বিভাগের ভুমিকা আরো বাড়বে। তাছাড়া প্রতিটি কৃষক নিজেরাই একেকজন কৃষি বিষয়ক পরামর্শদাতা হিসেবে পরিণত হবে। এতেকরে বিভিন্ন স্তরের কৃষি অফিসারদের চাপ কমবে, কিন্তু বাড়বে কৃষি উৎপাদন। তাই দেশের প্রতিটি কৃষক মাঠ স্কুলকে কেন্দ্র করে ‘ভূরদী খন্দকারপাড়া কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যান সংস্থা’র মতো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন প্রতিষ্টা করার পক্ষে মতদেন কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাস।
সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected] |