logo
প্রকাশ: ০২:১৭:০৭ PM, মঙ্গলবার, নভেম্বর ৫, ২০১৯
পরিত্যক্ত প্লাস্টিক পণ্যে আসছে টাকা, বাড়ছে কর্মসংস্থান
মো. মোশারফ হোসেন, নকলা

মানুষের ব্যবহার্য্য প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন পরিত্যক্ত পণ্যের কারনে প্রতি মুহুর্তে পরিবেশ হুমকির দিকে যাচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য, কমে যাচ্ছে আবাদি জমির উৎপাদন ক্ষমতা। এমতাবস্থায় পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে অসংখ্য পরিবেশ বান্ধব ছোট ছোট কল কারখানা। এর ধারাবাহিকতায় শেরপুরের নকলা উপজেলার পৌর শহরের বাজারদি এলাকায় একটি এবং গড়েরগাঁও মোড় এলাকায় একটি প্লাস্টিক প্রক্রিয়াজাত করার কারখানা গড়ে উঠেছে। এসব ছোট কারখানায় স্থানীয় ভাবে তৈরি কাটার মেশিনের মাধ্যমে পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতলসহ বিভিন্ন প্লাস্টিকজাত পরিত্যক্ত পণ্য কেটে টুকরো টুকরো করে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন প্লাস্টিক প্রক্রিয়াজাত ও নতুন প্লাস্টিক পণ্য তৈরির কারখানাতে সরবরাহ করা হচ্ছে।

মফস্বল এলাকার ছোট ছোট কারখানার মাধ্যমে পরিত্যক্ত পণ্য প্রাথমিক ভাবে প্রক্রিয়াজাত করে বিক্রি করার মাধ্যমে আসছে টাকা, পাশাপাশি বাড়ছে কর্মসংস্থান; রক্ষা হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য ও আবাদি জমির উৎপাদন ক্ষমতা।

নকলা পৌর শহরের বাজারদি এলাকার এক প্লাস্টিক কাটার ছোট কারখানার মালিক আনোয়ার হোসেন জানান, তার কারখানায় নারী ও পুরুষ মিলে ১৫ থেকে ২০ জন শ্রমিক কাজ করেন। তাদের কর্মদক্ষতার উপর ভিত্তি করে নারীদের দৈনিক মজুরি ১৫০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা এবং পুরুষ শ্রমিকের মজুরি দৈনিক ৩৫০ টাকা থেকে ৪৫০ টাকা। তাছাড়া দোকানে প্লাস্টিক পণ্য সরবরাহ করার জন্য অন্তত ১০ থেকে ১৫ জন হকার নিয়োগ করা আছে। তারা পাড়া-মহল্লা ঘুরে প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন পরিত্যক্ত পণ্য কিনে এনে নগদ টাকায় তাদের কাছে বিক্রি করেন। এ হিসেবে তার কারখানার উপর ভিত্তি করেই অন্তত ২৫ থেকে ৩৫ টি পরিবার জীবীকা নির্বাহ করছেন।

গড়েরগাঁও মোড় এলাকার অন্য এক প্লাস্টিক কাটার কারখানার মালিক ফরিদ মিয়া জানান, ১০ হাজার টাকা দিয়ে হকারের কাছ থেকে গড়ে ৫০০ কেজি পরিত্যক্ত পণ্য ক্রয় করা সম্ভব। কিনার পরে এসব পণ্য বিক্রি করা পর্যন্ত প্রতি কেজিতে ব্যয় হয় ১০ থেকে ১২ টাকা। প্রতি ১০ হাজার টাকার পণ্য হকারের কাছে ক্রয়, কাটার মেশিনে কাটা, প্রক্রিয়াজাত করা, শ্রমিক মজুরি ও পরিবহণসহ অন্যান্য ব্যয় বাদে বিক্রি শেষে লাভ থাকে ২ হাজার টাকা থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা।

তারা জানান, প্রতি মাসে অন্তত ১২ টন থেকে ১৫ টন প্রাথমিক প্রক্রিয়াজাত করা পণ্য ঢাকার বিভিন্ন প্লাস্টিক প্রক্রিয়াজাত ও নতুন প্লাস্টিক পণ্য তৈরির কারখানাতে সরবরাহ করতে পারেন। এতেকরে তাদের প্রতি জনে মাসিক লাভ হয় ২৫ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকা। তারা আরও জানান- নকলার ইয়াদ আলী, লাল মিয়া, খোরশেদ মিয়া, চঞ্চল মিয়া, আমিরুল ইসলাম ও রুবেল মিয়া এবং গনপদ্দী বাজারের মোরশেদ আলীর মতো অনেকে পরিত্যক্ত পণ্যের দোকান দিয়ে লাভবান হয়েছেন। তারা হকারের কাছে পণ্য কিনে পরে অল্প লাভে প্লাস্টিক কাটার কারখানার মালিক আনোয়ার হোসেন ও ফরিদ মিয়ার কাছে বিক্রি করেন। এতে উপজেলায় অন্তত অর্ধশতাধিক হকার, ৩০ থেকে ৪০ জন কারখানার শ্রমিক ও ১০ থেকে ১৫ জন পরিত্যক্ত পণ্যের দোকানির পরিবার স্বাচ্ছন্দে জীবীকা নির্বাহ করছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাশ ও বিএডিসি আলু হিমাগারের উপপরিচালক (টিসি) কৃষিবিদ মো. রফিকুল ইসলাম জানান, প্লাস্টিক পণ্য রিসাইক্লিং করার পদ্ধতি উদ্ভাবন না হলে বা না থাকলে এপর্যন্ত দেশে কৃষি পণ্য উৎপাদনে ব্যাপক ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে যেতো। তাঁরা বলেন, প্লাস্টিক পণ্য রিসাইক্লিং করার পদ্ধতি উদ্ভাবন হওয়ায় সৃষ্টি হচ্ছে কর্মসংস্থান, দূর হচ্ছে বেকারত্ব।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদুর রহমান জানান, ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনারের নির্দেশে নকলা উপজেলাকে ভিক্ষুক মুক্ত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নেওয়া হয়েছে। তারমধ্যে পরিবেশ বান্ধব কাগজের ঠোংগা তৈরি করে কোন এক সময়ের ভিক্ষুকদের বর্তমানে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তায় পরিণত হওয়ার বিষয়টি উপজেলা ছাড়িয়ে জেলাতেও ব্যাপক আলোড়না সৃষ্টি করেছে। তিনি আরও জানান, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে উপজেলা প্রশাসন, বিভিন্ন সংগঠন ও জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় উপজেলার অন্যান্য ভিক্ষুকদেরকে ভিক্ষা ভিত্তিতে নিরুৎসাহী করে পরিত্যক্ত প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর পণ্য পাড়া মহল্লায় ফেরি করে, তা বিক্রি করার মাধ্যমে স্বাবলম্বী হওয়ার প্রতি উৎসাহিত করা হবে।

এতে করে একদিকে ভিক্ষা ভিত্তি বন্ধ হবে, অন্যদিকে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হবে, অক্ষুন্ন থাকবে আবাদি জমির উৎপাদন ক্ষমতা, পরিবেশ হবে দূষণ মুক্ত। পাশাপাশি নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। ফলে কমবে বেকারের সংখ্যা ও পরনির্ভশীলতা; এমনটাই মনে করছেন পরিবেশ বিজ্ঞানী ও সুশীলজনরা।  

সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected]