প্রকাশ: ০১:৫৬:২৮ PM, বুধবার, ডিসেম্বর ৪, ২০১৯ | |
অভিজ্ঞতা আর কঠোর পরিশ্রমের ফলে যেকোন কাজে যে কেউ স্বাবলম্বী হতে পারেন, এমন প্রমান গড়ছেন শেরপুর জেলার নকলা উপজেলার বানেশ্বরদী ইউনিয়নের বানেশ্বরদী কান্দাপাড়া এলাকার মৃত আব্দুল সবুরের ছেলে অল্প শিক্ষিত দরিদ্র মানিক মিয়া। কিছু দিন আগের দরিদ্র মানিক মিয়া এখন হাঁসের খামার করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তার সংসারে এসেছে স্বচ্ছলতা। মুক্তি পেয়েছেন আর্থিক দৈন্যতা থেকে।
উপজেলার মধ্যে তিনি এখন একজন সফল হাঁস খামারির পরিচিতি পেয়েছেন। সুখের আশায় বাড়ির সবাই এ খামারে পরিশ্রম করছেন, সুদিনের মুখও দেখতে শুরু করেছেন, সেই খামার দিয়ে এখন ছেলে মেয়েদের পড়ালেখা, সংসারের খরচ সবই চালছে। মানিক আগামীতে তার খামারটা আরও বড় করার জন্য কিছু জমি ক্রয়ের চেষ্টা করছেন। নকলাসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার অনেক দরিদ্র পরিবার হাঁস পালনের মধ্য দিয়ে ভাগ্যের চাকা ঘুড়িয়েছেন, তাদের হয়েছে দিন বদল।
কিছুদিন আগেও মানিক মিয়ার পরিবারে অভাব অনটন ছিল নিত্যসঙ্গী। আর এই অভাবের তাড়নায় পেটের দায়ে মানিক গাজীপুর জেলার মির্জাপুর এলাকায় এক হাঁস-মুরগীর খামারে দীর্ঘ্য দিন চাকরি করেছেন। সেখানের অর্জিত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ২০১৮ সালে নিজ এলাকায় হাঁসের খামার করার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৯ সালের শুরুতে হাঁসের খামার করার জন্য বানেশ্বরদী কান্দাপাড়া এলাকায় ৭০ শতাংশ নিচু জমি ৫ বছরের জন্য ২ লাখ ৪০ হাজার টাকায় বন্ধক নেন। এই জমির একপাশে ১৫ শতাংশ জমিতে ৩ ফুট গভীর পুকুর করেন এবং সেখানে দেশীয় জাতের বিভিন্ন মাছ চাষ করনে তিনি। এর নিকটেই রাতে হাঁস রাখার জন্য অপেক্ষাকৃত উঁচু আরও ১০ শতাংশ জমি বছরে ৬ মন ধান দেওয়ার শর্তে বন্ধক নেন। উঁচু সেই ১০ শতাংশ জমিতে টিন শেট একটি ঘর তৈরী করেছেন। ওই ঘরেই হাঁস ও মানিক মিয়া নিজে রাত যাপন করেন।
হাঁসের সেবারত অবস্থায় মানিক মিয়ার সাথে কথা হলে তিনি জানান- দেশে বিভিন্ন জাতের হাঁস থাকলেও বা পালন করা হলেও অধিক ডিম উৎপাদনকারী খাকী ক্যাম্বল জাতের হাঁস পালন করে তিনি অধিক লাভবান হচ্ছেন। তিনি জানান, ময়মনসিংহের নান্দাইল চৌরাস্তা এলাকা থেকে একদিনের প্রতিটি বাচ্চা ৩৫ টাকা করে কিনে আনেন। পরিবহনসহ প্রতিটি বাচ্চার পিছনে প্রথম দিনেই খরচ হয় ৩৮ টাকা করে। এতে করে ৭০০ টি একদিনের বাচ্চা বাবদ ২৬ হাজার ৬০০ টাকা, ৭০ শতাংশ জমি বন্ধক বাবদ ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা ও ৬ মন ধান, বিদ্যুৎ লাইন, সংযোগ ও বৈদ্যুতিক মটর বাবদ ২২ হাজার টাকা, হাঁস ও নিজে জন্য ঘর নির্মান বাবদ ২০ হাজার টাকা; পুকুর খনন, পাড় বাধা ও ৭০ শতাংশ জমিতে জাল দিয়ে হাঁসের ভেড়া দেওয়া বাবদ ৪০ হাজার টাকা ও অন্যান্য খরচসহ সর্বসাকুল্যে ব্যয় হয় প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা। এতে ২ লাখ টাকা নিজের আয়ের পুঁজি এবং বাকি টাকা ঋণের।
মানিক মিয়া আরও জানান, বাচ্চা আনার দেড় মাসের মধ্যে উপজেলার আড়িকান্দা এলাকার জাফর আলী মহুরীসহ কয়েক জনের কাছে ৩০০ টি হাঁস প্রতিটি ২৯০ টাকা করে বিক্রি করেছেন। বর্তমানে মানিকের খামারে ৪০০ টি বড় হাঁস আছে। এর মধ্যে ৩৭০ টি মাদী এবং ৩০ টি হাঁস মর্দা। ৩৭০ টি মাদী হাঁসের মধ্যে গত দেড় মাস আগে থেকে ২৫ টি হাঁস ডিম দেওয়া শুরু করে, তা বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে প্রতিদিন ১৪০ থেকে ১৫০ টি হাঁস নিয়মিত ডিম দিচ্ছে। খুচরা হিসেবে প্রতি হালি হাঁসের ডিম ৪০ টাকা করে এবং পাইকারী শতকরা হিসেবে ১০০ ডিম বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকা থেকে ৯৫০ টাকা করে। মানিক মিয়া আশা প্রকাশ করে বলেন, অল্প কিছু দিনের মধ্যে শতকরা ৮৫ ভাগ মাদী হাঁস ডিম দেওয়া শুরু করবে। এতে করে প্রতিদিন ৩১০ টি হাঁস ডিম দিবে। তবে প্রতিদিন অন্তত ১০০টি ডিমর দাম হাঁসের খাবার ও অন্যান্য ব্যয় বাবদ চলে যাবে। ব্যয়বাদেও দৈনিক এক হাজার ৮৯০ টাকা থেকে এক হাজার ৯৯০ টাকা তার আয় থাকবে। এ হিসেব মতে প্রতি মাসে ৫৭ হাজার টাকা থেকে ৬০ হাজার টাকা তার লাভ হবে। ফলে বছরে তার লাভ দাঁড়াবে ৬ লাখ ৮৪ হাজার থেকে ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা।
মানিক মিয়া বলেন, আগামী ভাদ্র মাস পর্যন্ত আমার খামারের মাদী হাঁসগুলো ডিম দিবে। খাকী ক্যাম্বেল জাতের হাঁস ২৪ মাস বয়স পর্যন্ত নিয়মিত ডিম দেয়। পরে আস্তে আস্তে কমতে থাকে। তাই ২৫ মাস বয়সের পরে আমার হাঁসের হাঁসগুলো বিক্রি করে দিব। তখন এসব হাঁস প্রতিটি কমপক্ষে ৩০০ টাকা করে বিক্রি করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশাব্যক্ত করেন। প্রাণি সম্পদ চিকিৎসকরা জানান, হাঁসের রোগ বালাই সাধারণত কমহয়। তবে কিছু মৌসুমে ডাক প্লেগ ও ডাক কলেরা রোগের সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই বাচ্চার বয়স ২১ দিন থেকে ২৫ দিনের মধ্যে ডাক প্লেগের ভ্যাক্সিন এবং ৭৫ দিনের মধ্যে ডাক কলেরার ভ্যাক্সিন দিয়ে নিলে এসব মহামারী রোগে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায়।
কান্দাপাড়া এলাকার মহিউদ্দিন কমলসহ অনেক গ্রামবাসী জানান, কিছুদিন অগেও মানিক মিয়ার সংসারে সবমময় অভাব-অনটন লেগেই থাকতো; কিন্তু হাঁসের খামার করার পর তার অভাব দূর হয়েছে। সংসারে সচ্ছলতা ও জীবনে সফলতা লাভ করেছে মানিক। তারা বলেন, হাঁসের খামার করে মানিকের মতো যে কেউ সংসারের অভাব দুর করতে পারেন, হতে পারেন স্বাবলম্বী। এরিমধ্যে নকলাসহ বিভিন্ন জেলা উপজেলার অনেকে হাঁস পালনের মধ্য দিয়ে ভাগ্যের চাকা ঘুড়িয়েছেন, তাদের হয়েছে দিন বদল।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আবুল খায়ের মুহাম্মদ আনিসুর রহমান জানান, বানেশ্বরদীর মানিক মিয়াসহ উপজেলায় চন্দ্রকোনা, অষ্টধর, পাঠাকাটা, টালকী, উরফা ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের অনেক দরিদ্র পরিবার ক্ষুদ্র আকারে হাঁসের খামার করে লাভবান হয়েছেন। এছাড়াও অনেকে বাড়িতে হাঁস পালন করে লাভের মুখ দেখছেন। তবে উপজেলার বানেশ্বরদী ইউনিয়নের বানেশ্বরদী কান্দাপাড়া এলাকার মৃত আব্দুল সবুরের ছেলে মানিক মিয়া অল্প শিক্ষিত হয়েও পূর্ব অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ও কঠোর পরিশ্রম করে উপজেলার মধ্যে সফল হাঁস খামারির পরিচিতি পেয়েছেন। হাঁস পালন একটি লাভজনক ব্যবসা। যেকোন বেকার নারী-পুরুষ হাঁস পালনে এগিয়ে এলে সরকার প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা করবে বলে তিনি আশাব্যক্ত করেন। এতেকরে কমবে বেকারত্ব, বাড়বে কর্মসংস্থান। তিনি আরও বলেন, উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে হাঁস খামারি ও বাড়িতে পালনকারীদের নিয়মিত পরামর্শ সেবা দেওয়া হচ্ছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected] |