প্রকাশ: ০৫:২৪:২৯ PM, শনিবার, মে ২৩, ২০২০ | |
কারাগারের বন্দীরাও মনে হয় সীমিত স্বাধীনতা ভোগ করতে পারে। কিন্তু করোনায় কক্ষবন্দী জীবনে মনে হয় সেটুকুও নেই। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মতো কনডেম সেলে থাকার মতো। নির্জন দ্বীপে একাকী জীবনও এভাবে কাটে? ভুক্তভোগীরাই শুধু তা বলতে পারবে। বাইরে উপলব্ধি করা মনে হয় সম্ভব না।
এক মাসের স্বেচ্ছা সশ্রম গৃহবন্দিত্বের আজ চব্বিশ দিন। সশ্রম গৃহবন্দিত্ব হলো রুমের সব কাজ নিজে করা। থালা-বাসন ধোয়া, কাপড় কাচা, বিছানা গোছানো, ঝাড়মোছ দেয়, মশারি টানানো- এসব আর কি।
করোনা নিয়ে নিজগৃহে পরবাসী শুধু কি আমি একলা? বউ-ছেলেমেয়েসহ চারজনই গৃহবন্দি। তারা সর্বোচ্চ বারান্দায় যাচ্ছে। আমার সঙ্গে পুরোপুরি সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন। অথচ ছেলেমেয়েদের যে বয়স তাতে ওদের দাপিয়ে বেড়ানোর কথা। তাদের মনমরা মুখ দেখা একজন পিতা বা স্বামীর জন্য সত্যি পীড়াদায়ক।
তবু মনে মনে ভীষণ আশা করছি পবিত্র ঈদুল ফিতরে মুক্তির স্বাদ মিলবে। গৃহকর্ত্রী হয়তোবা আমার মুক্তির সনদে স্বাক্ষর করবেন। আমার এক আমেরিকা প্রবাসী বন্ধু বলেন, 'দেখুন, স্ত্রী হলো সংসারের প্রেসিডেন্ট। স্বামী ভাইস প্রেসিডন্ট বা প্রধানমন্ত্রীও নন; বড়জোর প্রথম শ্রেণীর লিয়াজোঁ অফিসার।' তাই আমার মুক্তির সনদে প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষরের অপেক্ষায দিন গুনছি।
ব্ন্ধু শুভাকাঙ্খী আত্মীয়স্বজন সবাই বলে মনোবল ঠিক রাখতে। মনোবল হয়তো ঠিক রাখা যায় কিন্তু মানসিক পীড়ন কীভাবে দূর করব বুঝতে পারছি না। তারপরও আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, সহকর্মী সবার শুভকামনা ও দোয়ার বদৌলতে আল্লাহ আমাকে নতুন জীবন দিয়েছেন। কারণ করোনা আক্রান্ত হবার তৃতীয় দিন শ্বাসকষ্ট আর অষ্টম দিন প্রচণ্ড ডায়রিয়া আমাকে মৃত্যুর দুয়ারে নিয়ে গিয়েছিল।
রোগটি সম্পর্কে মনে হয় ডাক্তারদেরও ভালো ধারণা নেই। স্বাস্থ্যসেবার হেল্পলাইন বলুন আর হটলাইন বলুন দীর্ঘ অপেক্ষার পর ডাক্তারের সংযোগ পেলেও তারা একেকজন একেক পরামর্শ দিতেন। তারা কথা বলতে বিরক্ত না হলেও তাদের পরামর্শের ভিন্নতায় কিছুটা সমন্বয়হীনতা আছে বলে আমার উপলব্ধি। তাই আমাকে আমার পরিবারকে নিরাপদ রাখতে আরো কয়েকদিন স্বেচ্ছাবন্দী থাকতে হবে।
আমার এ অসুস্থতায় আমাকে সব ভাই, ভাইদের স্ত্রী, সব মামা, মামাত ভাইবোন, বাড়ির মালিক, আমার অফিস সহকর্মী, আমার ঊর্ধ্বতনরা বেশ সহযোগিতা করেছেন। বড় ভাই-ভাবী টেনশনে এক রাত নির্ঘুম কাটিয়েছেন, ওষুধ-পথ্য পাঠিয়েছেন, দোয়ার ব্যবস্থা করেছেন। ছোটরাও যে যেভাবে পেরেছে হেল্প করেছে। বাবা-মা নেই সেটা বুঝতেই পারিনি। যা আমার মনোবল বাড়িয়েছে। আমি আমার পরিবার তাদের কাছে বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ।
এবার আসি বন্ধুদের প্রসঙ্গে। ফেসবুকের দু’লাইন জ্বর নিয়ে স্ট্যাটাস দেয়ার সাথে সাথে আমার শিক্ষাজীবনের বন্ধুরা উদগ্রীব-উৎকণ্ঠায় খোঁজ নিতে থাকে। তারা অনেকে তাদের মসজিদে আমার জন্য দোয়ার আয়োজনও করেছে। বন্দিজীবনের অন্যান্য কষ্টের বিষয়েও তারা খোঁজ নিয়েছে, সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে। তাদের কাছে আমি চির কৃতজ্ঞতায় আবদ্ধ। এখন শুনতে পাচ্ছি বন্ধুরা 'করোনাজয়ী বীর' হিসেবে সংবর্ধনা দিতে উপহার সামগ্রীসহ অপেক্ষায় আছে।
ফেসবুকের মাধ্যমেও এখন আমার অনেক শুভাকাংখী তৈরি হয়েছে। এক-দু’জনকে চোখে দেখলেও বেশিরভাগ অদেখা। এর মধ্যে প্রবাসীও আছেন। তারাও যে আমাকে বন্ধু বা আপন ভাবেন অসুস্থ না হলে বোধকরি উপলব্ধিটা সেভাবে আসত না। ফেসবুকের বন্ধুরাও আমাকে সাহস জুগিয়েছেন। দু’একজন অন্যভাবেও সহযোগিতা করেছেন, যা আমাকে ঋণী করে রাখবে।
ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেখা-অদেখা এসব বন্ধু-ভাইবোনদের প্রতিও আমার শ্রদ্ধামিশ্রিত অফুরান কৃতজ্ঞতা।
মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে অশেষ শুকরিয়া সবার দোয়া-প্রার্থনার বরকতে তিনি আমাকে ফের হায়াত দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে ক্ষমা করুন, হেফাজত করুন, রহমত-বরকত দান করুন। সর্বোপরি সবাইকে সুস্থ রাখুন। করোনার নিষ্ঠুরতা থেকে আল্লাহ আমাদের সবাইকে নিরাপদ রাখুন। আমিন।
লেখক- মুশফিকুর রহমান বাদল, সিনিয়র সহ-সম্পাদক ও ইনচার্জ, দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ অনলাইন বিভাগ।
সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected] |