প্রকাশ: ০৪:৫৫:৩৭ PM, বৃহস্পতিবার, মে ২৮, ২০২০ | |
মানুষের অসুস্থতা প্রধানত দুই প্রকার, শারীরিক ও মানসিক। বিশ্বস্বাস্থ সংস্থা কর্তৃক সুস্থতার সংজ্ঞায় এই দুই প্রকার স্বাস্থ্যের সাথে সামাজিক স্বাস্থের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। কেউ কেউ এর সাথে আধ্যাত্মিক সুস্থতাকে সংযুক্ত করেন। তবে সামাজিক ও আধ্যাত্মিক স্বাস্থকেও বৃহত্তর দৃষ্টিতে মানসিক স্বাস্থের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা চলে। তবে এতে করে একটি বিষয় পরিষ্কার হয় যে, মানসিক স্বাস্থের গন্ডিটি বেশ বড়। আমরা শারীরিকভাবে কোন অসুস্থতা অনুভব করলে চিকিৎসকের সাহায্য নিতে চেষ্টা করি। কিন্তু একেবারে পাগল না হওয়া পর্যন্ত মানসিক চিকিৎসার কোন উদ্যোগ সাধারণত আমরা নেই না।
আসলে মনের অসুস্থতা বিষয়টি ব্যাপকতর। পাগলামি বা ক্লিনিক্যালি নির্ধারিত রোগ ছাড়াও মন নানা কারণে অসুস্থ হতে পারে। আমরা যদি অসুস্থ শব্দটিকে ব্যবহার না করে এর স্থানে অস্বাভাবিক শব্দটি ব্যবহার করি তাহলে মানসিক অসুখের বিষয়টিকে আমরা ব্যাপক দৃষ্টিকোণ থেকে গ্রহণ করতে পারবো। অস্বাভাবিক বলতে এমন কিছুকে বোঝায় যা যেমনটি থাকার কথা বা প্রকৃতিগতভাবে যেমন হয় তেমনটি না থাকা। আমরা যদি মানুষের মন সম্পর্কিত কথা বলি তাহলে এর স্বাভাবিকতা বলতে কি বোঝায় তা ভেবে দেখা দরকার।
মানুষ দেহ মনের সমষ্টি। জন্মের সময় মানুষের মনে কোন মন্দ ধারণা থাকেনা। মানুষ খারাপ মানসিকতা নিয়ে জন্মায় না। সামাজিক জীব হিসেবে মানুষ জন্মের পর ক্রমশ তার মনকে বিভিন্ন ধারণা দ্বারা পরিপূর্ণ করে তোলে। মানুষের সামাজিক সত্তাকে কখনো অস্বীকার করা চলে না। প্রকৃতপক্ষে মানুষ সমাজ থেকেই সামাজিক চেতনা লাভ করে। সেই সামাজিক চেতনাই ব্যক্তি চেতনাকে লালন করে থাকে অনেকাংশে। তবে ব্যক্তিমানুষের মধ্যে তারপরেও নানা ধরনের বিভিন্নতা দেখা দেয়। একই সমাজে অবস্থান করেও বিভিন্ন ব্যক্তির মানসিকতা বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। এর একটি বড় কারণ পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ, ব্যক্তি উদ্যোগে অধ্যায়ন ইত্যাদি। কোন ব্যক্তি যদি এমন পরিবারে জন্মগ্রহণ করে যে পরিবারের মূল্যবোধ অনেক উন্নত; তাহলে সমাজের অনেক মন্দ প্রভাব থাকলেও ঐ পারিবারিক মূল্যবোধ সংশ্লিষ্ট পরিবারের প্রত্যেক সন্তানকে অনেক দিক থেকেই ভালো মানসিকতার মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। যেমন পরিবারের ধর্মীয় মূল্যবোধ সঠিক হলে অর্থাৎ কুসংস্কার মুক্ত হলে সেই পরিবারের সন্তান যথার্থ ধর্মীয় চেতনা নিয়ে বেড়ে উঠবে। বড়দের শ্রদ্ধা করা, ছোটদের স্নেহ করা, কারো দুঃখে দুঃখিত হওয়া, কারো উন্নতিতে খুশি হওয়া, পরনিন্দা না করা, অন্যের প্রতি হিংসা পোষণ না করা, মানুষকে সাহায্য করা এবং সার্বিকভাবে মানুষের কল্যাণ চিন্তা করা ইত্যাদি নৈতিক আদর্শ বা মূল্য যদি কোন পরিবারে বিদ্যমান থাকে তাহলে সেই পরিবারের সন্তানেরা শিশুকাল থেকেই সুন্দর চেতনা নিয়ে বড় হতে থাকবে। তাদের মন হবে যথার্থভাবে মানবিক। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সুশিক্ষা নিশ্চিতকরণ এমনকি ব্যক্তিগত পঠনপাঠন এর মাধ্যমেও কোন ব্যক্তি এমন স্বাভাবিক সুন্দর মনের ধারক হতে পারে। মানুষের মন বলতে আমরা মূলত এমন একটি মনকে বোঝাবো যা মানবিক মূল্যবোধকে বা মানুষ হিসেবে কিছু উন্নত মূল্যবোধ ধারণ করে। সেই মনই স্বাভাবিক যে মন মানবোচিত মূল্যবোধ ধারণ করে। একজন সামাজিক মানুষ হতে হলে বা মানুষ হিসেবে যথার্থ হতে হলে তার মনকেও মানুষের মনের মত হতে হবে।
উপরে যে সকল মানবিক গুণের কথা বলা হলো এগুলো না থাকলে বা এর উল্টোগুলো থাকলেই কোন মানুষকেই যথার্থ মানুষ বলা চলেনা। সেই ব্যক্তি শারীরিকভাবে সুস্থ হলেও তার মন যেহেতু অস্বাভাবিক হবে, তাই তাকে স্বাভাবিক মানুষ বলা যাবেনা। একদিক থেকে তাকে অসুস্থ মানসিকতার মানুষই বলা যায়। কোন সমাজে যদি মানসিকভাবে অস্বাভাবিক তথা অসুস্থ মানুষের সংখ্যা বেড়ে যায় তাহলে সেই সমাজ বা রাষ্ট্রের এমনকি বিশ্বের অবস্থা অধঃপতনের দিকে ধাবিত হয়। তখনই মানুষের মধ্যে অশান্তির নানারকম উপাদান আবির্ভাব হয়। মানুষের মধ্যে মানসিক অশান্তি সৃষ্টি হয় এমনকি শারীরিক অসুস্থতাও দেখা দিতে পারে। প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক প্লেটো তাঁর বিখ্যাত রিপাবলিক গ্রন্থে বলেছিলেন:
“যে সমাজের পতন ঘটে তার ভীরের জায়গা হয়ে ওঠে আদালত এবং হাসপাতাল।”
বর্তমান পৃথিবীর দিকে তাকালে আমরা অত্যন্ত বেদনার সাথে লক্ষ করি যে, অধিকাংশ দেশের হাসপাতালগুলো চাপ সামলাতে পারছেনা। এমনকি অনেক হাসপাতাল রোগের সঠিক চিকিৎসা দেওয়ার জন্য উপযুক্ত না। ‘করোনা’ নামক এক ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট কোভীড-১৯-এর দানবীয় দাপটে হাজার হাজার মানুষ অসুস্থ হচ্ছে। বিশ্বে অধিকাংশ মানুষ আজ গৃহবন্দী। সামাজিক এমনকি শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হচ্ছে মানুষকে। মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকা-সহ বর্হিমুখি সবধরনের কর্মকা- স্থবির হয়ে পড়েছে। ঘরবন্দী অনেক সুস্থ মানুষও নানা ধরনের সমস্যার শিকার। খাদ্য সমস্যা তার মধ্যে অন্যতম। বিশেষকরে যেসকল মানুষ অত্যন্ত দরিদ্র, খাদ্যের জন্য যাদের বাইরে বের হতে হয় তাদের অবস্থা সবচেয়ে দুঃখজনক। বাইরে গেলে করোনায় আক্রান্ত হবে, অন্যদিকে ঘরে বসে থাকলে অনাহারে মরতে হবে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশের এমন খেটে খাওয়া মানুষ, অল্প আয়ের মানুষের জীবন এখন সবচেয়ে সংকটাপন্ন। তাছাড়া ‘করোনা ভাইরাসে’র অতিমাত্রায় সংক্রমণ প্রবণতার কারণে মানুষ তাদের অন্যান্য রোগের চিকিৎসা নিতেও হাসপাতালে বা কোন চিকিৎসকের কাছে যেতে ভয় পাচ্ছে। এত মৃত্যু ঝুঁকি ও জীবনের নানারকম শঙ্কা নিয়ে ঘরবন্দী আপাত সুস্থ মানুষও মানসিক এমনকি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে উঠছে। করোনা ভাইরাসের হামলার পূর্ব থেকেই বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আদালতে ভিড়ের বিষয়টি সার্বিকভাবে ক্রমবর্ধমান ছিলো। এমনকি বিভিন্ন যুদ্ধ বিগ্রহ, জাতিগত দ্বন্দ্ব, সাম্প্রদায়িক কলহ, পারিবারিক ঝগড়া-বিবাদ, সাম্রাজ্যবাদী আক্রমণ, অর্থনৈতিক আগ্রাসন ইত্যাদির মাধ্যমে বিশ্বময় আসত্তি স্থাপনের নজির ক্রমবর্ধমান। ক্ষমতাশীল অনেক দেশ তাদের সম্পদ বৃদ্ধির জন্য পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে চলেছে। অস্ত্র বিক্রির জন্য চলছে যুদ্ধের উস্কানি। পৃথিবীতে অনেক মানুষ হয়ে পড়েছে উদবাস্তু। করোনায় আক্রান্তের অনেক পূর্ব থেকেই অনাহারে মারা যাচ্ছে অনেক মানুষ। ইত্যাদি বিচারে সার্বিকভাবে বিশ্বময় মানবসমাজ সত্যি প্লেটোর কথিত অধঃপতনের দিকে চলমান।
করোনা ভাইরাস কীভাবে আসলো? এর জিনিওলজি কী? এসব নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক চলমান। কারো কারো মতে এটি মানুষের উদ্ভাবন। গবেষণাগারে তৈরি হয়েছে এই ভাইরাস। এটি একটি জীবাণু অস্ত্র। আবার অনেকে মনে করছেন প্রকৃতির নানামুখী বিবর্তনের মাধ্যমেই এই ভাইরাসের উৎপত্তি হয়েছে। কেউ কেউ এতসব চিন্তা না করেই একে বিধাতার তরফ থেকে প্রদানকৃত শাস্তি বা ‘গজব’ হিসেবে ব্যাখ্যা করতে চাচ্ছেন। বিধাতা বিনা কারণে কাউকে শাস্তি দেন না। যারা স্রষ্টায় বিশ্বাস করেন তারা নিশ্চয়ই এটাও বিশ্বাস করেন যে, স্রষ্টা তাঁর প্রিয় সৃষ্টি মানবজাতিকে কখনোই বিনা কারণে শাস্তি দেন না এবং তিনি ন্যায়বিচারক। তাই যে মুসীবত মানবজাতির ওপর নিপতিত হয় তা তাদেরই কর্মফল। মানুষের এটা প্রাপ্য তাই তিনি এটা দেন। প্রকৃতির মধ্যে দিয়ে বিবর্তনের ফল হিসেবে এই ভাইরাস উন্মোচিত হলেও, এইকথা স্বীকার্য যে প্রকৃতির স্বাভাবিক বিবর্তন বা গতি-প্রকৃতিতে মানুষ নানাভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে চলেছে। প্রতিনিয়ত মানুষ প্রকৃতির উপর জুলুম করছে, ক্ষতিগ্রস্ত করে তুলছে প্রকৃতির স্বাভাবিক গতি যা মানুষকে সুস্থ জীবনের জন্য সহায়তা প্রদান করবে। প্রকৃতি যদি স্বাভাবিকভাবে চলতে না পারে, প্রকৃতির ইতিবাচক ব্যবহারের বদলে তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে সাময়িক কোন সুযোগ যদি আমরা প্রতিনিয়ত নিতে থাকি, তাহলে পরিণতিতে প্রকৃতিও নেতিবাচক ফল প্রদান করে তার প্রতিশোধ নিবে। মানুষ ও প্রকৃতির এই রেসিপ্রকাল বা পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ামূলক সম্পর্ক অত্যন্ত স্বাভাবিক।
তাই এই প্রক্রিয়ায় যদি করোনার মত মানববিধংসী কোন ভাইরাস প্রকৃতিতে উৎপন্ন হয় তাহলে তার দায়ও নিশ্চয়ই মানুষের। আর অন্যদিকে মানুষ তার সাম্রাজ্যবাদী চিন্তা থেকে বা ব্যবসায়িক চিন্তা থেকে যদি কৃত্রিম অস্ত্র হিসেবে এটা তৈরি করে থাকে তাহলেতো তার ষোল আনা দায় মানুষেরই। যাইহোক, মানবসমাজের এমন কোন দুর্ভোগ, দুর্দশার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবেনা আর পেছনে কোন না কোন মানুষের নিকট কিংবা দূরবর্তী সম্পর্ক নেই। তাই এই কথা ধরে নেয়া বাঞ্ছনীয় যে, মানুষের কৃতকর্মের কারণেই দুর্ভোগ-দুর্দশা ছড়িয়ে পড়ে। করোনা ভাইরাসের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হবার সম্ভাবনা, মৃত্যুর সম্ভাবনা মানুষকে বিপদগ্রস্থ করছে। এটা যেন আজ স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু তার চেয়ে দুঃখজনক বাস্তবতা হচ্ছে এই ভাইরাসের আক্রমণে মানুষের চরিত্র, মানব সমাজের অভ্যন্তরীণ রসায়ন, জাতিগত শক্তি, সভ্যতার গতি-প্রকৃতি ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ের যে চিত্র আমাদের সামনে উদ্ভাসিত হচ্ছে তার অনেকটাই অতীব বেদনাদায়ক। চীনের উহান প্রদেশে করোনার আক্রমণ ২০১৯ সালের ডিসেম্বর নাগাদ দৃশ্যমানভাবে বিস্তার লাভ করেছে।
বিভিন্ন মিডিয়ার কল্যাণে সারা বিশ্বের মানুষ এই ভাইরাস সংক্রমণের কথা এমনকি এর দ্বারা সৃষ্ট কোভীড-১৯ রোগের কষ্টকর মৃত্যুর কথা ব্যাপকভাবে অবগত হয়ে আসছে শুরু থেকেই। কিন্তু এর পরেও দেখা গেল কোন কোন দেশ এসব নিয়ে তেমন কোন গুরুত্ব প্রদান করেনি। বরং এই ভাইরাস প্রতিরোধে কার্যকর আগাম ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি, অপেক্ষাকৃত সেইসব দেশের পরিস্থিতি অত্যন্ত অমঙ্গলজনক হয়েছে এবং হচ্ছে। আমাদের বাংলাদেশ তাদের মধ্যে একটি। সেই জানুয়ারি থেকে বিদেশ থেকে আগমনরত মানুষের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, এবং এক পর্যায়ে যথাযথভাবে তাদেরকে আলাদা রেখে চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারলে আজকে হয়ত সারাদেশ ‘লকডাউন’ করে রাখা লাগতো না। অবস্থাটা অনেকটা ‘জুতা আবিষ্কার’ এর কাহিনীর মতন। সারাদেশে চামড়া দিয়ে ঢেকে দেওয়ার চাইতে কেবল চরণ দু’টি চামড়া বা অন্যকিছু দিয়ে আবৃত করলেই সেই কার্যসিদ্ধি হয় এই নীতি মানা হয়নি।
আমরা যে মানিনা তেমন নয়, আমরা জেনে শুনে বিষ পান করতে পারি। আজকে কোটি কোটি টাকা সরকারিভাবে বরাদ্দ করা হচ্ছে করোনাকৃত দুর্যোগ সামাল দেওয়ার জন্য। কিন্তু প্রথম থেকেই বিদেশ থেকে আগত কিছু মানুষকে রাষ্ট্রীয় খরচে খুব ভালো মানের সেবা দিয়ে কিছুদিন আলাদা করে রাখলে হয়তো আজকের এই রোগ সামাজিক পর্যায়ে সংক্রমিত হতোনা। তখন যে অর্থ ব্যয় হতো তার চাইতে এখন কয়েকশতগুন অর্থ ব্যয় করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছেনা। আমাদের চিকিৎসকগণ প্রথম থেকেই এই রোগের ভয়াবহতা দিয়ে সরকারকে এমনকি জনসাধারণকে বিভিন্নভাবে অবহিত করেছেন। মিডিয়ার কল্যাণে যার অনেককিছুই আমাদের সকলের জানা। কিন্তু সরকার, সংশ্লিষ্ট জনগণ কেউ কি তাদের পর্যাপ্ত গুরুত্ব দিয়েছেন? কিছু মানুষ হয়তো বিচ্ছিন্নভাবে এর ভয়াবহতা বুঝতে পেরেছেন। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে তাদের কিইবা করার ছিলো। এমনকি, চিকিৎসকগণ পারসোনাল প্রোটেকশন এর জন্য যেসকল জরুরি চিকিৎসা-উপকরণ চেয়েছেন তাও পর্যাপ্তভাবে তাদের দেওয়া হচ্ছেনা। সামান্য মাক্স নিয়েও মশকরা করা হচ্ছে এন-৯৫ লেখা বাক্স থেকে বের হচ্ছে অন্যধরনের নিম্নমানের জিনিস যা পরিধান করে নিরাপদ হওয়া সম্ভব নয়। জনগণের স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দকৃত পাবলিক মানি সারাবছর কীভাবে অপব্যয় হয় তা এই করোনাকালীন ফাঁস হওয়া দু’একটি ঘটনা দ্বারাই যেকেউ অনুধাবন করতে পারবেন।
এবার আসি সাহায্য বা দানের প্রসঙ্গে। আমাদের সরকার জনগণকে ঘরে থাকার গুরুত্ব বোঝাতে অর্থ ব্যয় করেছে। কিন্তু এমন অনেক মানুষ এদেশে আছে যারা জীবিকার প্রয়োজনে হলেও ঘর থেকে বের হতে হয়। এইধরনের গরীব মানুষেদের জন্য সরকারি সাহায্যের নামে রাষ্ট্রীয় সম্পদের এক বিরাট অংশ, এবং এই সংকটকালীন সাহায্য হিসেবে এদেশের সম্পদশালী মানুষের অনেকেই যে ব্যাপক পরিমাণ দান করেছেন তা দিয়ে খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরকার বরাদ্দ করেছে। এই বরাদ্দকৃত সাহায্য সামগ্রির কত অংশ সত্যিকারে অভাবী মানুষ পাচ্ছে প্রতিনিয়ত বিশাল বিশাল ত্রাণ চুরির ঘটনা যা অন্তত প্রকাশ পাচ্ছে তা থেকে সহজেই সকলের বোধগম্য হচ্ছে। অনেকেই আজ মনে করেন যে, সরকার ত্রাণ বিতরণে দলীয় কিছু লোককে এড়িয়ে সৎ সরকারী কর্মকর্তা, বিশেষকরে পুলিশ, সেনাবাহিনী, ইত্যাদির সমন্বয়ে একটি যৌথ সংস্থার মাধ্যমে বন্টন করতো তাহলে হয়তো মানুষ যথাযথভাবে ত্রাণ সামগ্রী পেতো। মানুষ খেতে না পারলে রাস্তায় নামবেই, এমনকি অনেকরকম অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটতে পারে তাদের দ্বারা। কেউই ঘরে বসে না খেয়ে মরতে চাইবেনা। তাই মানুষ যদি স্বাস্থ্য বিধি মেনে যথাযথভাবে ঘরে থাকার নিয়ম নির্দেশ না মানতে পারে এবং ক্ষুধার তাড়নায় অনাকাক্সিক্ষত কাজে জড়িয়ে পড়ে তাহলে তা সামলানো হয়ে উঠবে আর এক কঠিন চ্যালেঞ্জ।
অন্যদিকে এদেশের জনগণের অনেকেই নানারকম অন্ধবিশ্বাস, মন্দবিশ্বাস, মনগড়া বিশ্বাস, অশুভ নির্দেশ দ্বারা পরিচালিত মত। তারা এসব অমঙ্গলজনক ভুল ধারণা ভেঙে দেওয়ার উদ্যোগ নিলে জনগণেরই এক বিরাট অংশ সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠবে। এক্ষেত্রে বরেণ্য বুদ্ধিজীবী, চিকিৎসক, শিক্ষক, মনোবিজ্ঞানী শিল্পী এবং বিশেষকরে ধর্মীয় স্কলার বা কর্তাব্যক্তিদের সাহায্য পেলে সরকারের জন্য সুবিধা হতো। কিন্তু সেই সাহায্য ঠিকমতো নেওয়া হচ্ছে বলে মনে হয় না।
যাইহোক বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যারা প্রথম থেকেই যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে, যাদের জনগণ নিয়ম মেনে চলার ব্যাপারে আন্তরিক তাদের দেশে করোনা মারাত্মক অবস্থা ধারণ করেনি। এমনকি অনেক দেশে কিছু কিছু নিষেধাজ্ঞাও উঠিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া রয়েছে। এতে করে একটি বিষয় পরিষ্কার হচ্ছে যে, মানুষ যদি সুস্থ মানসিকতার হয় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে এবং তা বাস্তবায়নের জন্য মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তাহলে যে কোন দুর্যোগের কার্যকর প্রতিরোধ প্রতিকার সহজতর হয়। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে আমাদের এই বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে।
ড. মো. শওকত হোসেন, সহযোগী অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, [email protected]
সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected] |