আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ৩-০৫-২০১৯ তারিখে পত্রিকা

জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া রেজিস্ট্রেশন বন্ধ করুন

অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং

| সম্পাদকীয়

যানজটের ঢাকা শহরে দ্রুত ও আয়াসে গন্তব্যে পৌঁছা সহজতর হওয়ায় অসম্ভব দ্রুততার সঙ্গে জনপ্রিয় হয় অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং। তবে সম্প্রতি এ রাইড শেয়ারিংই সমাজে ভীতি তৈরি করেছে। অল্পদিনের ব্যবধানে বেশকিছু মারাত্মক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ও নিয়মনীতি মানার ক্ষেত্রে রাইড শেয়ারিং চালকদের উদাসীনতাই এ পরিণতির কারণ। যাত্রীদের অভিযোগ, অ্যাপভিত্তিক মোটরসাইকেল চালকদের বেশিরভাগই অদক্ষ। অবস্থা এমন যে, অদক্ষ বাইকাররা রাইড শেয়ারিং করতে গিয়ে অন্যসব যানবাহনকে ফেলে দিচ্ছে বিপাকে। তাদের যেমন খুশি তেমন চলা তছনছ করে দিচ্ছে ট্রাফিক-শৃঙ্খলা। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্বহীনতা, ভুয়া আইডি ও ভুয়া ঠিকানার ছড়াছড়ি। এতে যাত্রীদের নিরাপত্তাও পড়েছে প্রশ্নের মুখে। মূলত সম্প্রতি কাভার্ডভ্যান চাপায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাহমিদা হক লাবণ্যের মৃত্যুর পর রাইড শেয়ারিংয়ের এত দিনের সব অনিয়ম সামনে এসেছে। লাবণ্যকে বহনকারী উবারে রেজিস্ট্রেশনের সময় মোটরসাইকেল চালক সুমন হোসেন ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করেছেন। তার জাতীয় পরিচয়পত্র ও বিকাশ অ্যাকাউন্টের ঠিকানাও ভুয়া। কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়া সুমনের ভুল ঠিকানায় রেজিস্ট্রেশন করেছে উবার কর্তৃপক্ষ, ফলে লাবণ্যের মৃত্যুর ঘটনায় সুমনকে খুঁজে পেতে বেগ পেতে হয়েছে। কীভাবে ভুয়া পরিচয়ধারীরা এমন একটি গুরুত্বপূূর্ণ কাজের দায়িত্ব পেল, তা খতিয়ে দেখা দরকার।
উল্লেখ্য, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ট্যাক্স টোকেন, রেজিস্ট্রেশন নম্বর ও ইন্সু্যুরেন্সের কাগজ ঠিক থাকলেই একজন মোটরসাইকেল চালকের অ্যাকাউন্ট ওপেন করা হয়। এক্ষেত্রে চালকের ড্রাইভিং স্কিল, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা, দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা, তিনি আরোহী বহনে সক্ষম কি না, এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হয় না। পাশাপাশি একজন বাইকচালক ঢাকা শহরে ট্রাফিক নিয়ম মেনে বাইক চালাতে সক্ষম কি না, তা-ও দেখা হয় না। এছাড়া নারীদের বাইকে তুলে উদ্দেশ্যমূলকভাবে হঠাৎ হঠাৎ বাইকে ব্রেক ধরেন কোনো কোনো অসাধু চালক। এগুলো মনিটরিং করে না রাইড ও শেয়ারিং কোম্পানিগুলো। ফলে রাইড শেয়ারিং চালুর পর থেকেই পিপীলিকার মতো মোটরবাইক বাড়তে থাকে ঢাকা মহানগরীতে। এসব অনিয়ম-দুর্বলতা দ্রুত ঠিক করা উচিত। কোম্পানিগুলোর নিজস্ব নিয়ন্ত্রণ, তদারকি ব্যবস্থার পাশাপাশি যাত্রীদের অভিযোগ আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় প্রতিকার প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। বাইকার ও গাড়িচালকদের অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও আচরণগত বিষয়গুলো সম্পর্কে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা জরুরি।
ঢাকার নাগরিক দুর্ভোগের প্রধান ক্ষেত্রই হচ্ছে গণপরিবহনের সংকট, বিশৃঙ্খলা, যানজট ও নিরাপত্তাহীনতা। এমন পরিস্থিতিতে অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং জনদুর্ভোগ হ্রাসের ক্ষেত্রে ইতিবাচক পথ দেখিয়েছিল। কিন্তু কার্যকর নীতিমালার দুর্বলতার কারণে রাইড শেয়ারিং ক্রমেই আপদে পরিণত হচ্ছে। এ অবস্থার অবসান জরুরি। তাই উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং নিরাপদ রাখতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কার্যকর ভূমিকা পালন করবেÑ এমনটাই প্রত্যাশা। হ