ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রাণীর জীবাশ্ম উদ্ধার করলেন বিজ্ঞানীরা। ইতালির সান গিউলিয়ানা লেকের পাশ থেকে বিশালাকার একটি নীল তিমির জীবাশ্মের সন্ধান পাওয়া গেছে। জীবাশ্মের কঙ্কাল পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বিজ্ঞানীদের অনুমানÑ এ প্রাণীটি দৈর্ঘ্যে ৮৫ ফুট ছিল। ওজন ১৩০ থেকে ১৫০ টন ছিল। অর্থাৎ ১ লাখ ১৭ হাজার কিলোগ্রাম থেকে ১ লাখ ৩৬ হাজার কিলোগ্রাম ওজন।
যেখানে একটি আফ্রিকান হাতির ওজন ৬ হাজার ৩৫০ কিলোগ্রামের মতো এবং এশিয়ান হাতির ওজন ৫ হাজার ৪০০ কিলোগ্রামের মতো। অর্থাৎ যে নীল তিমির জীবাশ্ম উদ্ধার হয়েছে, সেটি ২১টি আফ্রিকান হাতি এবং ২৫টি এশিয়ান হাতির সমান! আর দৈর্ঘ্য?ে তিনটি লরির সমান প্রায়। এখনও পর্যন্ত যতগুলো জীবাশ্মের সন্ধান মিলেছে, তার মধ্যে এটাই সবচেয়ে বড় বলে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন। এমনকি বর্তমানে যেসব নীল তিমি দেখা যায়, তারাও এর কাছে ‘শিশু’।
কয়েক বছর আগে ইতালির ওই লেকের ধারে চাষাবাদের জন্য মাটি খোঁড়ার সময় প্রথমে একটি বড় মেরুদ-ের হাড় চোখে পড়ে এক কৃষকের। তারপর ইতালির বিজ্ঞানী জিওভানি বিয়ানুসি তার দলের সদস্যদের নিয়ে ওই জায়গায় হাজির হন।
তিমিটি এতটাই বড় যে, তার সম্পূর্ণ কঙ্কাল খুঁড়ে বের করতে প্রতœতত্ত্ববিদদের ২ বছর সময় লেগে গেছে। পাশের লেকের জলের লেভেলও কমিয়ে আনতে হয়েছিল বিজ্ঞানীদের। তা না হলে তিমির কঙ্কাল খুঁড়ে বের করা সম্ভব হতো না।
বিশালাকার এ নীল তিমির হাড় পরীক্ষা করে জানা গেছে, এটা প্রায় ১০ লাখ ৫০ হাজার বছরের পুরোনো। আর এখানেই বিজ্ঞানীদের মনে বিস্ময় জেগেছে। এত বছর আগেও সমুদ্রে এ রকম একটি বিশালাকার প্রাণী ঘুরে বেড়াত!
বিজ্ঞানীরা জানান, এর অর্থ ১০ লাখ ৫০ হাজার বছরের আরও অনেক আগে নীল তিমির আবির্ভাব হয়েছিল। কারণ, হিসেবে তারা বলেনÑ কোনো প্রাণীর আকার রাতারাতি এতটা বিশাল হওয়া সম্ভব নয়।
কীভাবে নীল তিমির জীবাশ্ম এলো এ জায়গায়? বিজ্ঞানীরা জানান, ‘আইস এজ’ এর কারণ হতে পারে। আজ থেকে প্রায় ২০ লাখ ৬০ হাজার বছর পিছিয়ে গেলে এই আইস এজের শুরু। চলেছে আজ থেকে ১১ হাজার ৭০০ বছর আগে পর্যন্ত।
এ সময় বেশির ভাগ জলরাশি বরফে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। ফলে সমুদ্রের পানির স্তর কমে যায়। ওই সময় যে তিমিগুলো মারা গিয়েছিল; বিজ্ঞানীদের অনুমান, তারই একটার জীবাশ্ম উদ্ধার হলো ইতালির লেকের পাশে মাটির তলা থেকে। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা