মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার বালুর চর এলাকায় পুদিনা পাতা চাষে হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে। ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডে কয়েক যুগ থেকে পুদিনা পাতা চাষ করে আসছে এখানকার কৃষকরা। রমজান ও আসন্ন ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে তারা এ পুদিনা পাতা চাষ করেন। পুদিনা পাতার পরিচর্যায় এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে এ অঞ্চলের কৃষকরা। পুদিনা পাতা চাষে সহজ ও খরচ কম এবং ভালো দাম পাওয়ায় হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে।
সিরাজদিখান বালুর চর ইউনিয়ন ছাড়া উপজেলার অন্য কোথাও পুদিনা পাতার চাষ হয় না বলেই জানান সিরাজদিখান কৃষি বিভাগ। ঢাকা মাওয়া মহাসড়কের নিকটবর্তী হওয়ায় এই এলাকায় চাষ করা পুদিনা পাতার ব্যাপক চাহিদা। অনেকে পুদিনা চাষ করেই স্বাবলম্বী হচ্ছেন। জানা গেছে, পুদিনার পাতা তরকারির সঙ্গে সুগন্ধি হিসাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। খাদ্যকে রুচিসম্মত করতে পুদিনা পাতার কোনো জুড়ি নেই।
সরেজমিনে দেখা যায়, বালুর চর ইউনিয়নের চান্দের চর খাসকান্দি মদিনা পাড়ায় বিশাল এলাকাজুড়ে চাষ হয়েছে পুদিনা পাতা। পুদিনা পরিচর্যা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। উদ্দেশ্য রমজানে ভালোমানের পুদিনা বাজারজাত করা। দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে কৃষকরা। তবে সরকারিভাবে কৃষকদের বিভিন্নভাবে উৎসাহ দিলে ভবিষ্যতে আরও বেশি পরিমাণ জমিতে পুদিনা পাতা চাষ করা যাবে বলে জানান মদিনা পাড়ার পুরাতন কৃষক আবুল দেওয়ান।
চান্দের চরের কৃষক মো. আমির হোসেন জানান, তারা ৪০-৫০ বছর ধরে এই চাষে জড়িত। তাদের অঞ্চলে এই চাষ আগে অনেকেই করতো, এখন তারাও করেন। চলতি মৌসুমে প্রায় ১০০ শতক জায়গায় পুদিনা পাতার চাষ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় রমজানকে ঘিরে পুদিনা পাতার বাজারজাত করা যাচ্ছে। এর চাষ বছরজুড়ে করা যায়, তবে রজমানের সময় এর চাহিদা কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
ওই এলাকায় কথা হয় আরও বেশ কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে, তাদের মধ্যে মো. সুন্দর আলী নামের এক কৃষক জানান, তিনি প্রায় ৫০ শতক জমিতে পুদিনা পাতার চাষ করেছেন। চাষও ভালো হয়েছে, আবহাওয়া অনুকূলে এথাকায় ভালো লাভ হচ্ছে সবারই। আর যেহেতু রমজান মাস চলমান, তাই লাভবান হওয়ার সব থেকে ভালো সময় এইটা। কারণ রমজান মাসে পুদিনা পাতার চাহিদা ব্যাপকহারে বেড়ে যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশের শহরগুলোতে চাইনিজ রেষ্টুরেন্ট, পাঁচতারা হোটেলে ও বিয়ে বাড়িতে পুদিনার ব্যবহার আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে রমজান মাসে বড়া, চাটনি, সালাত, বোরহানি বানানোর কাজে ব্যাপক হারে পুদিনাপাতা ব্যবহার হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রীতে পুদিনার ব্যবহার রয়েছে। তাই পুদিনা চাষও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর পুদিনা পাতার সবচেয়ে বেশি চাহিদা হলো বিয়ে বাড়িতে বোরহানি বানানোর কাজে।
এ বিষয়ে সিরাজদিখান উপজেলা উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান জানান, পুদিনা পাতার চাষ বাণিজ্যিকভাবে শুধু বালুর চর ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকাতেই হয়, জেলায় অন্য কোথাও আর হয় না। আর বাকিরা যা চাষ করে, তাও বাড়ির ছাদে ব্যালকনিতে টবে। তার মতে অত্র অঞ্চলে প্রায় ৫-৬ হেক্টরের মতো জমিতে পুদিনাপাতার চাষ হয়।