এটা দুঃখজনক ব্যাপার যে, রাজধানীতে বিশুদ্ধ পানির সংকট অব্যাহতভাবে চলছে। এ সমস্যা সমাধানে কর্তৃপক্ষীয় কোনো আশ্বাসই বাস্তবে প্রতিফলিত হচ্ছে না। বরং পরিস্থিতি ক্রমেই আরও শোচনীয় অবস্থায় পর্যবসিত হচ্ছে। এ বিষয়ে আলোকিত বাংলাদেশে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানীর কোনো কোনো এলাকায় ওয়াসার পানি ব্যবহারের অনুপযোগী, আবার কোথাও কোথাও একেবারে বন্ধ রয়েছে পানি সরবরাহ। এ অবস্থা এলাকাভেদে ১৫ দিন থেকে এক মাস পর্যন্ত চলছে। পানি মানুষের জীবনধারণের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীরূপে যুক্ত, সেখানে প্রয়োজনীয় পানির অভাব জীবনকে করে তোলে দুর্বিষহ। বাস্তবে ঢাকা শহরের বেশ কিছু এলাকায় পানির অভাবে মানুষ রীতিমতো মানবেতর জীবনযাপন করছে।
লক্ষণীয়, প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও নগরীর জুরাইন, শনির আখড়াসহ বিভিন্ন এলাকার পানি সংকটের সমাধান হচ্ছে না। বাসায় ওয়াসার লাইন থাকলেও নেই পানি সরবরাহ। তাই কনটেইনারের কেনা পানি দিয়েই থালাবাসন ধোয়ার কাজ করছেন অনেক গৃহিণী। আগে দুর্গন্ধযুক্ত পানি এলেও এক মাস ধরে একেবারেই পানি না আসায় তীব্র সংকটে দিন কাটাতে হচ্ছে রাজধানীর পূর্ব জুরাইনবাসীর। রাজধানীর বাসাবোসহ কয়েকটি এলাকায় ওয়াসার বসানো ওয়াটার এটিএম বুথ থেকে টাকার বিনিময়ে খাবার পানি সংগ্রহের ব্যবস্থা থাকলেও ওয়াসার লাইনে পানি সরবরাহ না থাকায় সংকট থেকেই যাচ্ছে বলে প্রকাশ। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত ২৩নং ওয়ার্ডের পূর্ব হাজীপাড়া এলাকায়ও ১৫ দিন ধরে পানি নেই। এলাকাবাসী বলছেন, কোনো কোনো এলাকায় এ পানি সংকটের বয়সকাল এক মাস। এরকম পরিস্থিতি আরও অনেক জায়গাতেই রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, সমস্যার কথা জানানো হলেও ওয়াসা ইতিবাচক ব্যবস্থা নিতে অনেক ক্ষেত্রেই সক্ষম হচ্ছে না। অবস্থা এমন অসহনীয় হয়ে পড়েছে যে, নিরাপদ পানির দাবিতে শুক্রবার রাজধানীর পূর্ব জুরাইনে ওয়াসার পানি আন্দোলনের ব্যানারে এলাকাবাসী বিক্ষোভ করেন। এভাবে ক্ষুব্ধ মানুষের বিক্ষোভ যদি ছড়িয়ে পড়ে সেটা কারও জন্যই সুখকর হবে না।
বাংলাদেশে পানির অভাব নেই। কিন্তু এখানের পানিসম্পদের মান ভালো রাখার ব্যবস্থাসহ সঠিকভাবে সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। শহরাঞ্চলে গৃহস্থালি, কলকারখানা ও অফিস-আদালতে সুপেয় পানির সর্বাধিক প্রচলিত উৎস হলো পাইপলাইনে সরবরাহকৃত পানি। গত বছর বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শহরাঞ্চলের ট্যাপের পানিতে ই-কলি (কলেরার জীবাণু) ব্যাকটেরিয়ার দূষণের মাত্রা প্রায় ৮২ শতাংশ। এদিকে রাজধানীসহ সারা দেশে কথিত মিনারেল ওয়াটারের নামে যেসব বোতলজাত পানি বিক্রি হচ্ছে, দু-একটি বাদে তার অধিকাংশই মানসম্মত নয়। এ অবস্থায় নিরাপদ পানি প্রাপ্যতা কীভাবে সম্ভব? বিষয়টি জনস্বাস্থ্য এবং জীবনধারণের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত বলে দ্রুত সমাধান জরুরি। নিরাপদ পানি নিশ্চিতে ওয়াসাকে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে। সরকারের প্রয়োজন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা নেওয়া।