আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ২০-০৫-২০১৯ তারিখে পত্রিকা

ভৈরবে দেশীয় পাদুকা শিল্পে দুর্দিন

চোরাইপথে আসা ভিনদেশি জুতায় বাজার সয়লাব

মো. আল আমিন টিটু, ভৈরব
| দেশ

ঈদ সামনে রেখে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে পাদুকা তৈরিতে ব্যস্ত কারিগররা- আলোকিত বাংলাদেশ

দেশের প্রখ্যাত বন্দরনগরী কিশোরগঞ্জের ভৈরব। ভৈরব একটি উপজেলাও বটে। এ উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামের নবী হোসেন ৯ বছর আগে মাত্র তিন কারিগর নিয়ে গড়ে তোলেন ‘মারিয়া সুজ’ নামের একটি পাদুকা কারখানা। গুণগত মানসম্পন্ন নান্দনিক পাদুকা তৈরির ফলে বাজারে ‘মারিয়া সুজ’ ব্যাপক চাহিদা পায়। আস্তে আস্তে কারখানাটির আকার বড় করা হয়। বর্তমানে শহরের শুম্ভুপুরের বাহার মার্কেটে নবী হোসেনের কারখানায় ৩০ জনের বেশি কারিগর কাজ করেন। একসময় নবী হোসেনও কাজ করতেন। এখন তিনি কারখানার হিসাব-নিকাশ আর দূরের পাদুকা ব্যবসায়ীদের চাহিদা মেটাতে ব্যস্ত সময় পার করেন। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে, নবী হোসেনের ব্যস্ততা ততই বাড়ছে। তার মতো সেলিম মিয়া, আলকাছ মিয়া ও শামীম আহমেদ এখন সফল পাদুকা কারখানার মালিক। তাদের দেখে এ শহরে গড়ে ওঠে অনন্য দেশীয় হস্তশিল্পর পাদুকা কারখানা। এসব পাদুকা তৈরির কাঁচামাল জোগান দিতে ভৈরবে গড়ে উঠেছে শতাধিক দোকান এবং জুতার বাক্সের চাহিদা মেটাতে গড়ে উঠেছে ২০টির বেশি কাগজের বক্স কারখানা। জানা গেছে, ১৯৯৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত ভৈরবের কমলপুর, শুম্ভুপুর, শিবপুর, গজারিয়া, কালিকাপ্রসাদে ১০ হাজারের অধিক কারখানায় অন্তত ৬০ হাজার পাদুকা কারিগর কাজ করছেন। এসব কারখানায় সারা বছর তেমন কাজ না থাকলেও বছরের ঈদুল ফিতর সামনে রেখে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তারা। পাদুকা কারিগর তোফাজ্জল হোসেন জানান, জুতার ফিটিং, সেলাই ও রং করার জন্য আলাদা আলাদা কারিগর রয়েছে। এসব কাজ করে একজন কারিগর দৈনিক ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারেন। ঈদ মৌসুমের তিন মাসে প্রত্যেকে ৫০ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকার কাজ করতে পারেন। নিপুণ হাতে তৈরি এসব পাদুকা বিক্রি করতে শহরে ছয়টি পাইকারি মার্কেট গড়ে উঠেছে। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে ও পরিবহন খরচ কম হওয়ায় দেশের অধিকাংশ জেলা থেকে পাইকাররা পাদুকা নিতে এখানে ভিড় করেন। ফলে রাজধানী ঢাকার পরই ভৈরবে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পাদুকার বাজার গড়ে উঠেছে। এখানকার পানামা ও সৈনিক সুজসহ বেশ কয়েকটি কারখানা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও পাদুকা রপ্তানি করছে। পাদুকা কারখানার মালিক, কারিগর ও ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, দেশীয় পাদুকা শিল্প দেশের অর্থনীতিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করলেও চীন ও ভারতীয় পাদুকায় বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। এর আগ্রাসনে বাজারে দেশীয় পাদুকার চাহিদা ক্রমেই কমছে। ফলে ভৈরবে এ শিল্পের দুর্দিন যাচ্ছে।  ভৈরব পাদুকা কারখানা মালিক সমিতির সহ-সভাপতি শের মো. সোহরাব আলী বলেন, দেশীয় পাদুকা শিল্পের সঙ্গে নানাভাবে ভৈরবের লক্ষাধিক লোক জড়িত রয়েছেন। বাজারে এখানকার পাদুকার চাহিদাও রয়েছে। কিন্তু বাজারে চোরাইপথে আসা ভিনদেশি পাদুকার আগ্রাসনের শিকার এ শিল্প। ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত সাদমীন বলেন, যদি কোনো অনিয়মের কারণে এ শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে এবং ব্যবসায়ীরা লিখিত অভিযোগ দেন, তাহলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।