মাথাব্যথা আমাদের সমাজের অন্যতম একটি অসুস্থতা। শতকরা ১৮ ভাগ লোক মাথাব্যথায় ভোগে থাকেন। অনেক সময় বলা হয়, মাথা যার আছে ব্যথা তার হবে। কিন্তু এ ব্যথা থেকে আমরা সবাই সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে মুক্ত হতে চাই। আর সে জন্যই আজকের এ ছোট্ট লেখা। সুপ্রিয় পাঠক, আজ আবারও আমি লিখতে বসেছি কীভাবে আপনি আপনার মাথাব্যথা থেকে মুক্তি পাবেন।
মিস নিশাত, বয়স ২১ বছর। থাকেন ঢাকা শহরের মান্ডাতে। ৩ বছর ধরে মাথাব্যথায় ভুগছেন। মাথার উপরিভাগে ব্যথা হয়। মাথা হালকা হালকা মনে হয় আবার ভারি ভারিও মনে হয়, বমি বমি লাগে, চোখে ব্যথা হয়। মাংসপেশি দুর্বল। ঘাড়ের বাম দিকের মাংসপেশিতে চাপ দিলে ব্যথা পায়। বাম দিকে সালাম ফিরালে মাথা সম্পূর্ণ ঘুরাতে পারে না। মাথার পেছন দিকে সুপিরিওর এবং ইনপিরিওর অক্সিপিটো-নিউকিয়াল লাইনের মাঝে চাপ দিলে ব্যথা পায়। অর্থাৎ মাথার পেছন দিকে যে হালকা উঁচু অংশ আছে, সেখানে চাপ দিলে ব্যথা হয়। মাথাব্যথা এমন একটি রোগ, যা কোনো কোনো রোগের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। মিস নিশাত অনেক পরীক্ষা ও চিকিৎসা করেছেন, কিন্তু ব্যথার যন্ত্রণা এখনও বয়ে বেড়াচ্ছেন। মাথার এক্স-রে, সিটিস্ক্যান ও এমআরআই করেছেন এবং রিপোর্টে বলা হয়েছে, কোনো অসুবিধা নেই। অসুবিধা না থাকারই কথা। কারণ অসুস্থতা থাকে ঘাড়ে, কষ্ট পায় মাথায়।
মাথাব্যথার কারণ অনেক। আমরা যেসব মাথাব্যথায় ভুগে থাকি তার মধ্যে সার্ভিকো জেনিক হেডেক, ইনফ্লামেশন হেডেক, ট্রাকশন হেডেক, ভাস্কুলার হেডেক এবং টেনশন হেডেক। সাধরণত মাথাব্যথায় ভোগেন ১৮ শতাংশ লোক। এ ১৮ শতাংশের মধ্যে ১৪ শতাংশ সার্ভিকো জেনিক হেডেকে ভোগেন। আমি যে মাথাব্যথার চিকিৎসা করি এবং যে মাথাব্যথার সম্পর্কে এখানে লিখছি, সে মাথাব্যথার নাম সার্ভিকো জেনিক হেডেক। অর্থাৎ ব্যথা হয় মাথায় কিন্তু ব্যথার উৎপত্তি ঘাড় থেকে। ঘাড়ের উপরিভাগে অর্থাৎ সি ১-২-৩ লেভেলে কষ্ট থাকে কিন্তু আমরা কষ্ট পাই মাথায়। ঘাড়ের এ অংশে যেসব স্ট্রাকচারে কষ্ট হলে মাথাব্যথা হয় তা হলো মাসেল, লিগামেন্ট, জয়েন্ট, ডুরামেটার, ডিস্ক এবং ভার্টিব্রাল আর্টারি। এছাড়াও অন্যান্য কারণেও মাথাব্যথা হতে পারে। সার্ভিকো জেনিক হেডেক যে কোনো বয়সে হতে পারে, তবে সাধারণত ২০ থেকে ৬০ বছরের লোক এ মাথাব্যথায় বেশি ভোগেন।
মিস নিশাতের জন্য ফিজিওথেরপি চিকিৎসার অন্যতম মোডালিটি লো-লেভেল লেজার থেরাপিসহ প্রয়োজনীয় মোডালিটিস ব্যবহার করতে হবে। ঘাড়ের সফট টিস্যু মবিলাইজেশন মাথাব্যথা কমাতে খুবই সাহায্য করে। তারপর তার মাসেল কন্ট্রোল ও মাসেলের এন্ডিওরেন্স এক্সারসাইজ করতে হবে। ঘাড়ের রিপিটেড রিট্রাকশন করতে হবে। এছাড়াও স্ট্রেসিং, স্ট্রেন্দেনিং ও ফ্লেক্সিবিলিটি বাড়াতে হবে। অবশ্যই মনে রাখতে হবে, ঘাড়ের সব মুভমেন্টগুলো যেন সঠিক হয়। সর্বোপরি মিস নিশাতের পোশ্চার কারেকশন করতে হবে। মিস নিশাতকে ওই চিকিৎসা করালে তার মাথাব্যথা চলে যাবে।
প্রফেসর আলতাফ হোসেন সরকার
ব্যাকপেইন বিশেষজ্ঞ
লেজার ফিজিওথেরাপি সেন্টার