বাংলাদেশের বিশ্বকাপ রেকর্ড
১৯৯৯ : গ্রুপ পর্ব
২০০৩ : গ্রুপ পর্ব
২০০৭ : সুপার এইট
২০১১ : গ্রুপ পর্ব
২০১৫ : কোয়ার্টার ফাইনাল
স্বপ্ন দেখব বড়, কেন নাÑইংল্যান্ডের বিমানে ওঠার সময় বলেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা; কী স্বপ্ন? বুঝে নিতে সমস্যা হওয়ার কথা না, চূড়া ছোঁয়ার দুঃসাহস নিয়ে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ! কাজটা কঠিন, আছে সীমাবদ্ধতা, পথ বন্ধুর; তবু বিশ্বজয়ের স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। তবে স্বপ্নের আগে লক্ষ্য- অন্তত সেরা চারে থাকা। সহজ নয় সেটিও। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ টুর্নামেন্টের পদ্ধতি।
২০১৫ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছে বাংলাদেশ, আরও বিস্ময় উপহার দিয়ে শেষ চার খেলেছে ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে। তবে ফরম্যাট ছিল তুলনামূলক সহজ, গ্রুপ পর্বে একটি-দুটি জয়, অন্য ম্যাচের ফল পক্ষে আসা মিলিয়ে ধরা দিয়েছে অভাবনীয় সাফল্য। কিন্তু এবার ১০ দল খেলবে পরস্পরের সঙ্গে। ভিন্ন উইকেটে, ভিন্ন শক্তি ও সামর্থ্যরে প্রতিপক্ষ সামলানো, দীর্ঘ সময় একাগ্রতা ধরে রাখা, নানা পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া, প্রতি ধাপেই কঠিন চ্যালেঞ্জ।
বাংলাদেশের বড় শক্তি তারুণ্য ও অভিজ্ঞতা। গড় বয়স হিসেবে এবার বিশ্বকাপের অন্যতম তরুণ দল বাংলাদেশ, আবার ম্যাচ খেলার বিবেচনায় সবচেয়ে অভিজ্ঞ দলগুলোর একটি; এক দলে দুটির সমন্বয় যথেষ্ট বিরল। তারপরও সম্ভব হয়েছে, কারণ দলের মূল ক্রিকেটাররা ১৮-১৯ বছর বয়স থেকে একসঙ্গে খেলছেন। অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হয়ে দলকে পরের স্তরে নিয়ে যেতে পেরেছেন, চেষ্টা করছেন আরও ওপরে তুলতে। চারজনের এটি চতুর্থ বিশ্বকাপ, আরও দুইজনের তৃতীয়।
মাশরাফির নেতৃত্বে গেল বিশ্বকাপে শেষ আটে খেলেছিল বাংলাদেশ। এরপর থেকে ধরা দিয়েছে আরও অভাবনীয় সব সাফল্য। প্রথম অধিনায়ক হিসেবে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিতে যাচ্ছেন তিনি একাধিক বিশ্বকাপ। নেতৃত্বের মতো তার বোলিংও দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, এখনও দলের সবচেয়ে ধারাবাহিক বোলার। নিজের শেষ বিশ্বকাপ রাঙাতে নিশ্চয়ই কমতি রাখবেন না।
তাড়না থাকবে অন্যদেরও। সাকিব আল হাসানের বিশ্বকাপ রেকর্ড খুব খারাপ না, তবে ম্যাচ জেতানো নৈপুণ্যে নিজের ছাপ সেভাবে রাখতে পারেননি এখনও। ওজন কমিয়ে, নিবিড়ভাবে অনুশীলন করে ওয়ার্ল্ড নাম্বার ওয়ান অলরাউন্ডার বুঝিয়ে দিয়েছেন, বিশ্বকাপে করতে চান বড় কিছু। তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদ উল্লাহকে নিয়েও বলা যায় একই কথা। গেল বিশ্বকাপের পর থেকে ওয়ানডেতে বিশ্ব ক্রিকেটে সবচেয়ে সফল ও ধারাবাহিক ব্যাটসম্যানদের একজন তামিম, নিজের ব্যাটিংকে নিয়ে গেছেন নতুন উচ্চতায়। গেল বিশ্বকাপে বাংলাদেশের তিনটি জয়ে অসাধারণ ইনিংস খেলেছিলেন মুশফিক; সে ধারা ধরে রেখেছেন পরেও। দলের প্রয়োজনে বরাবর চওড়া তার ব্যাট। বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইনিংসগুলোর বেশ কয়টিই এসেছে তার ব্যাট থেকে। মাহমুদউল্লাহ গেল বিশ্বকাপে ইতিহাস গড়েছিলেন দুটি সেঞ্চুরি করে। বিশ্বকাপের পর অবশ্য চার নম্বর জায়গা ধরে রাখতে পারেননি, নতুন ভূমিকায়ও মানিয়ে নিয়েছেন দারুণ। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে হালের সেরা ফিনিশারদের একজন তিনি।
পাঁচ সিনিয়র ক্রিকেটার বড় কিছুর প্রস্তুতি নিয়েছেন দারুণভাবে। তারাই বিশ্বকাপে দলের স্বপ্নসারথী। সিনিয়রদের সঙ্গে মুস্তাফিজুর রহমান ও সৌম্য সরকার নিজের দিনে গড়ে দিতে পারেন পার্থক্য। মেহেদী হাসান মিরাজের ওপর নির্ভর করা যায় নিশ্চিন্তে। কোনো এক স্পেলেই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন রুবেল হোসেন। সাইফউদ্দিন উন্নতির প্রমাণ দিচ্ছেন প্রতিনিয়ত; সঙ্গে অন্যরাও নিজেদের কাজ ঠিকঠাক করতে পারেন, লক্ষ্য পূরণ বা স্বপ্ন ছোঁয়া, অসম্ভব নয় বাংলাদেশের জন্য।