ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ট্রেনের আগাম টিকিট পেতে তৃতীয় দিনের মতো শুক্রবার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ঘরমুখো মানুষের দীর্ঘ লাইন ষ পিবিএ
ঈদ উপলক্ষে রেলের অগ্রিম টিকিট পেতে নাগরিকদের ভোগান্তির শেষ নেই। অ্যাপে টিকিট না পেয়ে স্টেশনে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে অনেকে খালি হাতে ফিরেছেন। যারা টিকিট পেয়েছেন তাদের বৃহস্পতিবার রাত থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে।
ঈদ উপলক্ষে রাজধানীর বিমানবন্দর রেলস্টেশনে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীর আগামী ২ জুনের টিকিট বিক্রি হয়। শুক্রবার বিমানবন্দর থেকে টিকিট কিনতে বৃহস্পতিবার রাতে সেহরি খেয়ে অনেকে স্টেশনে এসে দাঁড়িয়েছেন। সকাল ৯টা থেকে শুরু হয় টিকিট বিক্রি। টিকিট কিনতে আসা একাংশের অভিযোগ, বাংলাদেশ রেলওয়ের চালু করা অ্যাপের মাধ্যমে টিকিট কেনা যাচ্ছে না। তাই তাদের টিকিট কিনতে আগের রাতে এসে লাইনে দাঁড়াতে হয়েছে। কিন্তু লাইনে দাঁড়িয়েও ভোগান্তিতে পড়ছেন তারা। টিকিট বিক্রি কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, টিকিট ক্রেতাদের কেউ কেউ রাতে পত্রিকা বিছিয়ে মেঝেতেই ঝিমুচ্ছেন। কেউ ভোর রাত থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে ক্লান্ত হয়ে হুটহাট লাইনের পাশেই মেঝেতে বসে যাচ্ছেন।
ভোর পৌনে ৫টায় ধানমন্ডি ১৫ নম্বর থেকে টিকিটের জন্য বিমানবন্দর আসেন মঈনউদ্দিন মো. তারেক। তিনি লাইনে দাঁড়িয়েও অ্যাপের মাধ্যমে টিকিট কেনার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু সেই চেষ্টা করেও তার ভাগ্যে অ্যাপের মাধ্যমে টিকিট জোটেনি। তারেক বলেন, রেলসেবা অ্যাপে ৫০ ভাগ টিকিট রয়েছে। অথচ এটি ডাউন। টিকিট কেনা যাচ্ছে না। তাই টিকিট কাটতে ধানমন্ডি থেকে বিমানবন্দর স্টেশনে এসেছি। লাইনেও আছি, দেরি হচ্ছে দেখে অ্যাপের মাধ্যমেও চেষ্টা করছি। কিন্তু কাজ হচ্ছে না।
একই স্থানে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকায় ভুক্তভোগির অভিযোগ, ৭ নম্বর কাউন্টারের সামনে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে একই স্থানে দাঁড়িয়ে আছি। তাহলে টিকিটটা পাচ্ছে কে? অ্যাপে টিকিট বিক্রির প্রথম দিনই বলা হলো ৭০ শতাংশ টিকিট বিক্রি শেষ হয়ে গেছে। অথচ অ্যাপ কাজ করছে না! কাজ না করলে অ্যাপে ৭০ শতাংশ টিকিট বিক্রি হলো কীভাবে?
তবে অ্যাপের মাধ্যমে টিকিট মিলেছে বলে জানান মো. জহিরুল ইসলাম জনি নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, সেহরির পর থেকে আমার বড় ভাই অ্যাপের মাধ্যমে টিকিট কাটার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু সাবমিট নিচ্ছিল না। তখনই আমি টিকিটের জন্য বিমানবন্দর স্টেশনের উদ্দেশে রওনা দিই। ভোর সাড়ে ৫টার দিকে স্টেশনে এসে টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়াই। সকাল ৯টার সময় টিকিট বিক্রি শুরু হয়। কিন্তু ৯টা ১৫ মিনিটে বড় ভাই ফোন করে জানান, অনলাইনে টিকিট পেয়েছেন তিনি। তাই এখন আমি বাসায় ফিরে যাচ্ছি। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সালাউদ্দিন বলেন, ওয়েবসাইট থেকে টিকিট কাটার চেষ্টা করছি। সিকিউরিটি কোড পর্যন্ত যেতে গেলে ‘কনফার্ম ফরম রিসাবমিশন’ দেখায়। আর কাজ করে না।
বিমানবন্দর স্টেশনের কর্তব্যরত স্টেশন মাস্টার মাহমুদুল হাসান বলেন, আজকে যাত্রীদের যে ভিড় দেখা যাচ্ছে, সেটা স্বাভাবিক ভিড়ের মতোই।
যাত্রীরা অ্যাপের মাধ্যমে টিকিট কাটতে পারছে না, এ বিষয়ে তিনি বলেন, অ্যাপের হিসাব আমাদের কাছে না। আমাদের জন্য যে টিকিট বরাদ্দ আছে, সব যাত্রীদের দেওয়া হচ্ছে।
ধীরগতিতে টিকিট বিক্রি হচ্ছে- এমন অভিযোগের বিষয়ে কর্তব্যরত স্টেশন মাস্টার বলেন, টিকিট বিক্রির সময় যাত্রীদের রেজিস্ট্রেশন করানো হচ্ছে। যাদের রেজিস্ট্রেশন করা আছে, তাদের রেজিস্ট্রেশন করতে হচ্ছে না। রেজিস্ট্রেশন করার সময় মোবাইল নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বরসহ যাত্রীর বেশকিছু তথ্য লাগছে। এসব কারণে সময় একটু বেশি লাগছে। এদিকে অনলাইনে টিকিট বিক্রি পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান সিএনএসের পক্ষ থেকে দেওয়া হিসাবে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত অনলাইনে টিকিট বিক্রি হয়েছে ৭ হাজার ২০১টি। এর আগে প্রথম দিনের অনলাইনে টিকিট বিক্রির হিসাবে সিএনএস দাবি করে, মোট টিকিট বিক্রি হয়েছিল ৭ হাজার ৮১০টি, সেদিনও ঢাকাসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন কাউন্টারে অনলাইন নিষ্ক্রিয় থাকার অভিযোগ করেছিলেন যাত্রীরা।
অন্যদিকে সিএনএস এবং রেল কর্তৃপক্ষের ৩১ মে’র টিকিট বরাদ্দের হিসাবে গরমিল পাওয়া গেছে। দুই পক্ষের দেওয়া হিসাবে বরাদ্দকৃত টিকিটের ব্যবধান প্রায় পাঁচ হাজার। বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে সিএনএস জানায়, ৩১ মে’র জন্য অনলাইন ও কাউন্টার মিলিয়ে বরাদ্দকৃত ৩১ হাজার ৪২০টি টিকিটের মধ্যে বিক্রি হয়েছে ১৭ হাজার ৯৯৩টি। বাকি ১৩ হাজার ৪২৭ টিকিট অবিক্রীত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অ্যাপে বিপুল গ্রাহক লগইন করেন। তাই অ্যাপ ঠিকভাবে কাজ করতে সার্ভারের সক্ষমতা আরও বাড়ানো প্রয়োজন। শুক্রবার বাংলাদেশ রেলওয়ের স্টেশন ব্যবস্থাপক আমিনুল হক গণমাধ্যমকে বলেছেন, প্রতিদিন ঢাকায় পাঁচটি স্থানের কাউন্টারে টিকিট বরাদ্দ থাকে ২৬ হাজার ৩৪১টি। দুই পক্ষের হিসাবের এ ভিন্নতা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আমিনুল হক বলেন, সিএনএস যে সংখ্যার কথা বলেছে, তা তারাই ভালো বলতে পারবে। সিএনএসের নির্বাহী পরিচালক জিয়াউল আহসান বলেন, তাদের বিক্রীত টিকিটের পরিপূর্ণ হিসাব শনিবার গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরা হবে।
সার্ভারের সক্ষমতা নিয়ে বৃহস্পতিবার প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলেছেন। এ প্রসঙ্গে সিএনএসের ব্যবস্থাপক (অপারেশন) শামীম উল হক বলেছেন, কাউন্টারে যে সার্ভার ব্যবহার করে টিকিট বিক্রি করা হয়, একই সার্ভার ব্যবহৃত হয় অনলাইনে। কাউন্টারে যেহেতু সমস্যা হচ্ছে না, সুতরাং অনলাইনেও সার্ভার কোনো সমস্যার কারণ নয়।