কুমিল্লা প্রতিনিধি : ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা দ্বিতীয় এবং দাউদকান্দিতে মেঘনা-গোমতী দ্বিতীয় সেতু আজ (শনিবার) উদ্বোধন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দ্বিতীয় মেঘনা এবং দ্বিতীয় মেঘনা-গোমতী সেতু উদ্বোধন করবেন বলে সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্র জানায়। কিছু দিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কাঁচপুর ২য় সেতু উদ্বোধন করেন। দ্বিতীয় মেঘনা এবং দ্বিতীয় মেঘনা-গোমতী সেতুর প্রকল্প পরিচালক আবু সালেহ মোহাম্মদ নুরুজ্জামান জানান, আজ প্রধানমন্ত্রী সেতু দুটি উদ্বোধন করবেন। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে শুরু হয় সেতুগুলোর নির্মাণ কাজ। কাজ নির্দিষ্ট সময়ের আগেই শেষ হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের প্রায় সাত মাস আগে দ্বিতীয় কাঁচপুরসহ এই নতুন দুটি সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ায় প্রায় ৭০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, দ্বিতীয় মেঘনা সেতুর দৈর্ঘ্য হচ্ছে ৯৫০ মিটার বা প্রায় এক কিলোমিটার। এই সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। ১২টি স্প্যানের ওপর নির্মিত সেতুটি চার লেনের এবং এর প্রস্থ ১৭ দশমিক ৭৫ মিটার। দ্বিতীয় মেঘনা-গোমতী সেতুর দৈর্ঘ্য হচ্ছে ১ হাজার ৪১০ মিটার বা প্রায় দেড় কিলোমিটার। এই সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। ১৭টি স্প্যানের ওপর নির্মিত এই সেতুটিও চার লেনের এবং প্রস্থ ১৭ দশমিক ৭৫ মিটার। এই দুই সেতু নির্মাণে সময় লেগেছে তিন বছর পাঁচ মাস। মেঘনা এবং মেঘনা-গোমতী সেতু নির্মাণ করেছে যৌথভাবে জাপানের ওবায়েশী করপোরেশন, সিমিজু করপোরেশন ও জেএফই ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন। ২০১৬ সালের জুলাই মাসে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ৪ লেন চালু হলে তখন থেকে কাঁচপুর, মেঘনা এবং মেঘনা-গোমতী সেতু এলাকায় যানজট শুরু হয়। দ্বিতীয় সেতুগুলো নির্মাণ শুরু হলে যানজট আরও তীব্র আকার ধারণ করে। বর্তমানে এ মহাসড়ক দিয়ে দৈনিক প্রায় ৩০ হাজার যানবাহন চলাচল করে। আজ (শনিবার) সেতু দুটি চালু হলে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের সড়ক পথের চলাচলে নবদিগন্তের সূচনা হবে। এ মহাসড়কে একদিকে যানজট নিরসন হবে, অপর দিকে সময় বাঁচবে অনেক। যানজট না থাকলে কুমিল্লার মানুষজন গ্রামের বাড়ি থেকে গিয়ে রাজধানী ঢাকায় অফিস করতে পারবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
কুমিল্লা জেলা বাস ও মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-দপ্তর সম্পাদক ফারুক আহমেদ সুমন জানান, বর্তমানে চার লেনবিশিষ্ট ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যানবাহন এসে মেঘনা ও মেঘনা গোমতী সেতুতে উঠছে এক লেনে। এ কারণে ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবের সময়, এমনকি সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও সেতুগুলোর দুইদিকে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যাত্রী ও চালকদের ভোগান্তি পোহাতে হয়।
কুমিল্লা নাগরিক ফোরামের সভাপতি কামরুল আহসান বাবুল জানান, নবনির্মিত তিনটি সেতু এই মহাসড়কে যানবাহনের চালক ও যাত্রীদের এবারের ঈদযাত্রা নির্বিঘœ ও স্বস্তির করবে। এছাড়া চট্টগ্রামের সঙ্গে ঢাকার ১৯২ কিলোমিটার সড়কপথের যোগাযোগ যুগোপযোগী, দ্রুত ও যানজটমুক্ত করতে সেতু তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, মাত্র ৪ ঘণ্টায় ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাতায়াত করা যাবে। এ ছাড়া যানজট লাঘবের পাশাপাশি ভোগান্তি ও দুর্ঘটনার হারও কমবে। সাবেক রেলপথমন্ত্রী ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মুজিবুল হক এমপি বলেন, বর্তমান সরকার রেল ও সড়কপথসহ দেশের সকল ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেছে। এর বড় প্রমাণ হলো ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চার লেনের কাঁচপুর, মেঘনা ও মেঘনা- গোমতী দ্বিতীয় সেতু নির্মাণ। সরকার সফলভাবে দ্রুতগতিতে এই মহাসড়কের তিনটি সেতুর কাজ সম্পন্ন করেছে। এজন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সড়ক ও সেতুমন্ত্রীকে কুমিল্লাবাসীর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই।