ঈদ উৎসবে দক্ষিণাঞ্চলের ১৮টি ফেরিঘাটে নানা সংকটে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে যাত্রীদের। ঘাটগুলোতে অধিকাংশ ফেরিই জরাজীর্ণ ও পুরোনো আমলের। ৮০’র দশকের ফেরি জোরাতালি দিয়ে এবারের ঈদেও যাত্রী চাপ মোকাবিলা করতে হবে সংশ্লিষ্টদের। কোনো কোনো ঘাটে আবার জোয়ারভাটায় গ্যাংওয়ে ডুবে যায় ও জেগে ওঠে। ফেরি বিভাগের তথ্যমতে, ঈদে যাত্রীদের তীব্র চাপ মোকাবিলায় কোনো অতিরিক্ত ফেরির ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। ফলে ফেরির কারণে চরম দুর্ভোগে পড়তে পারেন দক্ষিণাঞ্চলের লাখ লাখ যাত্রী।
বরিশাল সড়ক ও জনপথ বিভাগের (ফেরি) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আজম শেখ জানান, তার আওতায় বরিশাল জেলা, ঝালকাঠি ও পিরোজপুরে ১০টি ফেরিঘাট রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে ব্যস্ততম ঘাট পিরোজপুরের কচা নদীতে বেকুটিয়া ফেরিঘাট, চরখালী ফেরিঘাট এবং বরিশালের বাবুগঞ্জের মীরগঞ্জ ফেরিঘাটে ঈদে ফেরি সার্ভিসের কোনো উন্নতি নেই। জানা গেছে, ঝালকাঠির আমুয়া ফেরিঘাট দিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহী রুটে প্রতিদিন ২০টির বেশি বাস চলাচল করে। কিন্তু এ ঘাটের ফেরি অনেকটা লক্করঝক্কর। পিরোজপুরের চরখালী ও বেকুটিয়া ফেরিঘাট দিয়ে খুলনা, যশোর, চট্টগ্রাম ও ঢাকার বাস বরগুনার পাথরঘাটা, মঠবাড়িয়া, ঝালকাঠি ও বরিশালে যাতায়াত করে। কিন্তু এখানকার ফেরিগুলোর অবস্থা অত্যন্ত নাজুক বলে জানিয়েছেন বাস চালকরা।
অপরদিকে গোমা, নেহালগঞ্জ, সাটপাকিয়া, বানারীপাড়া, আমরাঝুড়ি ঘাটের ফেরিও মান্ধাতা আমলের। অভিযোগ রয়েছে, প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ এলেও ফেরি বিভাগ এর স্থায়ী সমাধানে কোনো উদ্যোগ নেয় না। তবে নির্বাহী প্রকৌশলী আজম শেখ জানান, মীরগঞ্জ ফেরির বডি পুরোনো। আগামী বছরে এখানে নতুন ফেরি দেওয়া হতে পারে। বেকুটিয়া ও চরখালি ফেরিঘাটে দুটি করে ফেরি রয়েছে। তিনি বলেন, চরখালিতে ডুবোচরের কারণে ইঞ্জিন প্রায়ই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ড্রেজিংয়ের জন্য বিআইডব্লিউটিএকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, যে বরাদ্দ আসে তা ফেরি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ব্যয় করা হয়। তবে আশার কথা হলো ফেরি বণ্টন তৈরি প্রকল্পের আওতায় আগামী বছরের শুরুতে নতুন ফেরি পাওয়া যাবে।
এদিকে পটুয়াখালী ও বরগুনার ছয়টি ফেরিঘাটেও পুরোনো ফেরি চলবে এবারের ঈদে। এসব ঘাটে ঈদে বাড়তি চাপ মোকাবিলায় অতিরিক্ত কোনো ফেরি দেওয়া হবে না বলে ফেরি বিভাগ জানিয়েছে। বিশেষ করে লেবুখালী ফেরিঘাটে যাত্রী দুর্ভোগ যেন ১২ মাস। জোয়ার এলেই এখানকার গ্যাংওয়ে পানিতে ডুবে যায়। ঢাকা-বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ ফেরিঘাট লেবুখালী। দুই শতাধিক যানবাহন পারাপার হয় ওই ঘাট দিয়ে। ঈদের সময় তা হয় চারগুণেরও বেশি। পটুয়াখালীর লেবুখালী ঘাটে তিনটি ফেরি চলাচল করলেও ফেরিগুলো যানবাহন পারাপার করছে মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিনের ফেরি দিয়ে।
আমতলীর একাধিক বাসচালক বলেন, রাজধানীর সঙ্গে বরগুনা ও পাথরঘাটায় পরিবহনের বাস চলাচল করে এ রুটে। পায়রা নদীতে এখন প্রচ- স্রোত। দুর্বল ইঞ্জিনের ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে আমতলি ঘাটটিতে। পুরোনো ফেরি দিয়ে মোকাবিলা করতে হবে ঈদের অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ।
পটুয়াখালী সড়ক ও জনপথের ফেরি বিভাগের কার্য সহকারী মো. শহিদুল হক বলেন, উপকূলীয় এ এলাকায় ছয়টি ফেরিঘাট সচল রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে ব্যস্ততম ঘাট লেবুখালীতে মান্ধাতা আমলের চারটি ফেরি আছে। এছাড়া বগা, গলাচিপা, পায়রাকুঞ্জ, আমতলি, বড়ইতলা ফেরিঘাটে দুটি করে পুরোনো ফেরি আছে। এগুলো ১৯৮৬ সালে তৈরি। শহিদুল হক আরও বলেন, তাদের আওতায় অতিরিক্ত ফেরি নেই। ঈদে পরিবহনের যে পরিমাণ যাত্রীচাপ হয়, তা বহন করার ক্ষমতা ফেরি বিভাগের নেই।
অবশ্য অভিযোগ রয়েছে, ঈদ এলেও এসব ফেরি মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এসব প্রসঙ্গে জানতে পটুয়াখালী সড়ক ও জনপথের ফেরি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শামিমুল হককে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। এদিকে বিআইডব্লিউটিসির আওতায় লাহারহাট-ভেদুরিয়া ফেরিঘাট ও ভোলা-লক্ষ্মীপুর ফেরিঘাটে পর্যাপ্ত ফেরি আছে বলে জানা গেছে।
বিআইডব্লিউটিসির বরিশালের উপমহাব্যবস্থাপক সৈয়দ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ভোলা-লক্ষ্মীপুর ফেরিঘাটে তিনটি ও লাহারহাট-ভেদুরিয়া ফেরিঘাটে চারটি ফেরি আছে। ঈদে এগুলো দিয়েই যাত্রীচাপ কাটিয়ে ওঠা যাবে বলে তিনি মনে করেন। তবে লাহারহাট-ভেদুরিয়া ফেরিঘাট সূত্রে জানা গেছে, জাঙ্গালিয়ারচর থেকে ভোলার ভেদুরিয়ার ঘাট পর্যন্ত নদীর ঝুঁকিপূর্ণ। ভাটার সময় ফেরির প্রপেলার ঠেকে যায় ডুবোচরে। তাছাড়া পর্যাপ্ত বয়া, বিকন বাতি ও মার্কারও নেই। ফলে ঈদের সময় অতিরিক্ত যানবাহন পারাপার করতে গিয়ে ফেরি ডুবোচরে আটকে পড়া কিংবা স্রোতের টানে ভেসে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।