আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ৩১-০৫-২০১৯ তারিখে পত্রিকা

ঈদের আগে ব্যাংকগুলোতে টাকা তোলার হিড়িক

নিজস্ব প্রতিবেদক
| অর্থ-বাণিজ্য

টানা ৯ দিনের ছুটির কবলে পড়েছে ব্যাংকিং খাত। এর আগে ৩ জুন সোমবার শেষ কার্যদিবস হলেও ওই দিন ছুটি হবে কিনা এ নিয়ে গুঞ্জন রয়েছে। এজন্য বৃহস্পতিবারই প্রয়োজনীয় লেনদেন শেষ করতে গ্রাহকরা ব্যাংকে ভিড় করেছে। আর আগামী সোমবার অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী ছুটি নেওয়ায় অনেকটা ছুটির আমেজে থাকবে। তাই ছুটির আগে বৃহস্পতিবার হওয়ায় প্রয়োজন মেটাতে নগদ টাকা উত্তোলনে ব্যাংকে ছিল গ্রাহকদের উপচেপড়া ভিড়। 
ঈদ উপলক্ষে মঙ্গলবার থেকে ঈদের ছুটি শুরু হলেও শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় এবার ঈদের ছুটি শুরু হচ্ছে কার্যত শুক্রবার থেকে। এর আগেই প্রয়োজনীয় লেনদেন সেরে নিতে সপ্তাহজুড়ে ব্যাংকের শাখাগুলোতে গ্রাহকদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। সাধারণ গ্রাহকরা যেমন টাকা তুলতে ভিড় করছে, তেমনি ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য বিক্রি বাবদ পাওয়া নগদ টাকার নিরাপত্তার স্বার্থে ব্যাংকে জমা করছেন। 
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ব্যাংকের শাখাগুলোতে টাকা জমা ও উত্তোলনে কাউন্টারে সামনে লম্বা লাইন দেখা গেছে। প্রয়োজনীয় লেনদেনের পাশাপাশি নতুন টাকার জন্যও ভিড় করছেন গ্রাহকরা। ফলে ব্যস্ত সময় পার করছেন ব্যাংকাররা। উপচে পড়া ভিড়ের কারণে বেশ কয়েকটি ব্যাংকে ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে গ্রাহকদের বাদানুবাদও লক্ষ্য করা যায়। জনতা ব্যাংকের মতিঝিল লোকাল শাখার কাউন্টারে আধা ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন আনোয়ার ইসলাম। তিনি বলেন, তার প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের বেতন বোনাস দিতে টাকা তুলতে এসেছেন। প্রচ- ভিড়, আরও আধাঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে। 
ওই ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, সকাল থেকেই প্রতিটি ক্যাশ কাউন্টারে গ্রাহকের ভিড় চোখে পড়ার মতো। অনেকে নিজের প্রয়োজনে টাকা তুলছে। আবার অনেকে তাদের ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বেতন বোনাস দেওয়ার জন্য টাকা তুলছে। এ ছাড়া অনেকে সঞ্চয়পত্রের মুনাফা তুলছে। আবার অনেকে টাকা জমাও করছে। সকাল থেকে বাড়তি গ্রাহকের চাপে সেবা দিতে ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হিমশিম খাচ্ছে। তবে নগদ টাকার কোনো সমস্যা নেই। গ্রাহকের চাহিদা মতো পরিশোধ করা হচ্ছে।
অগ্রণী ব্যাংকের দিলকুশা শাখায় টাকা তুলতে আসা নুরুল আলম বলেন, বেসরকারি ব্যাংকের মতো সরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থা আরও ভালো হওয়া উচিত। কারণ বিশেষ দিন বা উৎসবে মানুষের টাকা প্রয়োজন হয়। কিন্তু সরকারি ব্যাংকে এদিন টাকা তুলতে হিমশিম লেগে যায়। এজন্য ভোগান্তি কমাতে ব্যবস্থাপনা আরও উন্নত করা প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ডাচ বাংলা ব্যাংকের মতিঝিল শাখার এক কর্মকর্তা জানান, গ্রাহকরা জমার চেয়ে বেশি উত্তোলন করছে। সোমবার ব্যাংক খোলা থাকবে। কিন্তু অনেকে বলছে ওই দিন ছুটি ঘোষণা করা হতে পারে। এজন্য অনেকে ব্যাংক খোলা না থাকলে সমস্যায় পড়বে ভেবে টাকা তুলতে এসেছে।
লেনদেন বাড়লে এ দিন অবশ্য কলমানি মার্কেটে সুদহার তেমন বাড়েনি। তবে এ মার্কেটেও লেনদেন বেড়েছে। এ মার্কেট থেকে গতকাল টাকা ধার নিতে ব্যাংকগুলোকে সর্বোচ্চ ব্যয় করতে হয়েছে ৫ শতাংশ হারে। তবে  ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ঋণ আমানতের অনুপাত (এডিআর) সমন্বয় করতে গিয়ে প্রায় প্রতিটি ব্যাংকের হাতেই এখন উদ্বৃত্ত তহবিল রয়েছে। এ কারণে যে কয়েকটি ব্যাংকের সমস্যা হয়েছে, তাদের ধার দেওয়ার জন্য বাজারে পর্যাপ্ত তহবিল ছিল। ফলে কলমানি মার্কেটে সুদের হার ব্যাংক রেটের নিচেই অবস্থান করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, এক সপ্তাহ আগেও কলমানি মার্কেটে লেনদেনের পরিমাণ ছিল মাত্র তিন বা চার হাজার কোটি টাকা। কিন্তু গত সপ্তাহজুড়ে সেখানে সাত বা আট হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। এ ছাড়া ব্যাংক রেপো ব্যবস্থায় এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে সরকারি সিকিউরিটিজ জমার বিপরীতে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে রেপো ব্যবস্থায়ও ধার নিচ্ছে ব্যাংকগুলো। 
জানা গেছে, ঈদের আগে গ্রাহকরা নিজেদের প্রয়োজন মেটাতে ব্যাংক থেকে অন্য সময়ের তুলনায় বেশি অর্থ উত্তোলন করেন। 
এ কারণে এ সময়ে ব্যাংকে নগদ টাকার চাহিদা বেড়ে যায়। স্বল্প সময়ে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় অনেক ব্যাংকেরই নগদ টাকার সংকট দেখা দেয়। এ সংকট মেটাতে এক ব্যাংক আরেক ব্যাংক থেকে স্বল্প সময়ের জন্য অর্থ ধার নেয়। নিজেদের মধ্যে এ ধার নেওয়াকে ব্যাংকিং ভাষায় কলমানি মার্কেট বলে।