সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক ষ আলোকিত বাংলাদেশ ষ খবর : পৃষ্ঠা-১
নিজস্ব প্রতিবেদক : কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, সরকারের ধান রাখার মতো গুদাম নেই। পর্যাপ্ত গুদাম না থাকায় সরকার কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয় করতে পারছে না। বিষয়টি বেশ জটিল এবং সরকারের জন্য উভয় সংকট। যদি সরকারি ভাবে ৫০ থেকে ৬০ লাখ মেট্রিক টন ধান ক্রয় করে ২ থেকে ৩ বছরের জন্য সংরক্ষণ করা যেত, তা হলে কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয় করা যেত। কিন্তু সরকারের সেই সক্ষতা নেই। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে পূর্বনির্ধারিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় কৃষি সচিব মো. নাসিরুজ্জামানসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রী বলেন, এরই মধ্যে ১৯ লাখ টন খাদ্যশস্য ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন খাদ্যগুদাম নির্মাণ করা হলেও সেগুলোয় এক বছরের বেশি খাদ্যশস্য সংরক্ষণ করা যায় না। তবে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে আটটি সাইলো গুদাম হওয়ার কথা রয়েছে। সেগুলো নির্মাণ করা হলে সমস্যা অনেকটা কমে যাবে। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের সহায়তা পাওয়া বেশ জটিল। তারা মানসম্পন্ন খাদ্যগুদাম তৈরির জন্য টাকা দেয়। এ টাকা পাওয়া বেশ কঠিন।
প্রশ্ন ছিল ধান রাখার মতো গুদাম নেইÑ এ বিষয়টি তো প্রতি বছরই ঘটছে। সমাধানে সরকার কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে কি না? জবাবে মন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের সক্ষমতার সীমাবদ্ধতা রয়েছে। চাইলেই রাতারাতি কিছু করে ফেলা সম্ভব নয়। তাছাড়া কৃষককে আমরা ৭২ টাকার টিএসপি ২২ টাকায় দিচ্ছি, ৬০ টাকার পটাশিয়াম ১৫ টাকায় দিচ্ছি এবং ২২ টাকার ইউরিয়া দিচ্ছি ১৬ টাকায়। তাদের বীজ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। কৃষকের প্রতি সরকার সহানুভূতিশীল না হলে এসব কার জন্য করা হচ্ছে। এছাড়া নতুন দুইটি ধানের জাত বাজারে আসায় আশার চেয়েও বেশি উৎপাদন হয়েছে। এ দুইটি ধানের জাত হলো বিরি ৮১ ও বিরি ৮৯। বিঘাপ্রতি এ ধানের উৎপাদন ৩০ মন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর রেকর্ড পরিমাণ ধান উৎপাদন হয়েছে। আবার সেপ্টেম্বর মাসের দিকে আবহাওয়া খারাপ হলে দেখা যাবে আমনের ফলন ভালো হয়নি।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, কৃষককে লাভবান করে দিতে আমরা স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ১০ থেকে ১৫ লাখ মেট্রিক টন চাল রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সব ধরনের চালই রপ্তানি করা যাবে। রপ্তানিকারকে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ নগদ সহায়তা দেওয়া হবে। তিনি বলেন, চাল রপ্তানি করা বেশ চ্যালেঞ্জের বিষয়। ভারত ভিয়েতনামের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় করতে হবে। কারণ, আমাদের চালের মান অত ভালো নয়। এছাড়া কৃষি শ্রমিকের সংকট দূর করতে কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণ করা হবে। এখানেও সমস্যা আছে। একটি হারভেস্টার মেশিনের দাম কমপক্ষে ১২ লাখ টাকা। এক উপজেলায় একটি মেশিন দিলেই সমস্যার সমাধান হবে তা কিন্তু নয়। বরং প্রতিটি ইউনিয়নে কমপক্ষে তিন থেকে চারটি হারভেস্টার দিতে পারলে কিছুটা হলেও স্বস্তি আসবে। কিন্তু আমাদের কৃষক অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল নয়। ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ আর্থিক সহায়তা দিয়েও একটি মেশিন ক্রয় করানো যায় না। তারপর সরকার কৃষি যন্ত্রপাতি কেনার জন্য ৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এতে কৃষক ভাইয়েরা উপকৃত হবে। তিনি আরও বলেন, এছাড়া চাল আমদানির ওপর শুল্ক বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ২৮ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এতে আমদানি বন্ধ হলে কৃষক উপকৃত হবেন। আমরা ধানের মূল্য অগ্রিম নির্ধারণ করে মৌসুমের শুরুতে সরাসরি কৃষক থেকে সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ফলন ভালো হয়েছে এটা খুবই সত্য। এ ধরনের ফলন ভালো হলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কৃষক উপযুক্ত মূল্য না পেয়ে টমেটো রাস্তায় ফেলে দেন। এ ধরনের পরিস্থিতিতে সরকার কী করতে পারে। আমরা দীর্ঘমেয়াদি কিছু পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছি।