আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। ভবিষ্যৎ এই প্রজন্মের সুস্থতার উপর দেশ ও দশের এগিয়ে যাওয়া অনেকাংশে নির্ভরশীল। শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার পাশাপাশি চোখের সুস্থতাও সমান গুরুত্ব বহন করে। দৃষ্টিহীন শিশুকে অন্যের ওপর নির্ভর করে সারাজীবন কাটাতে হয়। এতে দেশ দুইজন মানুষের পূর্ণাঙ্গ সেবা থেকে বঞ্চিত হয়। এছাড়াও পরনির্ভরশীলতার কারণে শিশু মানসিকভাবেও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।
দৃষ্টিস্বল্পতার কারণ
জন্মগত ছানি, পাওয়ারজনিত দৃষ্টিস্বল্পতা, কর্নিয়ার ঘা, চোখে আঘাত, চোখের ক্যান্সার (রেটিনোব্লাস্টমা), চোখের প্রদাহ (ইউভাইটিস)। শিশুর চোখের অন্য সমস্যাগুলোর মধ্যে চোখের চুলকানি বা অ্যালার্জি এবং চোখ দিয়ে পানি পড়া অন্যতম।
শিশুর চোখে ছানি
জন্মের পরপর বা কিছুদিন পর এক বা উভয় চোখে সাদা আস্তর দেখা যাওয়া ছানি রোগের লক্ষণ। ডেলিভারির সময় চোখে আঘাতের কারণে, গর্ভকালীন মায়ের রুবেলা জ্বর, বিভিন্ন ওষুধ সেবন এবং বংশগত কারণে শিশুর চোখের ছানি পড়তে পারে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অপারেশনের মাধ্যমে ছানি অপসারণ করে পরে সময় মতো কৃত্রিম লেন্স প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে এ রোগের চিকিৎসা সম্ভব। অপারেশনের বিলম্বের কারণে চিরতরে শিশু দৃষ্টি হারাতে পারে। পাওয়ারজনিত দৃষ্টিস্বল্পতা, ঘনঘন চোখ নড়াচড়া করা, চোখ বেঁকে যাওয়া, বস্তু অনুসরণ না করতে পারা, ঘনঘন চোখে হাত দেয়া, কাছে গিয়ে টেলিভিশন দেখা, মাথাব্যথা করা ইত্যাদি দৃষ্টিস্বল্পতার লক্ষণ। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চশমা ব্যবহারের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। অপুষ্টিজনিত কারণে ভিটামিন-এ’র অভাবে দু’চোখে ঘা হতে পারে। এছাড়াও ডেলিভারির সময় চোখে আঘাতের কারণে এবং জন্মের পরে যে কোনো সময়ে জীবাণু সংক্রমণের কারণে চোখে ঘা হতে পারে। চোখে ব্যথা, আলোতে চোখ খুলতে না পারা, চোখ লাল হওয়া, কালোমণিতে সাদা দাগ পড়া এ রোগের লক্ষণ। ডাক্তারের পরামর্শে চোখের জীবাণুু পরীক্ষা করে এ রোগের চিকিৎসা সম্ভব।
চোখের ক্যান্সার
বিড়ালের চোখের মতো চোখ জ্বলজ্বল করা, চোখ লাল হওয়া এ রোগের লক্ষণ। চোখে ব্যথা হওয়া, চোখ বেঁকে যাওয়া, চোখ ফুলে যাওয়া ইত্যাদি চোখের ক্যান্সার বা রেটিনোব্লাস্টোমার লক্ষণ। এসব লক্ষণ দেখামাত্র দেরি না করে চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন। চোখের ক্যান্সার শরীরে ছড়িয়ে পড়লে জীবন রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে।
শিশুর চোখ বেঁকে যাওয়া বা টেরা চোখ
দৃষ্টিস্বল্পতা, চোখের আঘাত, চোখের স্নায়ু দুর্বলতা ইত্যাদি কারণে চোখ বেঁকে যেতে পারে। ডাক্তারের পরামর্শে চোখ পরীক্ষা করে চশমা ব্যবহার করে, বিভিন্ন রকম চোখের ব্যায়ামের মাধ্যমে এবং প্রয়োজনে অপারেশনের মাধ্যমে এর চিকিৎসা সম্ভব।
চোখের অ্যালার্জি
ঘনঘন চোখে হাত দেয়া, চোখ কচলানো, চোখ লাল হওয়া, শুষ্ক মৌসুমে এ রোগ বেশি দেখা যায়। বছরে ২ থেকে ৩ বার চোখে অ্যালার্জি হতে পারে। ধুলাবালি, ধোঁয়া, বিভিন্ন খাবার ও রাসায়নিক পদার্থে শরীরে এবং চোখে অ্যালার্জি হতে পারে। যাদের হাঁপানি বা অ্যাজমা রোগ আছে, তাদের চোখে অ্যালার্জি বেশি দেখা যায়। অ্যালার্জি হয় এমন পদার্থ বর্জন করে ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ সেবনে এ রোগের চিকিৎসা সম্ভব।
চোখ দিয়ে পানিপড়া
জন্মগতভাবে চোখের পানি সরে যাওয়ার নেত্রনালি বন্ধ থাকলে চোখের পানি উপচে পড়ে। এতে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। ১ থেকে ২ বছরের মধ্যে বন্ধনালি আপনাতেই খুলে গেলে চোখের পানিপড়া অনেকাংশে কমে যায়। এছাড়াও চোখের অ্যালার্জি অথবা জন্মগত চোখের চাপ বাড়ার কারণেও শিশুদের চোখ দিয়ে পানি পড়ে। ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক চোখের কোনায় মালিশ করা এবং চোখে ড্রপ ব্যবহারে এ রোগের চিকিৎসা সম্ভব। প্রয়োজনে অপারেশনের মাধ্যমেও চিকিৎসা করা হয়। পরিশেষে বলতে হয়, শিশুরা অনেক কিছু বলে বোঝাতে পারে না। ফলে তাদের সমস্যাগুলো অপ্রকাশ্যই থেকে যায়। এসব সমস্যা শেষ পর্যন্ত শিশুর অন্ধত্বের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সুতরাং শিশুর দৃষ্টি অধিকার রক্ষায় আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে।
ডা. শামস মোহাম্মদ নোমান
জুনিয়র কনসালটেন্ট
চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও
প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম।