logo
প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, শনিবার, মার্চ ১২, ২০১৬
কাউন্সিলে সরগরম বিএনপির তৃণমূল
রকীবুল হক

আর মাত্র এক সপ্তাহ পর ১৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে বিএনপির বহু কাক্সিক্ষত ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল। এর দুই দিন পর অনুষ্ঠিত হবে প্রথম দফা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের ভোট। দল ও নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে এই দুইটি ইস্যুকেই গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে বিএনপি। বিএনপির কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের সব নেতাকর্মীই তাই এখন বেশ ব্যস্ত। তবে কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের বেশিরভাগ এমনকি জেলা-উপজেলা পর্যায়ের অনেক নেতার ব্যস্ততা জাতীয় কাউন্সিলকে ঘিরেই। এ কাউন্সিল সফলভাবে বাস্তবায়নের প্রস্তুতিসহ কমিটির পদ-পদবি পেতে সংশ্লিষ্টদের মাঝে চলছে নানা জল্পনা ও তৎপরতা। 
নানা বাধাবিপত্তি আর প্রতিকূল পরিবেশের কারণে নির্বাচন নিয়ে খুব বেশি ভাবনা নেই কেন্দ্রীয় নেতাদের। শুধু নির্বাচনী এলাকাগুলো থেকে প্রাপ্ত সমস্যা ও অভিযোগগুলো মনিটরিং এবং গণমাধ্যমকে তা জানানো হচ্ছে কেন্দ্র থেকে। ২০ দলীয় জোটের মাধ্যমে  সমন্বয় করে এ নির্বাচনে সাধ্যমতো ভালো ফল আনতে স্থানীয় নেতাদেরই মূল দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বিএনপির পক্ষ থেকে। তাই তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ব্যস্ততা ইউপি নির্বাচনকে ঘিরেই বেশি বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, কাউন্সিল ও ইউনিয়ন নির্বাচন দুইটিই বিএনপির কাছে গুরুত্বপূর্ণ। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জাতীয় কাউন্সিল ও ইউনিয়ন নির্বাচনের প্রস্তুতি একসঙ্গেই করা হচ্ছে। কাউন্সিল সফল হওয়ার পাশাপাশি ইউপি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীরা বিপুলভাবে জয়লাভ করবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
দলীয় সূত্র জানায়, বিএনপির আসন্ন জাতীয় কাউন্সিল সফল করতে একটি প্রস্তুতি কমিটি ও ১১টি উপকমিটি পুরোদমে কাজ চালাচ্ছে। প্রস্তুতি কাজের অগ্রগতি নিয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নিয়মিত বৈঠক করছেন উপকমিটির সদস্যরা। বৃহস্পতিবার কাউন্সিলের স্লোগান ও লোগো উন্মোচনের মধ্য দিয়ে প্রচার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ‘দুর্নীতি দুঃশাসনের হবেই শেষ, গণতন্ত্রের বাংলাদেশ’ এই স্লোগান সংবলিত কাউন্সিল লোগো উন্মোচন করেন ব্যবস্থাপনা ও প্রচার উপকমিটির নেতারা। এরই মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে লাগানো হয়েছে কাউন্সিলের পোস্টার। সারা দেশেও একইভাবে পোস্টারিং হবে বলে নেতারা জানিয়েছেন। বিএনপির ষষ্ঠ কাউন্সিলের লোগোতে দেখা যায়, স্মৃতিসৌধের ডান পাশে এক যুবক বাংলাদেশের পতাকা দৃঢ়চিত্তে উঁচিয়ে ধরেছে এবং বামদিকে রয়েছে বিএনপির দলীয় প্রতীক ধানের শীষ। কাউন্সিল উপলক্ষে বিএনপির ১১টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে পৃথক স্লোগান ও ভাবনা প্রকাশ করা হয়েছে। ছাত্রদলের স্লোগান ‘বাঁচতে চাই, পড়তে চাই; দুর্নীতি মুক্ত দেশ চাই’, যুবদলের স্লোগান - ‘তারুণ্যে যারা অকুতোভয়, তারাই আনবে সূর্যোদয়’; স্বেচ্ছাসেবক দলের স্লোগান ‘আলোচনার দিন দূরে নয়, করতে হবে আঁধার জয়’; শ্রমিক দলের স্লোগান ‘শ্রম দিয়ে শিল্প গড়ব, দেশের আঁধার ঘুচিয়ে দেব’; মহিলা দলের স্লোগান  ‘চেতনায় নারী বিপ্লবে নারী, গণতন্ত্র ফেরাতে আমরাই পারি’; মুক্তিযোদ্ধা দলের স্লোগান ‘মুক্তিযদ্ধের মূলমন্ত্র, মুক্ত কর গণতন্ত্র’; কৃষক দলের স্লোগান ‘ফলাব ফসল, গড়ব দেশ, গণতন্ত্রের বাংলাদেশ’; ওলামা দলের স্লোগান ‘জিয়ার আদর্শে দেশ গড়ব, ধর্মীয় স্বাধীনতা বজায় রাখব’; তাঁতী দলের স্লোগান ‘শক্ত হাতে বাধব তাঁত, কাটাতে হবে আঁধার রাত’; জাসাসের স্লোগান ‘গাইব মোরা গণতন্ত্রের গান, দুঃশাসনের হবেই অবসান’; মৎসজীবী দলের স্লোগান  ‘জালের টানে ঘুচবে আঁধার, বাংলাদেশ হবে সবার।’ এসব স্লোগান নিয়ে সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল ঘিরে ব্যাপক প্রচার কাজ চালানোর উদ্যোগ নিয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
এদিকে বিএনপির কাউন্সিল উপলক্ষে আয়োজিত নির্বাচনে এরই মধ্যে চেয়ারপারসন পদে খালেদা জিয়া এবং সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদে তারেক রহমান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন। কাউন্সিলরসহ সব নেতাকর্মীর দৃষ্টি এখন মহাসচিবসহ কমিটির অন্য পদগুলো নিয়ে। এর মধ্যে মহাসচিব পদে ভারপ্রাপ্তের দায়িত্বে থাকা মির্জা ফখরুলকে পূর্ণ দায়িত্ব দেয়া হবে বলে মনে করেন শীর্ষ নেতারা। তাই বাকি পদগুলো নিয়েই সবার মাঝে এখন জল্পনা-কল্পনা চলছে। কাউন্সিলরদের ক্ষমতাবলে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াই এসব পদে নেতা নির্বাচিত করবেন বলে জানা গেছে।
সূত্র মতে, ১৯ মার্চ সকাল ১০টায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের উদ্বোধন করবেন খালেদা জিয়া। লন্ডন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কাউন্সিলে বক্তব্য রাখবেন তারেক রহমান। এ পর্বে কাউন্সিলররা ছাড়াও আমন্ত্রিণ বিভিন্ন পর্যায়ের অতিথিরা অংশ নেবেন। মধ্যাহ্নভোজের বিরতির পর বিকাল ৩টা থেকে শুরু হবে কাউন্সিলরদের নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক। দুই ধাপের আলোচ্য সূচিতে থাকছে শোক প্রস্তাব উপস্থাপন, দলের চেয়ারম্যান ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচনে গঠিত নির্বাচন পরিচালনা কমিটির রিপোর্ট পেশ, মহাসচিবের সাংগঠনিক প্রতিবেদন পেশ, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি এবং দলের সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে আলোচনা, দলের ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্র সংশোধন এবং দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটি ও নির্বাহী কমিটির সদস্যদের নির্বাচন। ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিএনপির পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিল হয়। 
গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকবেন না নিষ্ক্রিয়রা-গয়েশ্বর : কাউন্সিলে দলের নিষ্ক্রিয় নেতারা গুরুত্বপূর্ণ পদ পাবেন না বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। শুক্রবার সকালে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয়তাবাদী কর্মজীবী দলের ৯ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে যান তিনি। 
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, যারা কর্মে নিষ্ক্রিয়, তারা ধরনায় সক্রিয়, তাদের বাদ দেয়া যাবে না। তারা আশপাশে থাকবে তবে গুরুত্বপূর্ণ পদ পাবে না।
বিএনপি সমর্থিত ব্যানারভিত্তিক সংগঠনগুলো আসন্ন কাউন্সিলে সহযোগী দল হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের সময় যখন রাজনীতির সুযোগ ছিল না তখন প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠান করে এসব সংগঠন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তবে এসব সংগঠন বিএনপির স্বীকৃতির ওপর নির্ভরশীল নয়। নিজস্ব গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তারা চলবে। এ সময় অন্যদের মধ্যে বিএনপির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাক খায়রুল কবির খোকন, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এদিকে প্রথম দুই দফায় অনুষ্ঠিতব্য ইউনিয়ন নির্বাচনে প্রায় দেড় হাজার চেয়ারম্যান পদের বিপরীতে ১৬২টিতেই প্রার্থী নেই বিএনপির। উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে প্রার্থী সঙ্কট, বাধা-বিপত্তি ও হুককির পরিপ্রেক্ষিতে এসব স্থানে প্রার্থী নেই বলে দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। সূত্র মতে, যেসব স্থানে প্রার্থী আছে তারাও ঠিকমতো প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারছেন না। গ্রেফতার-নির্যাতন আতঙ্কসহ সরকারি দলের নানা হুমকি-ধামকির মধ্যে কোণঠাসা অবস্থায় আছেন বিএনপি প্রার্থীরা। তাই এ নির্বাচনে ভালো ফল নিয়ে বেশ অনিশ্চয়তা রয়েছে দলের নেতাকর্মীদের মাঝে। এরপরও সবকিছু জেনে-বুঝেই নির্বাচনের শেষ পর্যন্ত দেখার সিদ্ধান্ত রয়েছে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে। শুক্রবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, বর্তমান সরকার নোংরাভাবে নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করছে। আগে দেখা যেত নির্বাচনের দিন জনগণের ভোটে ব্যালট বাক্স পূর্ণ হতো। কিন্ত এখন এই সরকারের আমলে ভোটের আগের দিন রাতে পূর্ণ হয়ে যায়। এই সরকার এখন সবার সামনে ভোট ডাকাতি করছে।
তিনি বলেন, ইউপি নির্বাচনে সরকার ও প্রশাসন মিলে বিরোধী দলের প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দিতে দিচ্ছে না। নির্বাচনে বহু জায়গায় কোনো প্রার্থী নেই এটা দেশের মানুষ মানবে না। কারণ এদেশের মানুষ ভোট দিতে ভালোবাসে। পৌর নির্বাচন ও মেয়ের নির্বাচনের মতো ইউপি নির্বাচনও সুষ্ঠু হবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected]