logo
প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, শনিবার, মার্চ ১২, ২০১৬
নারায়ণগঞ্জে মাদকের নিরাপদ রাজ্য দুই থানার সীমান্তে
শরীফ সুমন, নারায়ণগঞ্জ

নারায়ণগঞ্জে দুইটি থানা এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের পদচারণা থাকে খুবই কম। আর এ সুযোগে ওই সব এলাকায় নিরাপদ সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে মাদক সম্রাটরা। ওই দুইটি এলাকার একদিকে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা, অন্যদিকে ফতুল্লা মডেল থানা। এক থানার পুলিশ সচরাচর অন্য থানা এলাকায় অভিযানে যায় না। আর এ সুযোগই কাজে লাগিয়ে যাচ্ছে মাদক ব্যবসায়ীরা। 
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ শহরের গলাচিপা ও মাসদাইর এলাকায় অভয়ারণ্য গড়ে তুলেছে মাদক সম্রাট মনিরুজ্জামান শাহীন ওরফে বন্দুক শাহীন। কয়েক বছরে মাদক সম্রাট বন্দুক শাহীনের সাম্রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একাধিক অভিযান চালালেও কোনোটিই ফলপ্রসূ হয়নি। বরং মাদক ব্যবসায়ীদের হাতে মারধরের শিকার হতে হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের। নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগ, বাবুরাইল ও পাইকপাড়া এলাকার এক পাশে সদর মডেল থানা ও অন্য পাশে ফতুল্লা মডেল থানা। মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে আধিপত্য নিয়ে কয়েক বছরে বেশ কিছু হত্যার ঘটনাও ঘটে। যার মধ্যে পাইকপাড়ায় সন্ত্রাসী চোক্কা সুমন হত্যা, দেওভোগ বাংলাবাজার এলাকায় রিপন হত্যা, দেওভোগ নাগবাড়ী এলাকায় শিপলু বেপারি হত্যা, দেওভোগ মাদরাসা রোডে রকিবুল হাসান রকি হত্যা, বাবুরাইল তাঁতীপাড়া এলাকায় সন্ত্রাসী মেজর পারভেজ হত্যা ছিল উল্লেখযোগ্য। শহরের প্রাণকেন্দ্র চাষাঢ়া-মিশনপাড়ার সীমান্তবর্তী এলাকায় নিরাপদ মাদকের নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে মাদক সম্রাট তবলা রিপন। এছাড়া একাধিক গ্রুপে বিভক্ত হয়েও চলছে মাদক ব্যবসা। শহরের খানপুর-তল্লা এলাকাসহ রেললাইনের দুই পাশেই মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে ব্যবসায়ীরা। ফতুল্লার পাগলা এলাকা বর্তমানে মাদক ব্যবসায়ীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। পাগলার পাশেই রয়েছে ঢাকার কদমতলী ও শ্যামপুর থানা। ওই এলাকায় বর্তমানে মাদক সম্রাট কিলার মোক্তার ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মিরু বাহিনী বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। মাদক ব্যবসায়ীরা আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় হত্যা করতেও দ্বিধা করছে না। ২০১৫ সালের ২১ অক্টোবর পাগলায় কিলার মোক্তার বাহিনী কুপিয়ে হত্যা করে মাদক বিক্রেতা বিল্লাল হোসেনকে। ১০ জুন পাগলা রসুলপুরে মাদক ব্যবসায় রাজি না হওয়ায় নূরুল হককে হত্যা করে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা পরিচয় দানকারী মির হোসেন মিরু বাহিনীর লোকজন। ২৭ ফেব্রুয়ারি ফতুল্লার রসুলপুরে স্থানীয় মাদক প্রতিরোধ কমিটির সেক্রেটারির ওপর ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় কিলার মোক্তার বাহিনী। ফতুল্লার লামাপাড়া-নয়ামাটি এলাকার অন্য পাশে সিদ্ধিরগঞ্জের চৌধুরীবাড়ী-গোদনাইল এলাকা অবস্থিত। লামাপাড়া-নয়ামাটি এলাকায় পুলিশের ক্রসফায়ারে নিহত রকমতের ঘনিষ্ঠ সহযোগী চুন্নু, রফেদ, মিঠুন, জামাই আসলামের নেতৃত্বে মাদক ব্যবসা চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তারা একাধিকবার মাদক ও অস্ত্রসহ গ্রেফতারও হয়। ২০১৫ সালের ২২ অক্টোবর গোদনাইলে মাদক ব্যবসা নিয়ে বিরোধের জেরে নিরব হোসেনকে হত্যা করে অন্য মাদক ব্যবসায়ীরা। 
২০১৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে টুন্ডা সেলিম ও শাহজাহান সরকার সাজু গ্রুপের মধ্যে গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটে। শিমরাইল এলাকা সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অধীনে হলেও এর পাশেই রয়েছে ডেমরা থানা। শিমরাইল মোড়ে বিগত দিনে নূর হোসেনের মাদক স্পটটি ছিল জেলার মধ্যে সেরা। কাউন্টার বসিয়ে সেখানে মাদকের বিকিকিনি চলত। 
এ প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোখলেছুর রহমান জানান, মাদকের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান চলমান রয়েছে। তবে পুলিশের অনেকগুলো কাজের মধ্যে মাদকবিরোধী অভিযান একটি। এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর পৃথকভাবে শুধু মাদক নির্মূলে কাজ করছে। তবে মাদক নির্মূল শুধু একা পুলিশ প্রশাসনের পক্ষে সম্ভব নয়।

সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected]