logo
প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, শনিবার, মার্চ ১২, ২০১৬
বিষয় : বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়
প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা- ২০১৬
মো. সফিক উল্যাহ

অধ্যায়-৩

প্রশ্ন : মহাস্থানগড়ের কয়েকটি ঐতিহাসিক 
নিদর্শনের বর্ণনা দাও?
উত্তর : বগুড়া শহর থেকে ১৩ কিলোমিটার উত্তরে করতোয়া নদীর পশ্চিম তীরে মহাস্থানগড় অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের একটি প্রাচীন ঐতিহাসিক নিদর্শন।
নিদর্শন :
— বাংলাদেশের প্রাচীনতম ও বৃহৎ নগর ‘পুন্ড্রনগর’-এর ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। এ নগর মৌর্য আমলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। 
— বাংলার প্রাচীনতম শিলালিপি ‘ব্রাহ্মী শিলালিপি’ পাওয়া গেছে।
— এখানে পোড়ামাটির ফলক ও ভাস্কর্য, স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা, পাথর ও কাচের পুঁতি পাওয়া গেছে।
— এখানে ‘গোবিন্দ ভিটা’, ‘লখিন্দরের মেধ’ ও ‘গোকুল মেধ’ নামে ধর্মীয় পুরাকীর্তি রয়েছে। 
— প্রাচীনকালের একটি দুর্গ ভাঙা অবস্থায় এখনও দেখতে পাওয়া যায়। 
— দুর্গটির পূর্বদিকে করতোয়া নদী এবং অপর তিন দিকে চওড়া খাদের চিহ্ন রয়েছে।
— দুর্গের ভেতরে এখানে-সেখানে অনেক পাথরের খ- রয়েছে। ‘খোদাই পাথর’ নামে পরিচিত এক টুকরা বিশেষ ধরনের পাথর পাওয়া গেছে। এ পাথর টুকরাটি প্রায় ৩.৩৫ মিটার লম্বা ও ০.৯১ মিটার চওড়া।
— মহাস্থানগড়ের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে মোগল আমলে নির্মিত এক গম্বুজের একটি মসজিদ রয়েছে। এটি ‘মহাস্থান মসজিদ’ নামে পরিচিত।
সুতরাং মহাস্থানগড় নানা ঐতিহাসিক নিদর্শন সমৃদ্ধ একটি নগরী। 
(মহাস্থানগড়ের নিদর্শনগুলো এখানকার জাদুঘর, রাজশাহী বরেন্দ্র জাদুঘর ও ঢাকার জাতীয় জাদুঘরে রক্ষিত আছে)।
প্রশ্ন : সোমপুর মহাবিহারে কী কী নিদর্শন পাওয়া গেছে।
উত্তর : সোমপুর মহাবিহার :
(বাংলার অন্যতম পুরাকীর্তি হলো সোমপুর মহাবিহার। এটি পাহাড়পুর রাজশাহী বিভাগের নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলায় অবিস্থত। এটা পাল রাজাদের একটি প্রত্নস্থল। এটি প্রায় ২৪ মিটার উঁচু ও ০.১০ বর্গ কিলোমিটার বা ১০ হেক্টর এলাকাজুড়ে বিস্তৃত)। রাজা ধর্মপালের শাসনামলে (৭৮১-৮২১ খ্রি.) এটি নির্মিত হয়। 
নিদর্শন :
— বিহারটির চারদিকে ১৭৭টি কুঠুরি রয়েছে। মাঝখানে সুউচ্চ একটি মন্দির রয়েছে। তার চারপাশে রয়েছে অনেক ছোট মন্দির এবং পুকুর।
— এছাড়া রন্ধনশালা, ভোজনশালা, পাকা নর্দমা ও চিত্র পাওয়া গেছে। এগুলোর বেশিরভাগ বাংলার জীবজন্তুর মূর্তি।
— এছাড়া চুনাবালি ও ধাতব মূর্তি পাওয়া গেছে।
— পাহাড়পুরের পুরাকীর্তি প্রাচীন বাংলার ধর্ম ও সংস্কৃতির ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলোর অন্যতম।
আমরা এসব নিদর্শন স্বচক্ষে ঘুরে দেখব ও প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করব।
প্রশ্ন : সোনারগাঁয়ে কোন আমলের ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে?
উত্তর : বাংলাদেশের বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থানের অন্যতম হলো সোনারগাঁ। (ঢাকা শহর থেকে প্রায় ২৭ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণে মেঘনা নদীর পশ্চিম তীরে সোনারগাঁ অবস্থিত। বর্তমানে এটা নারায়ণগঞ্জ জেলার অন্তর্গত)।
মধ্য যুগে মুসলিম শাসনামলে বেশ কিছুকাল এখানে বাংলা সুলতানদের রাজধানী ছিল। মোগল আমলের বারো ভূঁইয়াদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ঈসা খাঁ এবং তার পুত্র মুসা খাঁর রাজধানী ছিল এখানে। সে সময়ের গৌরবময় দিনের কিছু নিদর্শন বর্তমান সোনারগাঁয়ে এখানে-সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। নিদর্শনগুলোর মধ্যে বিরাট আকারের দীঘি, মাটির স্তূপ, ধ্বংসপ্রাপ্ত কেল্লা, মসজিদ এবং পানাম নগরের ধ্বংসাবশেষ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
সুতরাং সোনারগাঁয়ে মধ্য যুগে মুসলিম শাসনামলের নিদর্শন রয়েছে।
প্রশ্ন : লালবাগ দুর্গের নিদর্শনগুলোর বর্ণনা দাও।
উত্তর : লালবাগ দুর্গ : বাংলাদেশের ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলোর মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এটি বর্তমান পুরান ঢাকার দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে বুড়িগঙ্গা নদীর কাছে অবস্থিত। 
১৬৭৮ সালে মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের পুত্র শাহজাদা মোহাম্মদ আযম ঢাকার সুবেদার থাকাকালে এটি তৈরির কাজ শুরু হয়। তাকে ঢাকা ত্যাগ করতে হয় বলে এটির কাজ অসম্পূর্ণ রেখে চলে যেতে হয়। তাই এটি আর সম্পন্ন হয়নি। 
নিদর্শন :
— এটি সম্পূর্ণ ইটের তৈরি।
— এর চারদিকে ইটের তৈরি উঁচু প্রাচীর রয়েছে।
— এ দুর্গটির মাঝখানে খোলা জায়গা আছে।
— মাঝখানে দোতলা ছোট্ট সুরম্য প্রাসাদ ছিল। বর্তমানে সেখানে একটি জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
— এ দুর্গের উত্তর ও দক্ষিণ দিকে দুইটি প্রবেশপথ রয়েছে।
— দক্ষিণ দিকের প্রবেশপথে গোপনে বের হওয়ার জন্য অনেক সুড়ঙ্গ পথ ছিল।
— এ দুর্গের ভেতরে ‘দিওয়ান-ই-আম’ নামক দরবার হল, তিন গম্বুজবিশিষ্ট একটি মসজিদ ও একটি পুকুর রয়েছে।
— বাংলার সুবেদার শায়েস্তা খানের কন্যা পরী বিবির মাজার রয়েছে। 
সুতরাং লালবাগ কেল্লা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থান। আমরা তা পরিদর্শন করে জ্ঞান অর্জন করব।
প্রশ্ন : বাংলাদেশের ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলোর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাশীল হওয়া প্রয়োজন কেন?
উত্তর : বাংলাদেশের পুরোটাই যেন প্রতনতাত্ত্বিক নিদর্শনের এক উন্মুক্ত জাদুঘর। বাংলাদেশের সর্বত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ঐতিহাসিক গুরুত্ববহনকারী নানা নিদর্শন। এসব নিদর্শন আমাদের অতীত সভ্যতা ও সংস্কৃতির পরিচয় বহন করে। আমরা এসব ঐতিহ্যে গৌরববোধ করি। এসব নিদর্শন আমাদের জাতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্যকে ধারণ ও লালন করে। তাই এগুলোর প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল হবো। আমরা এ স্থান পরিদর্শন করব, জানব ও এদের সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ করব। কারণ এগুলো আমাদের অতীত ঐতিহ্যের পরিচয় বহন করছে।

 

মো. সফিক উল্যাহ
সিনিয়র শিক্ষক
সফদর আলী স্কলার্স ইনস্টিটিউশন 
মিরপুর, ঢাকা

সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected]