logo
প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ৬, ২০১৬
ওফাত স্মরণ
জাতির ধর্মীয় অভিভাবক খতিব উবাইদুল হক (রহ.)
আজ মাওলানা উবাইদুল হক (রহ.) এর নবম মৃত্যুবার্ষিকী
এস এম সাখাওয়াত হুসাইন

আজ জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মাওলানা উবাইদুল হক  (রহ.) এর নবম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৭ সালের এদিনে তিনি ইন্তেকাল করেন। সিলেট শহর থেকে প্রায় ৭৪ কিলোমিটার দূরে ঐতিহ্যবাহী গ্রাম বারঠাকুরিতে ১৩৩৫ বাংলা সনের ১৪ বৈশাখ মোতাবেক ১৯২৮ সালের ২ মে শুক্রবার তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
দারুল উলুম দেওবন্দে পড়াশোনার শেষ বছর ঢাকার বড়কাটারা হোসাইনিয়া আশরাফুল উলুম মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা আবদুল ওহাব পীরজী হুজুুর (রহ.) এর আগ্রহে এবং দারুল উলুম দেওবন্দের সম্মানিত শিক্ষকদের পরামর্শে খতিব বড়কাটারা মাদরাসায় শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। এ মাদরাসায় তিনি তিন বছর শিক্ষকতা করেন। পরে মাওলানা সাইয়েদ হোসাইন আহমদ মাদানি ও মাওলানা এযায আলীসহ অন্য শিক্ষকদের সঙ্গে দেখা করার জন্য তিনি দেওবন্দ চলে যান। মাওলানা এযায আলী (রহ.) তাকে উত্তর প্রদেশের শাহজাহানপুরের এক মাদরাসায় শিক্ষকতার জন্য পাঠিয়ে দেন। সেখানে কিছুদিন শিক্ষকতা করার পর মাওলানা এযায আলী তাকে নিয়ে আসেন এবং পাকিস্তানের করাচিতে অবস্থিত হজরত মুফতি শফী (রহ.) এর দারুল উলুম মাদরাসায় শিক্ষকতার জন্য পাঠিয়ে দেন। হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (রহ.) এর খলিফা এবং পাকিস্তান নেজামে ইসলাম পার্টির শীর্ষ নেতা হজরত মাওলানা আতহার আলী (রহ.) ও মুফতি শফী (রহ.) এর অনুমতিক্রমে মাওলানা উবায়দুল হককে ঢাকায় নিয়ে এসে নেজামে ইসলাম পার্টির রচনা ও প্রকাশনা বিভাগের দায়িত্ব দেন। অল্পদিন পর পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক সরকার ভেঙে সব রাজনৈতিক দল বেআইনি ঘোষণা দিয়ে যাবতীয় রাজনৈতিক কার্যকলাপ বন্ধ করে দেয়। যার ফলে নেজামে ইসলাম পার্টির সব তৎপরতা বন্ধ হয়ে যায়।
অন্যদিকে এ সময় মাদরাসা-ই আলিয়া ঢাকায় সিনিয়র শিক্ষকের একটি পদ শূন্য হলে মাওলানা উবায়দুল হককে এ পদে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি তার শিক্ষক মাওলানা সাইয়েদ হোসাইন আহমদ মাদানী (রহ.) এর অনুমতিক্রমে মাদরাসা-ই আলিয়া ঢাকায় যোগ দেন। মাদরাসা-ই আলিয়া ঢাকায় তিনি ১৯৪৫ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত সহকারী শিক্ষক, ১৯৬৪ সাল থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত হাদিস বিভাগের লেকচারার, ১৯৭১ সাল থেকে ১৯৭৩ পর্যন্ত তফসির বিভাগে সহকারী মওলানা, ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত এডিশনাল হেড মাওলানা এবং ১৯৮০ সাল থেকে ১৯৮৫  পর্যন্ত হেড মাওলানা পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। ১৯৮৫ সালের ২ মে খতিব মাওলানা উবায়দুল হক সরকারি আলিয়া মাদরাসা থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৮৫ সাল থেকে বেশ কয়েক বছর ফরিদাবাদ এমদাদুল উলুম মাদরাসায়, ১৯৮৬ এবং ’৮৭ সাল এ দুই বছর চট্টগ্রামের পটিয়া মাদরাসায় এবং ১৯৮৭ থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সিলেট কাসিমুল উলুম দরগাহে শাহজালাল (রহ.) মাদরাসায় শায়খুল হাদিসের দায়িত্বে ছিলেন। এছাড়া ১৯৮৫ সাল থেকে কয়েক বছর তিনি ঢাকার ইসলামপুর ইসলামিয়া মাদরাসায় মুহতামিমের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৫ সাল থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ঢাকা আজিমপুরের ফয়জুল উলুম মাদরাসার শায়খুল হাদিস ও মুহতামিমের দায়িত্বে ছিলেন। জামেয়া এমদাদিয়া কিশোরগঞ্জ এবং কুমিল্লা কাসিমুল উলুম মাদরাসার মজলিসে শূরার সভাপতি, সিলেট জামিয়া সিদ্দিকিয়ার উপদেষ্টা পরিষদের প্রধান, মঈনুল উলুম হাটহাজারী, পটিয়া মাদরাসা এবং সিলেট জামেয়া কাসিমুল উলুম দরগাহ মাদরাসাসহ আরও অনেক ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মজলিসে শূরার সদস্য ছিলেন। ঢাকা আলিয়া মাদরাসার হেড মাওলানার দায়িত্বে থাকাকালীন তিনি ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিবের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ২০০৭ সালের ৬ অক্টোবর আমৃত্যু এ দায়িত্বে ছিলেন।
প্রকাশিত গ্রন্থ : খতিব মাওলানা উবাইদুল হক (রহ.) এর প্রকাশিত বেশ কিছু গ্রন্থ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যÑ ১. তরিখে ইসলাম, দুই খ-, ২. সিরাতে মোস্তফা, মূলগ্রন্থ উর্দু, এটা প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর জীবন ও চরিত্র নিয়ে রচিত। ৩. তাসহীলুল কাফিয়া; এটি আরবি ব্যাকরণের উচ্চতর গ্রন্থ কাফিয়ার উর্দু শরাহ। এটা মূলত মাদরাসার শিক্ষক-ছাত্রদের জন্য পাঠোপযোগী করে লেখা। ৪. আযহারুর আযহার। নুরুল আনওয়ারের দ্বিতীয় অংশের উর্দু শরাহ। এটাও মূলত মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকদের পাঠ্যবই। ৫. নসরু লফাওয়ায়িদ (শরাহ ও নোট শরহে আকাইদ, উর্দু)। ৬. আস সেক্বায়া। শরহে ওয়াক্বেয়া দ্বিতীয় খ-ের উর্দু অনুবাদ। ৭. শিয়া সুন্নি এখতেলাফ, মূলগ্রন্থ উর্দু, শিয়া-সুন্নি বিরোধ নামে বাংলায় অনুবাদ হয়েছে। ৮. শরহে শিকওয়া ও জওয়াবে শিকওয়া। ৯. কোরআন বুঝিবার পথ (বাংলা)। ১০. কোরআনে হাকীম আওর হামারী যিন্দেগী। রেডিও পাকিস্তানে পঠিত উর্দু কথিকা সমগ্র। এটা বাংলা অনুবাদ হয়েছে।
দেশের চলমান যে কোনো পরিস্থিতিতে খতিব উবাইদুল হকের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। তিনি ইসলাম, দেশ ও জাতির স্বার্থবিরোধী দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতেন। সরকার নিয়ন্ত্রিত মসজিদের খতিব হওয়ার পরেও তিনি সরকারের নানা ধরনের ইসলামবিরোধী কাজের প্রতিবাদ করতেন কঠোরভাবে। তার কথার মধ্যে কোনো ধরনের ভয়ভীতি বা জড়তা ছিল না। তাকে এ পদ থেকে অপসারণের চেষ্টাও করা হয়েছে বহুবার, তাতেও তিনি দমে যাননি, আরও দৃঢ়তার সঙ্গে ইসলামের সঠিক কথা তিনি মুসল্লিদের সামনে তুলে ধরতেন। এছাড়া তিনি এদেশের ইসলামী দলগুলোর অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করেছেন বিভিন্ন সংকটকালে। আজকের এ দুর্দিনে তার মতো খতিবের খুবই প্রয়োজন ছিল। ৬ অক্টোবর রাতে এক বন্ধুর বাসায় তার দাওয়াত ছিল। ফেরার পথে বুকে ব্যথা অনুভব করলে ল্যাবএইড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। 

সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected]