
প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, শুক্রবার, মে ৩, ২০১৯ | |
২৯ এপ্রিল ২০১৯, বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘের সভাকক্ষে ‘প্রবীণ জনগোষ্ঠীর কল্যাণে বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন’ শীর্ষক দিনব্যাপী এক কর্মশালার আয়োজন করা হয়। কর্মশালাটিতে বাংলাদেশে প্রবীণদের নিয়ে কাজ করছেন এরূপ প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিসহ সমাজসেবা অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ১ কোটি ৩০ লাখ, যা জনসংখ্যার ৭ শতাংশ। প্রবীণ বৃদ্ধির এ হার যদি অব্যাহত থাকে তবে ২০২৫ সাল নাগাদ দেশে প্রবীণের সংখ্যা হবে প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ এবং ২০৫০ সালে বাংলাদেশে প্রতি পাঁচজনে একজন প্রবীণ ব্যক্তি থাকবে। তখন দেশে প্রবীণের সংখ্যা হবে ২০ শতাংশ এবং শিশুর সংখ্যা হবে ১৯ শতাংশ। দিন দিন বাড়ছে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা, এ বিশাল সংখ্যক প্রবীণ জনগোষ্ঠীকে নিয়ে আমাদের নিজেদের, রাষ্ট্রের তথা সরকারের এখন থেকেই গুরুত্ব দিয়ে কাজ শুরু করা উচিত। বর্তমান সরকার প্রবীণবান্ধব। বর্তমান সরকারের নির্বাচনি ইস্তেহারেও প্রবীণকল্যাণে নানা পদক্ষেপের কথা গুরুত্বের সঙ্গে বলা হয়েছে। বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘও সরকারের নির্বাচনি ইশতেহারে দেওয়া অঙ্গীকারগুলো গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। সে লক্ষ্যে গেল সোমবার বাইগামের আমন্ত্রণে কর্মশালাটিতে যোগ দিয়েছিলেন সমাজসেবা অধিদপ্তর, পিকেএসএফ, হেল্পএইজ ইন্টারন্যাশনাল, জিজিডব্লিও-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, আহ্ছানিয়া মিশন, প্রবীণ বন্ধু ফাউন্ডেশন, বয়স্বী কল্যাণ সমিতি, বিডব্লিওএইচসি, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী কল্যাণ সমিতি, সিইএসআই, বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রসহ বাইগামের নির্বাহী সদস্যরা।
কর্মশালাটিতে চারটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়Ñ
প্রবীণদের আয় সৃষ্টিকারী কার্যক্রম
তৃণমূল পর্যায়ে প্রবীণদের স্বাস্থ্যসেবা
প্রবীণ নারী ও প্রতিবন্ধী প্রবীণদের জন্য করণীয়
প্রবীণবান্ধব গণসেবা ও আবাসন
দিনব্যাপী এ কর্মশালায় চারটি গ্রুপে ভাগ হয়ে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা নানা ধরনের দিকনির্দেশনামূলক ও গঠনমূলক বিষয়বস্তু তুলে আনেন। সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রতিনিধিরা প্রবীণদের জন্য আয়বর্ধক নানা ধরনের কাজের বর্ণনা দেন এবং তারা আশ্বস্ত করেন যদি কোনো প্রবীণ আয়বর্ধক কোনো কর্মকা- করতে চান, সমাজসেবা অধিদপ্তর তাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে। কর্মশালাটিতে সবক’টি প্রতিষ্ঠান একবাক্যে স্বীকার করে, প্রবীণদের জন্য এখন সবচেয়ে জরুরি যত দ্রুত সম্ভব প্রবীণ নীতিমালা ও পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইন বাস্তবায়ন। রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ২০১৫ সালে প্রবীণদের সিনিয়র সিটিজেন ঘোষণা দেওয়া হয়েছে; কিন্তু বাস্তবিক অর্থে সরকার ঘোষিত জ্যেষ্ঠ নাগরিকের কোনো ফলপ্রসূ প্রয়োগ কোথাও দৃশ্যত নয়। এ বিষয়টির ওপরও জোর দেন অনেকে। কর্মশালাটিতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘের সভাপতি ক্যাপ্টেন একেএম শামসুল হক। সংঘের মহাসচিব জরাবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. এএসএম আতীকুর রহমান বলেন, সরকারি পর্যায় থেকে একটি বিষয় অনেক দিন ধরেই বলে আসা হচ্ছে তা হলো, ইউনিভার্সেল সিটিজেনশিপ পেনশন ব্যবস্থা চালুকরণ। সরকার এখন এ বিষয়টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছে। সবার জন্য পেনশন এবং বীমা ব্যবস্থা চালু করা গেলে প্রবীণদের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো হতে পারে। প্রবীণ ব্যক্তি কারও দয়া চায় না। একজন ব্যক্তি যদি ৩০ বছর বয়স থেকে প্রতি মাসে কিছু কিছু টাকা সঞ্চয় করে এবং সেই সঞ্চিত অর্থের ওপর ভিত্তি করে বীমা ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে ৬০ বছর বয়সের পর এই বীমা থেকে সেই ব্যক্তি সুবিধা পেতে পারেন। আরও একটি বিষয় হলো, প্রতিটি মানুষকেই ৫০ বছরের পর তার জমিজমা এবং অন্যান্য সম্পত্তি ভবিষ্যতে কীভাবে ব্যবহৃত হবে সে সম্পর্কে সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। এই সম্পদের ভিত্তিতে সঞ্চয় গড়ে তোলা যেতে পারে। তাহলে প্রবীণ বয়সে তাকে কারও মুখাপেক্ষী হতে হবে না। প্রত্যেক প্রবীণের উচিত তার নিজের জন্য, বিশেষ করে তার স্ত্রীর নিরাপত্তার জন্য কিছু সঞ্চয় করে রাখা। স্ত্রীরা সাধারণত স্বামীদের চেয়ে গড়ে ৫ থেকে ৭ বছরের ছোট হয়। নারীরা বেশি দিন বাঁচে। এই বাঁচাটা তারা বাঁচে বিধবা হয়ে। আমাদের সমাজে বিধবারা বড়ই অসহায়। এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন তা হলো, বার্ধক্য কিন্তু দরিদ্রের সমস্যা নয়। বার্ধক্য হচ্ছে ধনীর সমস্যা। মানুষ যত বেশি বিত্তবান, যত বেশি শিক্ষিত তার বার্ধক্য তত বেশি কঠিন। প্রবীণের জন্য প্রফেশনাল কেয়ার দরকার। পরিবারে এই প্রফেশনাল কেয়ার নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। অনেকেই মনে করেন, বাবা-মা বৃদ্ধ বয়সে তার সঙ্গে থাকবে। কিন্তু তিনি কে? তিনি কি ডাক্তার? এখন তো তার ডাক্তারের সাহচর্য প্রয়োজন। তিনি কি সেই সাহচর্য দিতে পারবে? তাহলে আবেগপ্রবণ হয়ে তাকে বাড়িতে কেন রাখতে হবে। শেষ বয়সে ছেলেমেয়েরা তাকে দেখবেÑ আমাদের দেশে এমন একটি ধারণা প্রচলিত আছে। কিন্তু এটা একটি ভ্রান্ত ধারণা মাত্র। স্বনির্ভর এবং আত্মনির্ভর বার্ধক্যের জন্য আমরা প্রচারণা চালাচ্ছি। বার্ধক্যের প্রস্তুতির জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আছে। আমাদের সমাজে নবীনরা প্রবীণদের দেখলে পালায়। কারণ তারা মনে করে, প্রবীণরা বেশি কথা বলবে। তারা বেশি আইন দেখাবে, ধর্মের কথা বলবে। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে, আজকের প্রবীণরাই আমাদের বর্তমান সমাজের নির্মাতা। তাই তাদের শ্রদ্ধা করতে হবে, সম্মান দেখাতে হবে। সময়ের চাহিদার সঙ্গে আমাদের তাল মেলাতে হবে। অন্যথায় আমরা সমাজ বিবর্তনের ধারা থেকে পিছিয়ে পড়ব।
![]() সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected] |