logo
প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, সোমবার, মে ৬, ২০১৯
সহ-আয়োজক হতে চায় সৌদি আরব!
স্পোর্টস ডেস্ক

এই তো সেদিন ১০ ঘণ্টার মধ্যে ৩৭ জনের শিরশ্চেদ করেছে সৌদি আরব। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ইয়েমেনে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের জন্যও দায়ী দেশটি। সাংবাদিক জামাল খাসোগির হত্যার পেছনে দেশটির সরকারের সরাসরি হাত থাকার কথাও বিশ্বে আলোড়ন তুলেছিল। তাছাড়া দেশটির মানবাধিকার কর্মীদের ওপর অব্যাহত অত্যাচারের অভিযোগ তো আছেই। ছোট প্রতিবেশী রাষ্ট্র কাতারের ওপর আর্থিক, বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক অবরোধ আরোপে মূল নেতৃত্ব দিয়েছে এই সৌদি আরবই। এতসব অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রীড়াযজ্ঞের সহ-আয়োজক হওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে সৌদি আরব। যেদিন থেকে মধ্যপ্রাচ্যের প্রথম দেশ হিসেবে কাতারকে ২০২২ বিশ্বকাপের আয়োজক নির্বাচিত করা হয়েছে, সেদিন থেকেই কাতারের কাছ থেকে সম্মানজনক এ অবস্থান কেড়ে নিতে নানান কৌশল খাটিয়ে যাচ্ছে সৌদি। আর এক্ষেত্রে তারা বিশ্বফুটবলের অভিভাবক ফিফার কাছ থেকেও সহায়তা পাচ্ছে। অন্তত কিছু ম্যাচ যেন নিজেদের মাটিতে আয়োজন করা যায়, সেজন্য অব্যাহত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দেশটি। কিন্তু সৌদির জন্য ফিফার এত দরদ কেন? আসলে ফিফার প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনো হচ্ছেন এ পরিকল্পনার মাস্টার মাইন্ড।
ফিফা বস অনেক আগে থেকেই বলে আসছেন, আগামী বিশ্বকাপ হবে ৪৮ দলের, ৩২ দলের নয়। যদিও শুরুতে বলা হয়েছিল ২০২৬ সালের বিশ্বকাপ হবে ৪৮ দলের। কিন্তু তার আগেই এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চান ফিফাপ্রধান। কারণ ওই সৌদি আরব! যদিও এ কৌশল এতদিন অজানা ছিল সবার কাছেই। কিন্তু ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রবন্ধে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ৪৮ দলের বিশ্বকাপ বাস্তবায়ন করতে হলে ফিফার সমীক্ষা মতে, কাতারের বাইরে আরও অন্তত দুটি স্টেডিয়ামে খেলার আয়োজন করতে হবে। আর এখানেই যত বিপত্তি। কেননা কাতার বলে দিয়েছে, তারা ৪৮ দলের বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত নয়। তাই এটা এখন শুধু পরিকল্পনার পর্যায়েই আছে। ৬ জুন প্যারিসে অনুষ্ঠেয় ফিফার পরবর্তী কংগ্রেসে এটা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, কাতারের ওপর অবরোধ আরোপের প্রায় ২ বছর পর। ফিফার এক সমীক্ষা অনুযায়ী, ৪৮ দলের বিশ্বকাপ আয়োজন সম্ভব হলে বাড়তি ৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করা সম্ভব।
২০০-এর বেশি দেশের ফুটবল ফেডারেশনের প্রেসিডেন্টরা নিশ্চয়ই বাড়তি অর্থ আয়ের এমন সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইবেন না। ফলে ফিফার আগামী কংগ্রেসে ভোটাভুটি হলে অবশ্যই ৪৮ দলের বিশ্বকাপের প্রস্তাব পাস হবেÑ এ কথা হলফ করেই বলা যায়। কিন্তু এ অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক যে অবস্থা, তাতে কাতারের সঙ্গে যোগ হতে পারে ওমান ও কুয়েত। কারণ এ দুই দেশই কাতারের ওপর আরোপিত অবরোধের বাইরে রেখেছে নিজেদের। কিন্তু ওমান ‘প্রস্তুত নয়’, আর কুয়েত আগ্রহই দেখাচ্ছে না। তবে ফিফার সমীক্ষা বলছে, এ অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থা এবং কাতারের ওপর বাহরাইন, মিশর, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের আরোপিত অবরোধ, আসন্ন বিশ্বকাপে এ দেশগুলোর কোনোটি যদি সহ-আয়োজক হতে চায়, তাহলে অবরোধ তুলে নিতে হবে। এটা বাস্তবায়ন হলে চুক্তির পথ খুলে যেতে পারে। অর্থাৎ অবরোধ তুলে নিক সৌদি (যা কাতারের তেমন ক্ষতিসাধন করতে পারেনি) এবং বিনিময়ে তারা (সৌদি ও তার সঙ্গীরা) বিশ্বকাপের সহ-আয়োজক হতে পারবে। এখানে দেখার বিষয় হচ্ছে, যদি সত্যিই সৌদি ও তার সঙ্গীদের সঙ্গে কাতারের চুক্তি স্বাক্ষর হয়েই যায়, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির দূত হিসেবে দেখা হবে ফিফাপ্রধানকে। এজন্য তিনি এমনকি নোবেল পুরস্কারও পেতে পারেন। ফলে ফুটবল বিশ্বকাপের মাধ্যমে সৌদি আরবকে উদারীকরণের বৈশ্বিক পরিকল্পনাও বাস্তবায়ন হতে পারে। কিন্তু ফিফাপ্রধানের উদ্দেশ্য কি আসলেই এত সরল? মোটেই নয়, বরং তার উদ্দেশ্য তার সবচেয়ে বড় অর্থদাতাদের খুশি করা। কিন্তু যদি সৌদি আরব তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়, তাহলে আদতে ফুটবলের বৈশ্বিক গ্রহণযোগ্যতা অনেকটাই কমে যাবে বলে ধারণা করছেন ফুটবল বিশেষজ্ঞরা। কারণ সৌদি যতই অর্থ ঢালুক, মানবাধিকারের প্রশ্নে তাদের প্রতি সমর্থন নেই অধিকাংশ মানুষের। সৌদি যদি সত্যিই সহ-আয়োজক হয়েও যায়, তাহলে বিশ্বের কাছে যে বার্তা যাবে তা হলো, যত ইচ্ছা পাশবিক হও। ক্ষমতাবানদের কোনো সাজা হবে না।

সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected]