প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, সোমবার, মে ৬, ২০১৯ | |
দুয়ারে কড়া নাড়ছে পবিত্র রমজান। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় এ সময় নিত্যপণ্যসহ বেশ কিছু পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। চাহিদা বাড়লেও বাজারে জোগানের কমতি থাকে না। সরকারের সংস্থাগুলোর হিসাবে এসব পণ্যের আমদানি আর এলসিও খোলা হয়েছে চাহিদা অনুযায়ী। তারপরও কেন দাম বাড়ে এ নিয়ে মতবিরোধ ক্রেতা-বিক্রেতাদের। অনেক পণ্যের দাম নাগালের বাইরে থাকলেও নেই প্রয়োজনীয় বাজার মনিটরিং এমন অভিযোগ ক্রেতাদের আর বিক্রেতারা বলছেন, এ সময় চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম বাড়ছে। এতে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। আমদানি আর এলসির পরিসংখ্যান বলছে, বাজারে পণ্যের সরবরাহের কোনো ঘাটতি নেই। এমনকি কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে চাহিদার চেয়ে বেশি সরবরাহ আছে। বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের সূত্রে জানা গেছে, ভোজ্যতেলের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ১৮ লাখ মেট্রিক টন। আর শুধু রোজায় চাহিদা ৩ লাখ মেট্রিক টন। গেল অর্থবছরে ভোজ্যতেল আমদানি হয় ২১ দশমিক ১৬ লাখ মেট্রিক টন। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের মার্চের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ১৪ দশমিক ৬৯ লাখ মেট্রিক টন তেল আমদানি করা হয়েছে। আলোচ্য সময় আমদানির জন্য ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়েছে ১৭ দশমিক ৬৬ লাখ মেট্রিক টন। টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে খোলা সয়াবিন তেল খুচরা মূল্য প্রতি লিটার ৮০ থেকে ৮৪ টাকা, বোতলজাত তেলের ১০০ থেকে ১০৬ টাকা এবং পামঅয়েলের ৬০ থেকে ৬৬ টাকা। বছরে চিনির চাহিদা প্রায় ১৮ লাখ টন হলেও রোজায় চাহিদা ৩ লাখ মেট্রিক টন। এ চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে চলতি অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত ১০ দশমিক ৭৩ লাখ মে. টন চিনি আমদানি করা হয়েছে। একই সময় এলসি খোলা হয়েছে ১২ দশমিক ৪৭ লাখ মেট্রিক টনের। রোজায় পেঁয়াজের চাহিদা ৫ লাখ মেট্রিক টন। এ চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে আমদানি করা হয়েছে ৭ দশমিক ২৮ লাখ মেট্রিক টন।
আমদানির লক্ষ্যে ৮ লাখ মেট্রিক টনের এলসি খোলা হয়েছে। দেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা ২৪ লাখ মেট্রিক টন। বাকি চাহিদা পূরণ হয় দেশীয় উৎপাদনে।
বছরে ছোলার চাহিদা ১ লাখ মেট্রিক টন হলেও শুধু রমজানেই এ চাহিদা ৮০ হাজার মেট্রিক টন। এ পর্যন্ত আমদানি করা হয়েছে ৮৯ হাজার মেট্রিক টন। একই সময় আমদানির লক্ষ্যে ৮৪ হাজার মেট্রিক টনের এলসি খোলা হয়েছে। ৭৫ থেকে ৯০ টাকা দরে খুচরা বাজারে ছোলা বিক্রি হচ্ছে। খেজুরের চাহিদা বছরে ২৫ হাজার মেট্রিক টন হলেও শুধু রোজাতেই এ চাহিদা ১৮ হাজার মেট্রিক টন। চাহিদা মেটানোর জন্য এরই মধ্যে প্রায় ১৩ হাজার মেট্রিক টন আমদানি করা হয়েছে। আর এলসি খোলা হয়েছে ২১ হাজার মেট্রিক টন। মসুর ডালের বার্ষিক চাহিদা ৪ দশমিক ৫ লাখ মেট্রিক টন। রোজাতে চাহিদা ৮০ হাজার মেট্রিক টন। এ পর্যন্ত ১ দশমিক ৮৭ লাখ মেট্রিক টন মসুর ডাল আমদানি করা হয়েছে। এলসি খোলা হয়েছে ১ দশমিক ৯৬ লাখ মেট্রিক টন।
চাহিদার বিপরীতে সরবরাহের এমন হিসাবের সঙ্গে মিল নেই বাজারে। রোববার কারওয়ান বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২৬ থেকে ২৮ টাকায়। ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২০ থেকে ২২ টাকায়। পেঁয়াজের পাইকারি বিক্রেতা মাসুক বলেন, মাস দুয়েক আগে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৮ থেকে ২০ টাকায়। এখন কিছুটা বেড়েছে। দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২০ থেকে ২২ টাকায়। মূলত রমজানের আগে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম কিছুটা বাড়ে। একই কথা জানান, কারওয়ান বাজারের আরেক বিক্রেতা শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, রমজানের অন্যান্য পণ্যের তুলনায় পেঁয়াজের চাহিদা বেশি থাকে। ক্রেতারাও বেশি ক্রয় করেন। মূলত এ কারণেই দামের ওপর প্রভাব পড়ে। এ সময় বেড়েছে রসুনের দাম। পাইকারি বাজারে এক সপ্তাহ আগে ৯০ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ১০৫ টাকা কেজিতে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি রসুন ১১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি বাজারে আদা ৯০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে দাম পড়ছে ১৩০ টাকা। রোজার অন্যতম ভোগ্যপণ্য ছোলার কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা। সপ্তাহ খানেক আগে ছোলা বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়। মসুর ডাল ৬০ থেকে ৯০, মটর ৪০, বেসন ৬৫ থেকে ১০০ ও চিনি (সাদা) ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। খেজুর প্রকারভেদে ২২০ টাকা থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারে ধানমন্ডি থেকে আসা সিদ্দিকুর রহমান জানান, স্থানীয় বাজারগুলোতে পণ্যের দাম অনেক বেশি। কারওয়ান বাজারে যে পণ্য ৫০ টাকায় পাওয়া যায় স্থানীয় দোকান বা বাজারে তা ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। কম দামের আশায় কারওয়ান বাজারে আসলেও এখানে অনেক পণ্যের দাম বেড়েছে। বিশেষ করে রমজানের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর দাম বেশি বেড়েছে। এমন অনেক পণ্য আছে সেগুলোর দাম এখনই নাগালের বাইরে। তিনি বলেন, এ সময়ে বাজারে পণ্যের দাম বাড়ে। সরকার এ বিষয়ে অবগত থাকলেও কার্যত কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করে না। এমনকি বাজার মনিটরিংয়ের মাধ্যমে বাজারের পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণেরও কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না।
এদিকে রমজানে চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণে চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন খোলা বাজারে চিনি (লাল) বিক্রি কার্যক্রম শুরু করেছে। ৬৫ টাকা কেজিতে খোলা বাজারে পাওয়া যাবে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ও রমজানকে সামনে রেখে খোলা বাজারে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম শুরু করেছে। বিক্রি করা হচ্ছে মসুর ডাল, চিনি, সয়াবিন তেল, ছোলা ও খেজুর। এ বছর প্রতি কেজি চিনি ৪৭ টাকা, মসুর ডাল ৪৪ টাকা এবং সয়াবিন তেল লিটার প্রতি ৮৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। ছোলা পাওয়া যাবে ৬০ টাকা কেজিতে এবং ১৩৫ টাকা কেজিতে খেজুর। একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ ৫ লিটার তেল কিনতে পারবে। খেজুর কিনতে পারবে ১ কেজি করে। ছোলা, চিনি ও ডাল ৪ কেজি করে। শেষ রোজা পর্যন্ত শুক্রবার বাদে সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতে চলবে টিসিবির খোলা বাজারে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম।
এদিকে নিত্যপণ্যের পাশাপাশি বেড়েছে সবজির দাম। কারওয়ান বাজারে এক সপ্তাহ আগে বেগুন বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকায়, বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। পেঁপে ৬০ টাকা, শসা ৫০, টমেটো ৪০ ও করলা ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা যায়। এছাড়া বাসাবো কাঁচাবাজারে পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা, শসা ৬০, ঢ্যাঁড়শ ৪৫, কাকরোল ৬৫, পটোল ৬০, বরবটি ৬০, লতি ১৩০ ও কাঁচামরিচ মানভেদে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এদিকে কারওয়ান বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকায় আর ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকায়।
![]() সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected] |