logo
প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, মঙ্গলবার, মে ৭, ২০১৯
বাড়ছে রোহিঙ্গাদের ভরণপোষণ খরচ
মৌসুমী ইসলাম

-২০ মাসে এনজিওগুলোর ব্যয় আড়াই হাজার কোটি টাকা
-অর্থ ব্যবহারে স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন

বাড়ছে রোহিঙ্গাদের ভরণপোষণ ব্যয়। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিক রোহিঙ্গাদের সহায়তায় নানা খাতে ব্যয় করছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও)। ২০ মাসে ব্যয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা। দেশি-বিদেশি ১৬৮ এনজিও ৮৩৬ প্রকল্পে ব্যয় করেছে এ অর্থ। এনজিও ছাড়াও জাতিসংঘের নানা সহায়তাও পাচ্ছেন আশ্রিত ১০ লাখ রোহিঙ্গা। তবে রোহিঙ্গাদের জন্য যে সহায়তা আসছে তার শতভাগ ব্যবহার করা হচ্ছে কি না তা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। অনেক এনজিও ব্যবস্থাপনা ব্যয় বাবদ সরিয়ে রাখছে বড় অঙ্কের অর্থ।

এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর উপপরিচালক মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন জানান, রোহিঙ্গাদের ভরণপোষণে ব্যয় বাড়ছে। তবে সহায়তা কার্যক্রমও থেমে নেই। দেশি-বিদেশি এনজিও এগিয়ে এসেছে। এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৯ সালের এপ্রিল পর্যন্ত রোহিঙ্গা নাগরিকদের ভরণপোষণে ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ৩৬৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এ সময় ১২৩ দেশি এনজিও ৫৮৯ প্রকল্পের মাধ্যমে ব্যয় করেছে ১ হাজার ১০০ কোটি ৩০ লাখ টাকা। আর আন্তর্জাতিক ৪৫ এনজিও ২৪৭ প্রকল্পে ব্যয় করেছে ১ হাজার ২৬৮ কোটি ১০ লাখ টাকা। আর এপ্রিল মাসের ২৪ দিনে দেশি ১৪ এনজিও ১৬ প্রকল্পে ব্যয় করেছে ২১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। এ সময় আন্তর্জাতিক আট এনজিও ১৪ প্রকল্পে ব্যয় করেছে ৪২ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। এপ্রিলে ২২ এনজিও ৩০ প্রকল্পে ব্যয় করেছে ৬৪ কোটি ৫ লাখ টাকা। যতই দিন যাচ্ছে বাড়ছে ব্যয়।

যেসব খাতে অর্থ ব্যয় : রোহিঙ্গাদের খাবার সরবরাহেই ব্যয় হচ্ছে বেশি অর্থ। এছাড়া পরিচালনা করা হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা কার্যক্রম। তবে শিক্ষার ক্ষেত্রে শুধু আরাকান ভাষায় পাঠদান করার নির্দেশনা দিয়েছে এনজিও ব্যুরো। এছাড়া স্যানিটেশন কার্যক্রমও পরিচালনা করা হচ্ছে। চলতি বছরের মার্চ মাসে ৩০ এনজিওর এসব কর্মকা- পরিচালনার অনুমোদন দেয় এনজিও ব্যুরো। তার মধ্যে রয়েছে ফিল্ড হাসপাতাল, গভীর নলকূপ, লবণাক্ত পানি মিঠা পানিতে রূপান্তর, চক্ষুশিবির প্রতিষ্ঠা, ৫০০ বাঁশের শেল্টার নির্মাণ, বিদ্যুতায়ন, বর্জ্য নিরসন, গরমে বস্ত্র বিতরণ কার্যক্রম। এছাড়া রোজায় ইফতার সামগ্রীও বিতরণ করতে একটি এনজিও প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দিয়েছে এনজিও ব্যুরো।  

বাড়ছে অনিয়ম : অনিয়ম এবং দুর্নীতির নানা অভিযোগে পাঁচ এনজিওর কর্মকা- বন্ধ করে দিয়েছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা এনজিও ব্যুরো। বিশেষ করে স্মল কাইন্ডনেস অব বাংলাদেশ, এসকেবি এবং বাংলাদেশি চাষি কল্যাণ সমিতির কর্মকা- পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া মুসলিম এইড, ইসলামী এইড এবং ইসলামী রিলিফের কর্মকা- কক্সবাজার এলাকায় বন্ধ করে দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। পুলিশের গোপন প্রতিবেদন এবং নিয়মবহির্ভূত কাজে জড়িত থাকায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এছাড়া ৮ থেকে ১০ এনজিওর কর্মকা- মনিটরিং করছে এনজিও ব্যুরো। সংস্থাটি বলছে, রোহিঙ্গাদের জন্য বিদেশ থেকে অর্থ এনে ঠিক কোন কাজে ব্যবহার হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন মনিটরিং করছে। পাশাপাশি এনজিও ব্যুরোর কয়েকটি টিম অর্থ ব্যবহারে খোঁজখবর রাখছে।  
অর্ধশত এনজিওর আবেদন প্রক্রিয়াধীন : নতুন করে নিবন্ধন পেতে এনজিও ব্যুরোতে জমা পড়েছে প্রায় অর্ধশত আবেদন। জানা গেছে, রোহিঙ্গা এলাকায় কর্মকা- পরিচালনা করাই এসব এনজিওর মূল উদ্দেশ্য। আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে এনজিও ব্যুরো। ছাড়পত্রের ক্ষেত্রে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ছাড়পত্র প্রয়োজন। এনজিও ব্যুরো সূত্র জানায়, নতুন আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই করে তারপরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে লক্ষণীয়, এখন নতুন করে কোন ধরনের এনজিও দরকার এবং তাদের কর্মপরিধি পর্যালোচনা করা হবে। অর্থ ব্যবহারের সব দিক খতিয়ে দেখা হবে।  
মাসে ব্যয় কত : রোহিঙ্গাদের জন্য মাসে কত অর্থের প্রয়োজন তা নিরূপণ হয়নি। তবে মার্চ মাসে রেডিও ফ্রি এশিয়াকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশ প্রতি মাসে খরচ হয় ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকারও বেশি। বলা হয়, বর্তমানে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের পেছনে প্রতি মাসে ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যবহার করছে। বছরে এ টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। ওদিকে এনজিও প্রতিষ্ঠান কোস্টের তথ্য বলছে, রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থাগুলোর কাছে এ পর্যন্ত ৬৮২ মিলিয়ন ডলার বা ৫ হাজার ৭৯৭ হাজার কোটি টাকার তহবিল এসেছে। এর ফলে এ তহবিল থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মাথাপিছু সাহায্যের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৭ হাজার টাকা।
স্বচ্ছতা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন : এনজিও ব্যুরোর অভ্যন্তরীণ অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রোহিঙ্গাদের জন্য যে সহায়তা আসছে তার শতভাগ ব্যবহার হচ্ছে কি না তা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। অনেক এনজিও ব্যবস্থাপনা ব্যয় বাবদ সরিয়ে রাখছে বড় অঙ্কের অর্থ। এছাড়া যে পরিমাণ সহায়তা দেওয়ার অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে তা নিশ্চিত করা হচ্ছে না। বিরাট কর্মযজ্ঞ হওয়ার কারণে মনিটরিং করা কঠিন হচ্ছে। এনজিও ব্যুরো সূত্র জানায়, এনজিওগুলোর অর্থের উৎস এবং কর্মকা- পর্যবেক্ষণে স্থানীয় প্রশাসন নজরদারি বাড়িয়েছে। সন্ত্রাসী অর্থায়ন ঠেকাতেও কর্মপন্থা হাতে নেওয়া হয়েছে। রোহিঙ্গা এলাকায় কর্মরত এক এনজিওর কর্ণধার বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য এ পর্যন্ত এনজিওগুলোর কাছে যে অর্থ এসেছে তার সঠিক বণ্টন নিশ্চিত হয়নি।
এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর উপপরিচালক মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, তদারকি করতে সার্বক্ষণিক জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে এনজিও ব্যুরো। কোনো ধরনের অপচয় যাতে না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। তিনি বলেন, ছাড়কৃত অর্থ বা খাদ্যসামগ্রী জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বণ্টন করা হয়। গোয়েন্দা সংস্থার যদি কোনো নেতিবাচক প্রতিবেদন পাওয়া যায়, তবে অর্থছাড় বন্ধ করা হয়। 

সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected]