
প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, বৃহস্পতিবার, মে ৯, ২০১৯ | |
মন ছুঁয়ে যাওয়া গায়কীতে যাদের জীবনের অনেকটা সময় মাতিয়ে রেখেছিলেন, বিদায়বেলায় সেই শ্রোতা, শুভাকাক্সক্ষী, সহকর্মী, স্বজনদের ভালোবাসার সৌরভে ভাসলেন সুবীর নন্দী। প্রয়াত সংগীতশিল্পী সুবীর নন্দীকে শ্রদ্ধা জানাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানাতে হাজির হয়েছিলেন রাজনৈতিক নেতা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, আত্মীয়স্বজন, সহকর্মী ও ভক্ত-শুভাকাক্সক্ষীরা। খবর বিডি নিউজের।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের এ আয়োজনে শ্রদ্ধা জানাতে হাজির হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মো. আখতারুজ্জামান, প্রোভিসি মুহাম্মদ সামাদ, জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, গীতিকার রফিকুজ্জামান, সঙ্গীতশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ, এন্ড্রু কিশোর, রবি চৌধুরী, ফকির আলমগীর, নকিব খান, ক্লোজআপ ওয়ান তারকা নিশিতা বড়ুয়াসহ আরও অনেকে।
উপস্থিত ছিলেন সুবীর নন্দীর স্ত্রী পূরবী নন্দী ও মেয়ে ফাল্গুনী নন্দী। স্বামীকে হারিয়ে শোকাতুর পূরবী গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলতে পারেননি।
মেয়ে ফাল্গুনী নন্দী বলেন, ‘আমাদের কেউ আর রইল না। আমাকে সারাক্ষণ আগলে রাখতেন বাবা। কলিজার চেয়েও বেশি ভালোবাসতেন। আমার একটু কষ্ট হলে পাগল হয়ে যেতেন।’ বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
বাবার সঙ্গে কাটানো শেষ ২৪ দিনের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘বাবা জীবনের শেষ দিনগুলোতে আমাকে অনেক কিছু শিখিয়ে গেছেন। লড়াই করতে শিখিয়েছেন। শেষ ২৪টা দিন বাবা জীবনের জন্য মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করেছেন। তার সার্বক্ষণিক সঙ্গী হিসেবে সেটা খুব কাছ থেকে দেখলাম। তার এই লড়াই যেন তিনি আমার জন্য শিক্ষা হিসেবে রেখে গেলেন। এখন মনে হয় আমি বাবাকে ছাড়া এক্ইা চলতে পারব।’
গুণী এ শিল্পীর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা বলেন, ‘সুবীরদা শিল্পী হিসেবে যেমন সবার কাছে প্রিয় ছিলেন তেমনি মানুষ হিসেবেও প্রিয় ছিলেন। বাংলাদেশে আমার মনে হয় না কোনো শিল্পী আছেন যিনি বলতে পারবেন সুবীরদার সঙ্গে কোনো মনোমালিন্য হয়েছে। তিনি সর্বজনপ্রিয় একজন মানুষ ছিলেন সত্যিকার অর্থে শিল্পী বলতে আমরা যা বুঝি।’ তিনি বলেন, ‘এত অসময়ে এবং কোনো রকম প্রস্তুতি না দিয়েই চলে গেলেন। আমরা কল্পনাও করতে পারিনি হঠাৎ করেই এভাবে চলে যাবেন।’
সঙ্গীতশিল্পী রফিকুল আলম বলেন, ‘সুবীর নন্দীর সাংস্কৃতিক জীবনের সাধনা এবং ওনার ব্যক্তিগত জীবন সবকিছু মিলেই আমরা বলতে পারি বাংলাদেশে খুব অল্প সংখ্যক শিল্পী এমন ডেডিকেশনের মাধ্যমে গানকে ভালোবেসে সর্বজন শ্রদ্ধেয়ভাবে বিদায় নিলেন। ওনার গানগুলো হয়তো অমর হয়ে থাকবে কিন্তু বাঙালি সংস্কৃতির যে পরিচয় এটার জন্য সুবীর নন্দীর অবদান ছিল অন্যতম। সুবীর নন্দীর এই জাগতিক কোলাহল থেকে জাতি বঞ্চিত হবে।’
শিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায় বলেন, ‘সঙ্গীতের প্রতি তার কমিটমেন্ট, ভালোবাসা, আগ্রহ এবং শ্রদ্ধাবোধের কারণেই তাকে এত মানুষ ভালোবাসে। একটা জিনিস এমনি এমনি সুন্দর হয় না। সুন্দর হয় কখন যখন সুন্দরভাবে সবাইকে সাজানো হবে। সাজানোর ক্ষমতা তার থাকে যে এটাকে ধারণ করতে পারে। সুবীরের মধ্যে সেই ধারণক্ষমতা ছিল।’
নাট্যকার রামেন্দু মজুমদার বলেন, ‘সুবীর নন্দীর চলে যাওয়াতে আধুনিক বাংলা গানের ক্ষতি হলো। তিনি গানকে অনুভব করতেন এবং ধারণ করতেন। যার কারণে সবার হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। তিনি গানের মধ্য দিয়েই বেঁচে থাকবেন।’
শিল্পী শুভ্র দেব বলেন, ‘শিল্পী হিসেবে সুবীরদার সবচেয়ে বড় যে বিষয়টি ছিল তা হলো যেকোনো ধরনের গান ওনার কণ্ঠে মানাত। শুদ্ধ সঙ্গীত চর্চার দিক দিয়ে যদি আমরা চিন্তা করি তাহলে হাতে গোনা কয়েকজনের মধ্যে উনি ছিলেন।’
শেষবারের মতো এফডিসিতে : দুপুর পৌনে ১টায় এফডিসিতে নেওয়া হয় নন্দিত এ শিল্পীর মরদেহ। সেখানে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হাজির হয়েছিলেন পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার, সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম খোকন, বাংলাদেশ শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান, অভিনেতা আলমগীর, পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান, ওমর সানি, জয় চৌধুরী, অরুণা বিশ্বাস, ড্যানি সিডাক, পরিচালক শাহ আলম কিরণ, পরিচালক গাজী মাহাবুব, এফডিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা হিমাদ্রি বড়ুয়াসহ আরও অনেকেই।
অভিনেতা আলমগীর বলেন, ‘উনি সংগীতে আসার আগে থেকেই আমার সঙ্গে পরিচয় ছিল। উনার চলে যাওয়াটা ইন্ডাস্ট্রির জন্য, অবশ্যই বাংলা গানের জগতে অপূরণীয় ক্ষতি। উনি আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন যতদিন বাংলা গান থাকবে। যেখানেই থাকুক দাদা ভালো থাকুক।’
আরেক অভিনয়শিল্পী অরুণা বিশ্বাস বলেন, ‘এত বড় একজন শিল্পী; উনার গান পছন্দ করেন না এমন মানুষ বাংলাদেশে খুঁজে পাওয়া যাবে না। উনি ঈশ্বরের সৃষ্টি। আমার মনে হয়, ঈশ্বর উনাকে বেশি ভালোবাসতেন। উনি বাঙালির কান তৈরি করে দিয়ে গেছেন। শুদ্ধ ধারার গান করে গেছেন। উনার প্রতি অশেষ শ্রদ্ধা।’
শ্রদ্ধা শেষে তার মরদেহ নেওয়া হয় সবুজবাগের বরদেশ্বরী কালী মন্দিরের শ্মশানে। বিকালে সেখানেই তার শেষকৃত্য হয়।
সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে মারা যান সুবীর নন্দী। বুধবার ভোরে তার মরদেহ সিঙ্গাপুর থেকে ঢাকায় আনা হয়।
![]() সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected] |