logo
প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, শুক্রবার, মে ১০, ২০১৯
রমজানের চেতনায় বাবা-মায়ের প্রতি দায়িত্ব
মুফতি মূসা আল হাবীব

পবিত্র মাহে রমজানে আল্লাহর ভালোবাসায় সিয়াম সাধনায় সফল হতে হলে আল্লাহর বান্দাদের হক আদায়ের ব্যাপারেও যতœশীল হতে হবে। বান্দার হকের মধ্যে সর্বাগ্রে আসে মা-বাবার হক বা সন্তানের ওপর বাবা-মায়ের প্রতি দায়িত্ব। কারণ পৃথিবীতে মানুষের আগমন ও অস্তিত্ব লাভ করার মূল মাধ্যম হলো বাবা-মা। তাই মানুষের প্রতি মানুষের যত দয়া ও অনুগ্রহ আছে, তন্মধ্যে সবচেয়ে বড় দয়া ও অনুগ্রহ হলো সন্তানের প্রতি বাবা-মায়ের দয়া ও অনুগ্রহ। এজন্যই কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা তার নিজের অধিকারের পরই বাবা-মায়ের অধিকারের কথা উল্লেখ করেছেন। কোরআনে কারিমে বর্ণিত হয়েছে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করো না এবং বাবা-মায়ের সঙ্গে সদ্ব্যবহার কর। (সূরা বনী ইসরাঈল : ২৩) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম কুরতুবী (রহ.) বলেন, আল্লাহতায়ালা বাবা-মায়ের সম্মান এবং তাদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করাকে নিজের ইবাদতের সঙ্গে বর্ণনা করে সন্তানের ওপর তা অপরিহার্য করেছেন। যেমন অন্য আয়াতে আল্লাহতায়ালা নিজের শোকরিয়ার সং্গে বাবা-মায়ের শোকরিয়াকে 

একত্রিত করে তা আদায় করা অপরিহার্য করেছেন। কোরআনে কারিমে বর্ণিত হয়েছে তোমরা আমার এবং তোমাদের বাবা-মায়ের শোকরিয়া আদায় কর। (সূরা লোকমান : ১৪)
এতে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, ইসলামে আল্লাহতায়ালার ইবাদতের পর বাবা-মায়ের সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করা যেমন জরুরি, অনুরূপভাবে বাবা-মায়ের কৃতজ্ঞতা আদায় করা ও তাদের সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করা সন্তানের জন্য জরুরি। (তাফসিরে কুরতুবি ৫/৫৭৫)
তবে সন্তানের ওপর বাবার থেকে মায়ের অধিকার এবং দায়িত্ব ও কর্তব্য বেশি। কারণ সন্তানের জন্য বাবার থেকে মায়ের কষ্ট বেশি হয়ে থাকে। যেমন : গর্ভধারণের কষ্ট, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রসবের কষ্ট, দুগ্ধপান করানো এবং সন্তানের সেবাযতেœ নিয়োজিত থাকার কষ্ট। এসব কষ্ট বাবাকে করতে হয় না। 
এ ব্যাপারে হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার কাছে উত্তম আচরণ পাওয়ার সবচেয়ে উপযুক্ত ব্যক্তি কে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমার মা। সাহাবি আবার প্রশ্ন করলেন, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সাহাবি আবার প্রশ্ন করলেন, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সে সাহাবি আবার প্রশ্ন করলেন তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার বাবা। তারপর তোমার নিকটতম আত্মীয়স্বজন। (সহিহ বোখারি : ২/৮৮৩) 
আল্লামা ইবনে কাছীর (রহ.) এ হাদিস উল্লেখ করে বলেছেন, এ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সন্তানের ওপর মায়ের অধিকার বাবার থেকে তিনগুণ বেশি। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মায়ের কথা তিনবার উল্লেখ করেছেন, চতুর্থবারে বাবার কথা উল্লেখ করেছেন।
অন্য এক হাদিসে আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, বাবা-মায়ের সন্তুষ্টির মধ্যেই আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং বাবা-মায়ের অসন্তুষ্টির মধ্যেই আল্লাহর অসন্তুষ্টি নিহিত। (তিরমিযি শরিফ-২/১২) 
অন্যত্র হজরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা.) কে জিজ্ঞেস করলেন, সন্তানের ওপর বাবা-মায়ের দায়িত্ব কী? রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তারা উভয়েই তোমাদের জান্নাত এবং জাহান্নাম। (ইবনে মাজাহ, পৃ-২৬০) 
এ হাদিসের উদ্দেশ্য হচ্ছে, তাদের আনুগত্য ও সেবাযতœ জান্নাতে নিয়ে যায় এবং তাদের সঙ্গে অসৎ আচরণ ও তাদের অসন্তুষ্টি জাহান্নামে পৌঁছে দেয়। 
সন্তানের ওপর বাবা-মায়ের ১৪টি হক রয়েছে।
তন্মধ্যে জীবিত অবস্থায় সাতটি হক : ১) বাবা-মায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া। ২) মনেপ্রাণে ভালোবাসা। ৩) সর্বদা তাদের মেনে চলা। ৪) তাদের খেদমত করা। ৫) তাদের প্রয়োজন পূরণ করা। ৬) তাদের সবসময় সুখেশান্তিতে রাখার চেষ্টা করা। ৭) নিয়মিত তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও দেখাশোনা করা।
মৃত্যুর পর সাতটি হক : ১) তাদের মাগফিরাতের জন্য দোয়া করা। ২) সওয়াব পৌঁছানো। ৩) তাদের বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনদের সম্মান করা। ৪) বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনদের সাহায্য করা। ৫) ঋণ পরিশোধ ও আমানত আদায় করা। ৬) শরিয়তসম্মত অসিয়ত পূরণ করা। ৭) সাধ্যমতো তাদের কবর জিয়ারত করা।
লেখক : খতিব, বায়তুস সালাম জামে মসজিদ, মাসদাইর, নারায়ণগঞ্জ।

সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected]