
প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, শনিবার, মে ১১, ২০১৯ | |
বঙ্গোপসাগরের অংশবিশেষ কুতুবদিয়া চ্যানেলজুড়ে চলছে চিংড়ি পোনা ধরার মহোৎসব। চিংড়ি পোনা আহরণের নামে ধ্বংস করা হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির কোটি কোটি রেণু (চিংড়ি পোনা) পোনা মাছ।
কুতুবদিয়া চ্যানেলের উপকূল ও পেকুয়া, বাঁশখালী মাতারবাড়ি উপকূলে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ মশারি জাল বসিয়ে নির্বিচারে পোনা নিধন করছে। অথচ চিংড়ি পোনা ধরার ব্যাপারে সরকারি মৎস্য অধিদপ্তর থেকে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও কেউ তা মানছে না। বৃহস্পতিবার দুপুরে কুতুবদিয়া চ্যানেলের পেকুয়া উপজেলার মগনামা উপকূলে মশারি জাল বসিয়ে পোনা আহরণের দৃশ্য চোখে পড়ার মতো। পেকুয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বেনজীর আহমদের সাথে এ ব্যাপারে কথা হলে তিনি জানান, ২০ মে থেকে ৬৫ দিন সাগরে সব যান্ত্রিক ও জাল বসিয়ে মাছ ধরা বন্ধ থাকবে। সে সময়েই এসব নেট জাল দিয়ে পোনা ধরা বন্ধ করে দেওয়া হবে। পোনা ধরা বন্ধ করার জন্য সেই সময় থেকে অভিযান অব্যাহত আছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সামুদ্রিক বিজ্ঞান (ইনস্টিটিউট) বিভাগের শিক্ষক ডক্টর শরীফুজ্জামান বলেন, কুতুবদিয়ার উপকূল এবং তৎসংলগ্ন সাগর উপকূলে প্রায় তিন লাখ মানুষ মশারি জাল দিয়ে পোনা মাছ আহরণ করে আসছে। একটি চিংড়ি পোনা ধরার জন্য প্রায় পাঁচ শতাধিক বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক মাছের পোনা মারা হচ্ছে। অনেকাংশে দেখা গেছে, দুই তিনটি মশারি জাল থেকে কয়েকটা চিংড়ি পোনা পাওয়া গেলেও চেনা-অচেনা লাখ লাখ সামুদ্রিক মাছের পোনা মেরে ফেলা হচ্ছে। সরকারিভাবে এই পোনা মাছ আহরণ করা নিষিদ্ধ থাকলেও কার্যত কেউ তা মানছে না। এ আইন প্রয়োগের জন্য জেলা এবং উপজেলায় মৎস্য অফিস থাকলেও তারা এ ব্যাপারে অমনোযোগী। কুতুবদিয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা নাসিম আল মাহমুদ বলেন, অবশ্য চিংড়ি পোনা নিধন বন্ধ করার জন্য প্রত্যেক উপকূল এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে। এরই মধ্যে মোবাইলকোর্টের মাধ্যমে চিংড়ি পোনা আহরণকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, কুতুবদিয়া উপকূলে পোনা ধরা বন্ধ করা গেলেও পেকুয়া, বাঁশখালী, মাতারবাড়ি উপকূলের পোনা আহরণকারীদের দমন করা যাচ্ছে না। পেকুয়া, বাঁশখালী উপজেলা প্রশাসন তাদের সহযোগিতা করলে প্রত্যেক মাছের প্রজনন মৌসুম বৈশাখ মাস পোনা ধরা বন্ধ করা সম্ভব হতো। কুতুবদিয়া দ্বীপের উত্তর ধুরুং আকবর বলী ঘাট এলাকার মশারির নেট জাল দিয়ে পোনা আহরণকারী নাজমুল হক (৩২) জানান, কুতুবদিয়া চ্যানেলে জোয়ারের সময় দুই থেকে তিন শতাধিক চিংড়ি পোনা জালে আটকা পড়ে। এ পোনা প্রতি পিস গড়ে ৪০ থেকে ৫০ পয়সা বিক্রি করা হয় পাইকারি ক্রেতাদের কাছে। তবে সে (নাজমুল হক) স্বীকার করে বলেন যে, দুই থেকে তিনশ’ চিংড়ি পোনা ধরার জন্য বিভিন্ন প্রজাতির লাখ লাখ সামুদ্রিক মাছের পোনা মারা হচ্ছে। আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের পশ্চিম তাবলরচর গ্রামের বিধবা মরিয়ম বেগম (৪৫) বলেন, একজনের কাছে দৈনিক ৫০ টাকার বিনিময়ে পোনা মাছ ধরার কাজে সহায়তা করে জীবিকা নির্বাহ করে যাচ্ছেন। দক্ষিণ ধুরুং ইউনিয়নের বাতিঘরপাড়া গ্রামের মোসলে উদ্দিন (৫৫) বলেন, কুতুবদিয়া দ্বীপে ৬ ইউনিয়নে চিংড়ি পোনা আহরণের জন্য ১৫ জন মহাজন পুঁজি বিনিয়োগ করে বিভিন্ন বয়সের মানুষকে পোনা মাছ ধরার কাজে ব্যবহার করছে। আহরণকৃত পোনা মহাজনের কাছ ছাড়া অন্য কোথাও বিক্রি করতে পারে না।
তাই মহাজনের কাছে পোনা আহরণকৃত ব্যক্তিরা দাদন মহাজনের কাছে জিম্মি। কুতুবদিয়ার বিশিষ্ট ফিশিং ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদিন কোম্পানী বলেন, চিংড়ি পোনা ধরার জন্য মশারি জাল ব্যবহার করা হয় সাগরে। এ সময় কয়েকটি চিংড়ি পোনা ধরা পড়লেও হাজার হাজার বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক মাছের পোনা পানিতে না ফেলে বালুচরে আর চরে ফেলে দেওয়া হয়। এভাবে পোনা মাছ ধ্বংস করা হলে একদিন সাগর মাছশূন্য হয়ে পড়বে। চিংড়ি পোনা মাছ আহরণকারী লেমশীখালী দরবারঘাট এলাকার ছৈয়দ আহমদ জানান, মূলত সাগরে মা চিংড়ি থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রজাতির মা মাছ বৈশাখ থেকে আষাঢ় এ তিন মাস উপকূলে এসে ডিম ছাড়ে, তারপর পোনা মাছ কূলের পাশে বড় হতে থাকে।
এ অবস্থায় আহরণকারীরা চিংড়ি পোনা ধরার জন্য মশারি জাল বসিয়ে নির্বিচারে বিভিন্ন প্রজাতির পোনা ধরে ধ্বংস করে যাচ্ছে। অমজাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হরি মোহন দাশ জানান, বৈশাখ মাসে চিংড়ি পোনা ধরার কাজে ছেলেরা নিয়োজিত থাকায় বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গেছে।
![]() সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected] |