
প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, শনিবার, মে ১১, ২০১৯ | |
মহান আল্লাহ মানব জাতিকে সৃষ্টি করে তাদের জীবনব্যবস্থা হিসাবে ইসলামকে মনোনীত করে দিয়েছেন। মানুষকে সব ধরনের মানবীয় সদগুণাবলি দিয়ে আদর্শ মানুষ হিসাবে গড়ে তোলার জন্য মানবচরিত্রের অনুপম বিশেষণগুলি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে বর্ণনা করেছেন। ইসলামী জীবনাদর্শের প্রশংসিত চারিত্রিক গুণাবলির অন্যতম গুণ হচ্ছে ‘ছবর’ বা ধৈর্য। মানুষ সমাজবদ্ধ বা সামাজিক জীব। একটি সমাজের মানুষ নানা মতের, নানা পথের, নানা চিন্তা-চেতনার অধিকারী হয়ে থাকে। চিন্তার স্বাধীনতা ও বৈচিত্র্য দিয়ে আল্লাহ তায়ালা মানবসমাজকে অধিকতর বৈচিত্র্যময় ও নান্দনিক করেছেন। এ ক্ষেত্রে ইসলাম শান্তি, সবর, সহনশীলতা ও পরমতের প্রতি সহিষ্ণুতার আদেশ দিয়েই ক্ষান্ত হয়নিÑবরং এ মহৎ গুণ অর্জনের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছে এবং যথাযথ অনুশীলনের ব্যবস্থা করেছে। এ পরিবেশ ও অনুশীলন হলো পবিত্র মাহে রমজানের সিয়াম সাধনা। আল কোরআনে বলা হয়েছেÑ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদের জন্য সিয়াম সাধনাকে ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর,
যাতে তোমরা তাকওয়ার গুণ অর্জন করতে পার। (সূরা বাকারা, আয়াত-১৮৩)
হাদিসে শরিফে এসেছে ‘রমজান ধৈর্যের মাস, আর ধৈর্যের প্রতিদান হলো জান্নাত লাভ’। সহিহ মুসলিমের এক হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মহান আল্লাহ বলেন, ‘আদম সন্তানের যাবতীয় আমল তার নিজের জন্য; কিন্তু তার সিয়াম-সাধনা একান্ত আমার জন্য। আর আমি নিজেই তার প্রতিদান দেব।’ সুতরাং যখন তোমাদের কারও সাওমের দিন আসে, সে যেন অশ্লীল কথাবার্তা না বলে এবং অনর্থক শোরগোল না করে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় অথবা তার সঙ্গে (গায়ে পড়ে) ঝগড়া করতে চায়, সে যেন বলে ‘আমি রোজাদার বা সিয়াম পালনকারী’।
দুনিয়ার সাফল্য হাসিল ও আখিরাতে পরিত্রাণ লাভ করতে হলে পার্থিব জীবনে সবর বা ধৈর্য ধারণ করতে হবে। অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছা বা আশা-আকাক্সক্ষা ও প্রত্যাশা পূরণে সর্বাবস্থায় ধৈর্যধারণ অপরিহার্য। অধৈর্য, অস্থির, চঞ্চল প্রকৃতির মানুষের জীবনে সাফল্য আসে না। পার্থিব হোক বা অপার্থিব সব ক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য ধৈর্যধারণ পূর্বশর্ত। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ১০৪ স্থানে সবর ও ধৈর্র্যের কথা আলোচনা করেছেন। সব নবী-রাসুলই ছিলেন সবর ও ধৈর্যের প্রতীক। ধৈর্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েই লাভ করেছেন নবুওয়াত ও রেসালাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা ধৈর্যধারণ কর এবং ধৈর্যের প্রতিযোগিতা কর, সর্বদা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাক। আর আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (আলে ইমরান: ৩/২০০)।
‘তোমরা ধৈর্য ধারণ কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে থাকেন’। (আন ফাল/৮/৪৬)।
‘তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। আবশ্যই তা যথেষ্ট কঠিন কেবল বিনয়ী লোকেরা ব্যতীত’। (বাকারা:২/৪৫)। ‘আর তুমি সবর করবে, দৃঢ়চিত্ত রাসূলগণ সবর করেছেন এবং ওদের বিষয়ে (বদদোয়ায়) তড়িঘড়ি করবে না’। (আহক্বাফ:৪৬/৩৫)।
আলো যেমন অন্ধকারের অমানিশা দূর করে পথচারীকে নির্বিঘেœ গন্তব্যে পৌঁছাতে সাহায্য করে। তেমনি ধৈর্য মানুষের জীবনকে আলোময় ও জ্যোতির্ময় করে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে দেয়। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘মুমিনের ব্যাপারটি বড়ই চমৎকার! তার সব বিষয়ই তার জন্য কল্যাণকর। আনন্দের কিছু হলে সে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। যা তার জন্য মঙ্গলজনক হয়। বিপদে পতিত হলে সে সবর করে। তাও তার জন্য কল্যাণকর হয়। (মুসলিম হা: ২৯৯৯)।
তিনি আরও বলেছেন, ‘জেনে রাখ, ধৈর্যের সঙ্গেই রয়েছে বিজয়, আর কষ্টের সঙ্গেই রয়েছে স্বস্তি’। (আহমাদ : ২৮০৪)।
যারা সংকটে ও বিপদে ধৈর্যধারণ করে আল্লাহ পবিত্র কোরআনে তাদের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, ‘আর যারা অভাবে, রোগে-শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্য ধারণ করে, তারাই হলো সত্যাশ্রয়ী এবং তারাই পরহেজগার’ (বাকার-২/১৭৭)
‘আর তুমি সুসংবাদ দাও ধৈর্য ধারণকারীদের’ (বাকারাহ-২/১৫৫)
ধৈর্যশীলরা নেতৃত্ব লাভ করে : আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর আমরা তাদের মধ্য থেকে কিছু নেতা মনোনীত করেছিলাম, যারা আমার নির্দেশ অনুসারে পথ প্রদর্শন করত, যেহেতু তারা (আল্লাহর বিধানসমূহের ওপর) ধৈর্যধারণ করেছিল। আর তারা ছিল আমার আয়াতসমূহে দৃঢ়বিশ্বাসী’ (সাজদাহ ৩২/২৪) সহিষ্ণুতা ও সহনশীলতা এবং ধৈর্যশীলতা, ক্ষমাশীলতা, রাগ, নিয়ন্ত্রণ, ক্ষোভ দমন নিজেকে নিয়ন্ত্রণ তথা ঝবষভ ঈড়হঃৎড়ষ বা আত্মদমন এ গুণ অর্জন করার জন্যই সিয়াম সাধনা অত্যন্ত উপযুক্ত ও যথার্থ পন্থা।
মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘বীর পুরুষ সে নয়, যে যুদ্ধে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করে জয়লাভ করে, বরং সে হলো প্রকৃত বীর পুরুষ যে রাগের সময় বা ক্ষোভের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে (বোখারি ও মুসলিম)
সবর ৩ প্রকার :
১. আল্লাহর আনুগত্য ও এবাদতের কষ্ট স্বীকারের ধৈর্য, ২. আল্লাহর নিষিদ্ধ ও হারাম কাজ থেকে বেঁচে থাকার জন্য যে কষ্ট হয় সে ব্যাপারে ধৈর্য ধারণ করা, ৩. তাকদীর বা ভাগ্যের কষ্টদায়ক জিনিসের মোকাবিলায় ও ধৈর্যধারণ করা। সিয়ামের মধ্যে এ তিন প্রকারই উপস্থিত রয়েছে।
লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি সিলেট জেলা শাখা
![]() সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected] |