
প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, রবিবার, মে ১২, ২০১৯ | |
মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেনÑ ‘জাকাত শুধু ফকির-মিসকিন, গরিব-এতিম ও জাকাত উসুলকারী এবং যাদের চিত্তাকর্ষণের প্রয়োজন তাদের আর তা দাসমুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের জন্য এবং আল্লাহর পথে জিহাদকারী ও মুসাফিরদের জন্য। এটিই আল্লাহর নির্ধারিত বিধান।’ (সূরা
তওবা : ৬০)
প্রধানত যারা জাকাত গ্রহণের অধিকার রাখেন তাদের ফিরিস্তিতে জাকাত উপযুক্ত নিজের আত্মীয়স্বজন, পরে প্রতিবেশী ও বন্ধুবান্ধব, এরপর জাকাতের অন্য উপযুক্তরাই স্থান পায়। তবে জাকাতের অর্থব্যয়ের সবচেয়ে নিরাপদ খাত হলোÑ এতিমখানা ও নিরেট এতিম-গরিবদের জনস্বার্থে ব্যয়িত সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। বিশেষ করে যেসব মাদ্রাসায় এতিম-গরিবদের আলাদা ও স্বতন্ত্র ফান্ড রয়েছে এবং তাদের জন্য বিনামূল্যে নাওয়া-খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে, সেসব মাদ্রাসায় জাকাত প্রদান সবচেয়ে নিরাপদ ও উত্তম। কারণ এতে যেমন আপনার জাকাত সুষ্ঠুভাবে আদায় হবে, তেমনি এ অর্থ দিয়ে সারা দেশে অসংখ্য মাদ্রাসা স্থাপিত হবে। দ্বীনি ইলম ও ইসলামি জ্ঞানচর্চার পরিবেশ তৈরি হবে। কোরআন-হাদিস শিক্ষার ও শিক্ষা দেওয়ারও ব্যবস্থা বহাল থাকবে। এর প্রত্যেকটি কাজই সদকায়ে জারিয়ার অন্তর্ভুক্ত।
বর্তমানে মিডিয়া ও বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ‘মাদ্রাসায় জাকাত দিলে জাকাত আদায় হবে না’ মর্মে প্রতিবেদন ছাপা হচ্ছে। এতে জনগণ বিভ্রান্তির শিকার হচ্ছে। অনেক জাকাতদাতা মাদ্রাসায় জাকাত প্রদান থেকেও বিরত থাকছেন। যে কারণে জনগণের অর্থে পরিচালিত এসব মাদ্রাসার আর্থিক মেরুদ- ভেঙে পড়ছে। দ্বীনি শিক্ষা-দীক্ষাও গতিরুদ্ধ হচ্ছে। এ অপপ্রচার বিশেষ কোনো এজেন্ডার বুদ্ধিবৃত্তিক ষড়যন্ত্র কি না, খতিয়ে দেখা দরকার।
এতে সন্দেহ নেই, জাকাত প্রদানের সর্বোত্তম খাত হলো মাদ্রাসা। কারণ মাদ্রাসাগুলোতে এতিম-গরিবদের জন্য স্বতন্ত্র ফান্ড থাকে। যেটি সম্পূর্ণ জনগণের জাকাত-সদকা ও বিভিন্ন দান-অনুদানে পরিচালিত। এ ফান্ডে জমাকৃত অর্থ দিয়ে এতিম-গরিব শিক্ষার্থীদের ভরণ-পোষণ করা হয়। তারা কোরআন-হাদিস শিক্ষা ও ইসলামি জ্ঞানচর্চা করে বড়মাপের আলেম হয়ে দ্বীনের প্রভূত সেবাদান করে থাকবেনÑ এমনটিই প্রত্যাশা। তাই মাদ্রাসায় জাকাত দেওয়া সর্বাধিক উত্তম বলে প্রতিভাত হয়। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেনÑ ‘জাকাত শুধু ফকির-মিসকিন, গরিব-এতিম ও জাকাত উসুলকারী এবং যাদের চিত্তাকর্ষণের প্রয়োজন তাদের আর তা দাসমুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের জন্য এবং আল্লাহর পথে জিহাদকারী ও মুসাফিরদের জন্য। এটিই আল্লাহর নির্ধারিত বিধান।’ (সূরা তওবা : ৬০)।
বিবেচনার বিষয় হলো, আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত জাকাত উপযুক্তরা যদি আপনার জাকাতের অর্থে ইসলামের কোনো ফলপ্রসূ কাজে নিয়োজিত থাকে, তাহলে আপনার সওয়াব হবে দ্বিগুণ। এক তো জাকাত আদায়ের, অন্যটি ইসলামকে সমুন্নতকরণের জন্য। অতএব যারা বলে থাকেনÑ মাদ্রাসায় ব্যয়িত জাকাত সহিহ নয়, তারা অবশ্যই ভুলের রাজ্যে বসবাস করছেন। আর এ ভিত্তিহীন প্রোপাগান্ডার পেছনে কোনো খারাপ উদ্দেশ্য কাজ করছে কি না, বিবেচনার দাবি রাখে। তবে জেনে রাখা ভালো, জাকাতের অর্থ দিয়ে মাদ্রাসা শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন দেওয়া, ভবন নির্মাণ ও সাধারণ খরচ সম্পূর্ণ নাজায়েজ। তাই মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ এটি নিশ্চিত করে যে, তারা জাকাতের খাত ছাড়া অন্য কোনো খাতে কখনও জাকাতের অর্থ ব্যয় করে না।
আরেকটি বিষয় সাফ থাকা দরকার, এ দেশে দুই ধরনের মাদ্রাসা শিক্ষার প্রচলন রয়েছে। এক ধরনের মাদ্রাসা সরকারি। যেগুলোর নিয়ন্ত্রণ সরকারের বিভিন্ন অনুদানে হয়ে থাকে। যদি এসব মাদ্রাসায় জাকাত আদায়ের খাত থাকে আর মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ জাকাত উপযুক্তদের মধ্যে শরিয়তসম্মত উপায়ে জাকাতের অর্থ ব্যয় করে থাকে, তাহলে এ ধরনের সরকারি মাদ্রাসাতেও জাকাত দেওয়া যাবে। তবে যেসব মাদ্রাসা সরকারি অনুদানভুক্ত নয়, তাতে শুধু জাকাতের বেলায়ই নয়, বরং সাধারণ দান-অনুদান, সদকা-ফেতরা ইত্যাদির বেলায়ও প্রাধান্য দেওয়া চাই। মাদ্রাসা শিক্ষা মানে শরিয়তের জ্ঞানের চর্চা। কেয়ামতের দিন শরিয়ত সম্পর্কে প্রত্যেকেই জিজ্ঞাসিত হবে। জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং জান্নাত পেয়ে ধন্য হওয়ার বিষয়টি পরিপূর্ণ শরিয়তের সঙ্গে জড়িত। সব নবী-রাসুল, যারা দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব, তারা সবাই ইলম শিক্ষা করা, শিক্ষা দেওয়া, শরিয়তের হুকুম-আহকামের পাবন্দি করার দাওয়াত দিয়েছেন। আর এর ওপরই চিরমুক্তি ও সফলতা নির্ভরশীল বলে সুস্পষ্ট ঘোষণা করেছেন। এজন্যই এ নশ্বর পৃথিবীতে তাদের শুভাগমন হয়েছে। তাই এ খাতে সঠিক সাহায্য-সহযোগিতা করা যে সর্বোত্তম, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। পক্ষান্তরে এসব মাদ্রাসা ও এর শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অবমূল্যায়ন করা, তাদের অসহায়তা ও দুঃখ-দুর্দশার প্রতি কটাক্ষ বা অবহেলা প্রদর্শন করা আল্লাহপাকের কঠোর আজাব এবং রাসুলুল্লাহ (সা.) এর সুপারিশ থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণও হতে পারে।
ইমাম গাজালি (রহ.) এর মতানুসারে জাকাত দেওয়ার জন্য এমন অভাবগ্রস্ত লোকদের অনুসন্ধান করা উচিত, যারা দুনিয়ার লোভ-লালসা, ধনলিপ্সা ও অর্থ উপার্জনের জন্য ব্যবসা-বাণিজ্য ত্যাগ করে আখেরাতের পাথেয় নিয়ে নিমগ্ন রয়েছে। কিংবা যারা রাসুল (সা.) এর উপদেশমতে হালাল খাবার খেয়ে বেঁচে আছে। কারণ রাসুল (সা.) বলেছেনÑ ‘যারা ভালো কাজ করে তাদের নিজ মাল থেকে খানা খাওয়াও। কারণ তারা সর্বদাই আল্লাহমুখী থাকে। তারা আর্থিক সংকটে পড়লে অন্যমনস্ক হয়ে যেতে পারে। তাই এ ধরনের মানুষকে আল্লাহমুখী করে রাখা দুনিয়াদার হাজার লোকের সাহায্য-সহযোগিতা করা থেকে উত্তম। আর আল্লাহওয়ালা হাজার লোকের তুলনায় এমন একজনকে জাকাত দিয়ে সাহায্য করা উত্তম, যিনি আলেম, গরিব, অসহায় অথচ শুধু আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি লাভের জন্য একনিষ্ঠভাবে নিরলস ইলমে দ্বীনের সেবাদান করে যাচ্ছে। কারণ ইলম শেখা ও শেখানো সর্বোত্তম আমল।
প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস ও জগদ্বিখ্যাত মনীষী হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মোবারকÑ যার সনদে বোখারি শরিফে অসংখ্য হাদিস বর্ণিত হয়েছে, তিনি অত্যন্ত সম্পদশালী ছিলেন। তিনি নিজের জাকাতের সব মাল ওলামায়ে কেরামের পেছনে ব্যয় করতেন, আর বলতেন, ‘নবুয়তের মর্যাদার পর সবচেয়ে উচ্চমর্যাদা হচ্ছে ওলামায়ে কেরামের। তারা অভাবগ্রস্ত হলে, অর্থসংকটে পড়লে দ্বীনের খেদমতে ভাটা পড়বে ও দ্বীনের বিশাল ক্ষতি হবে। তাই তাদের ইসলামের সেবাদানের জন্য অর্থনৈতিকভাবে চিন্তামুক্ত রাখতে হবে। তাদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে, যেন তারা নিশ্চিন্তে ইসলামের খেদমতে নিমগ্ন থাকতে পারে।’ আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।
অনুলিখন : রিদওয়ান হাসান
![]() সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected] |