৪ অক্টোবর ২০১৮, ইউরোপা লিগে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে আর্সেনালের প্রতিপক্ষ আজারবাইজানের এফসি কারাবাগ। ৩-০ গোলের সহজ জয় নিয়েই ফেরে উনাই এমেরির দল। কিন্তু জয়ের পর ম্যাচ নিয়ে নয়, স্প্যানিশ কোচকে মুখোমুখি হতে হয়েছিল অন্য প্রশ্নেÑ ফিট থাকার পরও কেন স্কোয়াডে নেই হেনরিখ মিখিতারিয়ানÑ জবাবে বেশ বিচলিতই হতে হয়েছিল এমেরিকে। মাস সাতেক পর আবার আজারবাইজান যাচ্ছে আর্সেনাল, ইউরোপা লিগ ফাইনাল খেলতে। এবারও সবার মুখে একই প্রশ্ন, মিখি কি এবারও থাকবেন না আর্সেনাল স্কোয়াডে?
মিখিতারিয়ানের আজারবাইজান না যাওয়া নিয়ে জলঘোলাও হয়েছিল বেশ। মৌসুমে কারাবাগে খেলতে না যাওয়ায় তাঁর সমালোচনা করেছিলেন কারাবাগ কোচ গুরবান গুরবানোভ, আর্মেনিয়ার অধিনায়ককে ‘ভীতু’ বলেছিলেন তিনি। অবশ্য মিখির আজারবাইজানে না যাওয়ার ঘটনা গতবারই প্রথম না, বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের হয়ে আরেক আজারবাইজান ক্লাব গাবালার বিপক্ষে খেলার কথা ছিল তার, সেবার উয়েফার অনুরোধে আর্মেনিয়ার অধিনায়কের জন্য বিশেষ পাসপোর্টের ব্যবস্থা হলেও যাননি।
মিখিতারইয়ানের যেতে না চাওয়ার কারণ নিরাপত্তা। স্টালিনের সময় থেকে কারাবাগ যুদ্ধ নিয়ে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে সম্পর্ক রীতিমতো যুদ্ধংদেহি। নাগোরনো-কারাবাগ নিয়ে নব্বইয়ের দশকের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের রেশ আছে এখনও, আজারবাইজানে সাধারণত আর্মেনিয়ানদের প্রবেশের অনুমতি মেলে না। অবশ্য আর্মেনিয়াতে এমন কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই আজারবাইজানবাসীদের জন্য। আর্মেনিয়ানদের প্রতি আজারবাইজানের মানুষদের ক্রোধ ঠিক কতটা, বুঝতে হলে ফিরে যেতে হয় ২০০৪ সালে।
হাঙ্গেরিতে ন্যাটোর শান্তিরক্ষা সম্মেলনে যান আর্মেনিয়ার সৈনিক গুর্গেন মারগারিয়ান। সম্মেলন শেষে নিজ রুমে ঘুমন্ত গুর্গেনকে হত্যা করে আজারবাইজানের সেনা রামিল সাফারোভ। যাবজ্জীবন কারাদ- হলেও ২০১২ তে দেশে ফিরিয়ে আনা হয় রামিলকে, শর্ত ছিল বাকিটা সময় নিজ দেশের কারাগারেই কাটাবেন তিনি। কিন্তু দেশে ফিরতেই বীরের বেশে বরণ করে নেয় আজারবাইজানবাসী, প্রেসিডেন্ট ক্ষমা করে দেন রামিলকে। সৈন্য থেকে মেজরে পদোন্নতি হয় তার, পরিবার নিয়ে থাকার জন্য সরকারি কোয়ার্টারও পান তিনি, তার নামে বানানো হয় রাস্তাও। আজারবাইজানের শীর্ষস্থানীয় সব নেতাই রামিলকেই সমর্থন জানিয়েছিলেন।
তবে ম্যাচটা যখন ফাইনাল, তখন অবশ্যই মিখির মতো একজনকে দলে চাইবেই আর্সেনাল। সেজন্য সব চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারাÑ জানিয়েছেন ক্লাবের মুখপাত্র, ‘মিখির দলে থাকা অবশ্যই আমাদের জন্য বড় কিছু, তবে ফুটবলারদের নিরাপত্তা সবার আগে। দুই দেশের (আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া) মধ্যকার সম্পর্ক আমরা জানি। উয়েফাকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অনুরোধ জানাচ্ছি। তাদের তদবিরে মিখির জন্য বিশেষ পাসপোর্টের ব্যবস্থা হলে এবং দূতাবাস সবুজ সংকেত দিলেই মিখি ফাইনাল খেলতে যাবে।’