
প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, রবিবার, মে ১২, ২০১৯ | |
পবিত্র রমজান মাস রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের মাস। রহমত আমরা চোখে দেখি না; বিশ্বাস করতে হয়। তবে চিন্তা করলে অন্তরে অনুভব করা যায়।
এ বছর ২৯ শাবান শেষে রমজানের প্রত্যাশিত চাঁদ দেখার সঙ্গে সঙ্গে ঈমানদার মানুষের ঢল নেমেছিল মসজিদে। শহরে গ্রামে সর্বত্র মাগরিবের নামাজে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না কোথাও। এতদিন নামাজের প্রতি যাদের অবহেলা ছিল তারাও জেগে ওঠে নতুন চেতনায়। এশার পর শুরু হয় দীর্ঘ দেড় থেকে দুই ঘণ্টার একটানা তারাবির নামাজ। এক দুই দিন নয়, রমজান মাসজুড়ে দিনের বেলা রোজা রেখে শ্রান্ত-ক্লান্ত শরীরে রাতে নামাজে দাঁড়িয়ে কুরআন শ্রবণ, শেষ রাতে সাহরির
জন্য গভীর নিদ্রা ভেঙে আরেক রকম জিয়াফতের আয়োজন। মসজিদে মসজিদে মুসলিম সমাজের সর্বত্র রমজানের এ জাগরণ প্রমাণ করে আমরা না দেখলেও রমজানে পৃথিবীর বুকে আল্লাহর রহমতের ঢল নেমেছে। বর্ষায় যখন মুষলধারে বৃষ্টি নামে, পথঘাট খাল বিল বানের পানিতে থই থই করে তখন মাছেরা উৎসবে মেতে ওঠে। মাছের কিলবিল দেখে বুঝা যায়, তাদের প্রাণ ও জীবনের বাহন পানির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে চারদিকে। অনুরূপ রমজানে ঈমানদারদের জাগরণের মূলেও রয়েছে আল্লাহর রহমতের প্লাবন নেমেছে পাপ-পঙ্কিলতা ধুয়ে মুছে সাফ করার জন্যে।
এ প্লাবনের কুল ভাঙা জোয়ারে অবগাহন করার চেতনায় জেগে ওঠে মুমিনের প্রাণ। এজন্যই দিনের বেলা সিয়াম সাধনা আর রাত জেগে তারাবিহ, কুরআন তেলাওয়াত, তাহাজ্জুদ ও সাহরির জিয়াফত। সাহরির জিয়াফত সরাসরি আল্লাহর পক্ষ হতে। রাতে না খেয়ে ঘুমালেও ঘুম থেকে জেগে খাওয়ার রেওয়াজ পৃথিবীর কোথাও নাই। অথচ রোজাদার কোন অদৃশ্য আহ্বানে ঘুম থেকে জেগে পরম তৃপ্তিতে সাহরি খায়। সাহরির এ নিয়ম বিশ্ব সংস্কৃতিতে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম এবং তা আল্লাহ প্রেমের প্রকৃষ্ট নিদর্শন। পৃথিবীর অন্যান্য সভ্যতা ও ধর্মেও কৃচ্ছ্রসাধনার বিধান আছে। কিন্তু ইসলামের কৃচ্ছ্রসাধনার বিধানের সঙ্গে অন্য কোনো সভ্যতা বা ধর্মের বিধানের তুলনা হতে পারে না। দুনিয়াকে সম্পূর্ণ বর্জন নয়, বৈরাগ্য সাধনা কিংবা বিয়েশাদী বর্জন নয়, বরং আত্মনিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নিজের মানবীয় গুণাবলির উৎকর্ষ সাধনের এমন ভারসাম্যপূর্ণ মাসব্যাপী কৃচ্ছ্রসাধনা, নিজের আত্মিক শুদ্ধির পাশাপাশি জাকাত, ফিতরা, দান-সদকায় অসহায় মানুষের প্রতি যতœ ও সেবা, নিজের ধর্মগ্রন্থকে একবার পড়া বা অতি পবিত্র অবস্থায় শোনার আয়োজন একমাত্র ইসলামেরই সৌন্দর্য।
রোজার মতো নামাজের সৌন্দর্য্যও অবর্ণনীয়। নামাজের মতো এত সুন্দর করে আপন স্রষ্টার কাছে নিজেকে সঁপে দেওয়ার আয়োজন অন্য কোনো ধর্মে নিশ্চয়ই নাই। সর্বশক্তিমান আল্লাহর সামনে স্বেচ্ছায় হাতকড়ার মতো লাগিয়ে বন্দিবেশে বিনীতভাবে দাঁড়ানো, কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে বিশ্বজনীনতার চেতনায় আল্লাহর ধ্যানে একাকার হওয়া, আল্লাহর মহানত্বকে হৃদয়ের উপলব্ধিতে এনে তার সামনে রুকুতে নত হওয়া, চেতনার আরও গভীরে গিয়ে তার সমীপে নিজের গোটা অস্তিত্বকে লুটিয়ে দেওয়া, রুকুতে সিজদায় পবিত্রতম বাক্য দিয়ে আল্লাহর প্রশংসা ও পবিত্রতা ঘোষণা, অন্তরাত্মার উপলব্ধির চেতনায় আধ্যাত্মিক সফরে প্রাপ্ত নেয়ামত সমাজের সব মানুষের মাঝে বিলিয়ে দেওয়া, ডান ও বাম পাশে দুই দিকে সালাম দিয়ে সমাজের সব মানুষের জন্য শান্তি কামনার এমন বেহেশতি আয়োজন অতুলনীয় অভাবনীয়।
পরিসংখ্যান নিলে দেখা যাবে পৃথিবীতে এত সুন্দরভাবে স্রষ্টার ইবাদত, আল্লাহর মহব্বতে দীর্ঘ একমাস উপবাসব্রত পালন, বিপুলহারে জুমায় ঈদে ধর্মের জন্য উৎসব এবং আল্লাহর দ্বীনের জন্য প্রাণ উৎসর্গ করার চেতনায় মুসলামনরাই শ্রেষ্ঠ জাতি।
ইসলামের এ শ্রেষ্ঠত্বকে উপলব্ধি করতে হলে আল্লাহর রহমতের জোয়ারে অবগাহন করতে হলে, আল্লাহর রহমতের পরশে জীবন ধন্য করতে হলে সিয়াম সাধনাকে সর্বোচ্চ পবিত্রতায় পালন করতে হবে। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছেÑ‘যে ব্যক্তি রোজা রেখে মিথ্যা কথা ও আচরণ ত্যাগ করল না, তার পানাহার ত্যাগ করাতে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।’
![]() সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected] |