রকীবুল হক : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শপথ না নেওয়ায় শূন্য ঘোষিত বগুড়া-৬ আসনের উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২৪ জুন। নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী চলতি মাসের ২৩ তারিখের মধ্যে প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দিতে হবে। তবে এ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে কিনা তা এখনও ঠিক করতে পারেনি দলটি। বরং শপথ না নিয়ে ছেড়ে দেওয়া আসনটিতে নতুন করে উপ-নির্বাচনে অংশগ্রহণের যৌক্তিকতা সম্পর্কে বিএনপি নেতাদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে। তা ছাড়া এ বিষয়ে বিএনপির দুই জোট ২০ দল ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টেরও মতামত নেওয়া লাগতে পারে। এদিকে সংসদে বিএনপির জন্য সংরক্ষিত একটি নারী আসনের জন্য ১৬ জুন ভোট গ্রহণের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। এ তফসিল অনুযায়ী ২০ মের মধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে। বগুড়ায় উপ-নির্বাচনে অংশ নেওয়া নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতা থাকলেও সংরক্ষিত এ নারী আসনে বিএনপি প্রার্থী দিতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে এ আসনে প্রার্থী হতে দলীয় ফোরামে সম্ভাব্য অনেকের নাম আলোচিত হচ্ছে। উপ-নির্বাচন বা সংরক্ষিত নারী আসনের বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘ভোট ডাকাতি’র অভিযোগ এনে ফল বর্জন করে বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। প্রাথমিকভাবে তারা ঘোষণা দেন, ঐক্যফ্রন্ট থেকে বিজয়ী আট এমপি শপথ নেবেন না এবং তারা সংসদে যাবেন না। তবে নানা নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে প্রথমে দুই দফায় গণফোরামের দুই এমপি শপথ নেন। পরে শেষ মুহূর্তে দলীয় সিদ্ধান্তে মির্জা ফখরুল ছাড়া দলের চার এমপি শপথ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ আলোচনার জন্ম দেন। এর দুই দিন আগে অবশ্য দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বিএনপির আরেক এমপি শপথ  নেওয়ায় দল থেকে বহিষ্কার হন তিনি। দলের এ দ্বিমুখী ও আকস্মিক সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপি ও সংশ্লিষ্ট দুই জোটে বেশ অস্থিরতা বিরাজ করছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শূন্যঘোষিত বগুড়া-৬ আসনের উপ-নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।  
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। দলের পার্লামেন্টারি বোর্ড এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।’ উপ-নির্বাচন ও সংরক্ষিত নারী আসনে প্রার্থী দেওয়ার বিষয়ে শনিবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী জানান, এসব বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আর উপ-নির্বাচনে যাওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, বিএনপির উপ-নির্বাচনে যাওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। এ নির্বাচনে যদি যাবে, তাহলে শপথ নিল না কেন? আসলে এভাবে বিচ্ছিন্নভাবে না গিয়ে বিএনপির সবাই যদি আলোচনা করে একসঙ্গে সংসদে যোগ দিত, তাহলে ভালো হতো। তবে সংরক্ষিত নারী আসনে বিএনপি প্রার্থী দেবে বলে আশা করে এ বুদ্ধিজীবী বলেন, এ আসনে তরুণ ও যোগ্য প্রার্থী ঠিক করা উচিত। এ বিষয়ে বিএনপির বগুড়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য মো. মোশারফ হোসেন বলেন, স্থানীয় নেতাকর্মীরা তো নির্বাচনে যেতে চায়। কিন্তু সেটা দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নয়। দল এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি।  
সূত্রমতে, উপ-নির্বাচনে গেলে এ আসনে কে প্রার্থী হবেন তা নিয়েও জটিলতা দেখা দেবে। কারণ আসনটি মূলত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছিল। তিনি এবার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারায় মির্জা ফখরুলকে প্রার্থী করা হয়। এতে তিনি বিজয়ী হলেও দলীয় কৌশলের কথা বলে শপথ থেকে বিরত থাকেন। তাই এবার উপ-নির্বাচনে তার প্রার্থী হওয়াটাও অনিশ্চিত। প্রসঙ্গত, একাদশ সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৬ আসনে নির্বাচিত বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল শপথ না নেওয়ায় আসনটি গত ৩০ এপ্রিল শূন্য ঘোষণা করা হয়। আর ৮ মে এ আসনে উপ-নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। তফসিল অনুযায়ী ২৪ জুন ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। মনোনয়ন দাখিলের শেষ সময় ২৩ মে, বাছাই ২৭ মে, প্রত্যাহার ৩ জুন ও প্রতীক বরাদ্দ হবে ৪ জুন। এখানে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) নির্বাচন হবে বলেও ইসি ঘোষণা দিয়েছে।
সংরক্ষিত আসনের জন্য আলোচনায় অনেকের নাম : ৮ মে নির্বাচন কমিশন বিএনপির জন্য সংরক্ষিত একটি নারী আসনে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই এ আসন পেতে দলের নারী নেত্রীদের তৎপরতা শুরু হয়েছে। এ নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়া না দেওয়া নিয়ে দলের পক্ষ থেকে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে এ ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্তের প্রত্যাশা নিয়েই সংসদে যাওয়ার আশা করছেন অনেকে। দলীয় সূত্রমতে, সংরক্ষিত এ আসনের জন্য জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন সদ্য সংসদে যোগ দেওয়া হারুনুর রশীদের (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩) স্ত্রী ও সাবেক এমপি আসিফা আশরাফি পাপিয়া। এ ছাড়াও যাদের নাম আলোচনায় রয়েছে তারা হলেনÑ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, সহ-আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, বেবি নাজনিন, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা এবং গুম হওয়া বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদী লুনা। এ ছাড়াও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের নামও আলোচনায় আছে। 
সূত্রমতে, দলের পক্ষ থেকে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করলে সংরক্ষিত এ আসনে কোনো ভোট হবে না। সংশ্লিষ্ট প্রার্থীই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবেন। আর দলে মতবিরোধ হলে একাধিক প্রার্থী হতে পারে। এজন্য ভোটের প্রয়োজন হবে। সেক্ষেত্রে বিএনপির ৫ এমপি যাকে চাইবেন তিনিই নির্বাচিত হবেন। তবে এ বিষয়ে ২০ তারিখের আগেই বিএনপিকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কারণ নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী ২০ মের মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে। এ ছাড়া বাছাই ২১ মে, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৮ মে ও ভোট গ্রহণ হবে ১৬ জুন।