logo
প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, মঙ্গলবার, মে ১৪, ২০১৯
ঈদের আগেও রাজশাহীর দর্জিপাড়ায় দুর্দিন!
তৈরি পোশাকের দিকেই ঝুঁকছেন মানুষ
রাজশাহী ব্যুরো

দিন দিন বাজারে তৈরি পোশাকের দিকেই ঝুঁকছেন মানুষ। তারপরও বিভিন্ন উৎসবে দর্জির কাছে পোশাক বানিয়ে নেওয়াকে অনেকেই ঐতিহ্য হিসেবে মনে করেন। তাই ঈদ এলেই দর্জিপাড়ায় বাড়ে ব্যস্ততা। কিন্তু রাজশাহীতে এবারের চিত্রটা ভিন্ন। ধীরে ধীরে ঈদ এগিয়ে এলেও দর্জিপাড়ায় ব্যস্ততা নেই। বছরের অন্য সময়ের মতো ঈদের আগেও দুর্দিন চলছে দর্জিদের।

স্বাভাবিকভাবেই এ শহরের ছিট কাপড়ের দোকানেও বেচাবিক্রি সেভাবে শুরু হয়নি। ক্রেতার অপেক্ষায় বসে আছেন দোকানিরা। তারা জানান, দুয়েকজন করে ক্রেতা দোকানে আসছেন। তবে ঈদের আগে যে কেনাকাটা হয় তা এখনও শুরু হয়নি। এখন ছিট-কাপড় বিক্রি না হওয়ায় দর্জিরাও বসে আছেন। তবে দ্রুত কেনাকাটা শুরু হবে বলে তারা আশা করছেন। রাজশাহী মহানগরীর সাহেববাজার কাপড়পট্টিতে সোমবার সকালে গিয়ে ক্রেতাদের তেমন উপস্থিতি দেখা যায়নি। একই অবস্থায় নগরীর আরডিএ মার্কেট ও নিউমার্কেটের কাপড়ের দোকানগুলোয়ও। এসব মার্কেটে থাকা দর্জিদেরও অলস বসে থাকতে দেখা গেছে। গণকপাড়া মোড়ের নিউ মৌসুমি প্লাস স্টোরের মালিক রাবদুল হক বলেন, ঈদ উপলক্ষে কয়েক লাখ টাকার ছিট-কাপড় তুলেছেন। কিন্তু ক্রেতা নেই। গেল কয়েক বছর থেকে ঈদে পাঞ্জাবির কাপড় ভালো চলে। এবার সেই কাপড়ও বেশি করে তোলা হয়েছে। কিন্তু বিক্রি নেই।

ক্রেতা না থাকায় পাশের বাবলু বস্ত্রালয়ের বিক্রয় কর্মী মোসতাক আহমেদের মুখেও হতাশার সুর। তিনি বলেন, এবার বাজারে পাঞ্জাবির কাপড় নতুন এসেছে। দাম ২৫০ থেকে ৬০০ টাকা গজ। এ কাপড় কিনে বানিয়ে নেওয়ার চেয়ে দোকান থেকেই তৈরি পাঞ্জাবি কিনতে পছন্দ করছেন ক্রেতারা। ফলে ছিট-কাপড়ের দোকানেও ক্রেতা নেই। তবে খুব সামান্য পরিমাণে মেয়েদের সালোয়ার-কামিজের ছিট বিক্রি হচ্ছে। শার্ট-প্যান্টেরও কাপড় তেমন বিক্রি হচ্ছে না।

নগরীর গণকপাড়া মোড়ে ১৯৮৩ সাল থেকে দর্জির কাজ করেন হাসেন টেইলার্সের লিটন আলী। তিনি বলেন, এ ৩৬ বছরে ঈদের আগে এমন দুঃসময় তিনি খুব কম দেখেছেন। আগে তো সারা বছরই তাদের ব্যস্ততা ছিল। বছর দশেক থেকে তাদের দুর্দিন চলছে। তবে দুই ঈদের মধ্যে শুধু রোজার ঈদের আগেই তাদের কাজের চাপ বেড়ে যায়। কিন্তু এবার সেটাও নেই। তিনি আরও বলেন, এবার অনেক আগেভাগেই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে শহরের বাইরে থেকে পড়াশোনা করতে আসা শিক্ষার্থীরা বাড়ি চলে গেছেন। তাই তাদের কাজ কমে গেছে। অন্য বছরগুলোয় শিক্ষার্থীরাই ছিট-কাপড় কিনে দর্জির কাছে পোশাক তৈরির পর তা নিয়ে ঈদের আগে বাড়ি যেত। ফলে ঈদের আগে কাজ শেষ করতেই তাদের হিমশিম খেতে হতো। শুভ টেইলার্সের মালিক জালাল বলেন, এবার ঈদ ঘিরে কোনো কাজই নেই। হাত-পা গুটিয়ে বসে আছি। ঈদের আগে এত খারাপ সময় কখনও দেখিনি। প্রতি বছর ঈদের আগে ভালো কাজ হয়। আয়-রোজগারও ভালো হয়। সারা রাত কাজ করেও কাজ শেষ করা যায় না। কিন্তু এবার কিছুই নেই।

নগরীর নিউমার্কেট সংলগ্ন হকার্স মার্কেটের দর্জিপাড়ায় গিয়ে জানা গেছে, সেখানেও একই দশা। সেখানকার দর্জিরা জানান, ঈদের জন্য গেল বছরও ছিট-কাপড় দিয়ে পোশাক তৈরির হিড়িক পড়ে গিয়েছিল। রোজা শুরুর আগেই তাদের কাজের অর্ডার নেওয়া বন্ধ করতে হয়েছে। কিন্তু এবার কাজের সেই চাপ নেই। ক্রেতাদের আগ্রহ যে এবার গার্মেন্টের তৈরি পোশাকে, তার প্রমাণ পাওয়া যায় পাশের নিউমার্কেটেই। তৈরি পোশাকের দোকানগুলোয় ছিট-কাপড়ের চেয়ে বেশি ভিড় লক্ষ্য করা যায়। নিউমার্কেটে কেনাকাটা করতে আসা আনোয়ার হাবিব বলেন, ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় একটি শার্ট কেনা যায়। কিন্তু দর্জিদের ৩০০ টাকা মজুরি দিতে হয়। তার মানে মজুরির টাকা দিয়েই নতুন শার্ট কেনা যায়।

সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected]