প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, মঙ্গলবার, মে ১৪, ২০১৯ | |
সম্মেলনের এক বছর পর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হয়েছে। সোমবার ৩০১ সদস্যবিশিষ্ট এ কমিটি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়। পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ৬১ জন সহ-সভাপতি, ১১ জন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ১১ জন সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ পেয়েছেন। এছাড়া বিষয়ভিত্তিক সব সম্পাদক এবং সহ-সম্পাদক ও উপসম্পাদকের নামও ঘোষণা করা হয়।
এদিকে, পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে স্থান পেয়েছেন চাকরিজীবী, নিষ্ক্রিয়, বিবাহিত, অছাত্র, মাদক মামলার আসামি, হত্যা মামলার আসামিসহ বিতর্কিতরা। তা ছাড়া যেসব পদপ্রত্যাশী পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে স্থান পাননি তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কমিটি ঘোষণার পরপরই তারা ঢাবি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছেন। সন্ধ্যার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করতে গিয়ে হামলার শিকার হন পদবঞ্চিতদের বেশ কয়েকজন। এতে আহত হন ১০ জন। পরে আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এ নিয়ে কমিটি ঘোষণার পর থেকে ঢাবি ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করছে। পদবঞ্চিতরা বলছেন, দুই নেতার (সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক) গুডবুকে না থাকায় তাদের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে স্থান হয়নি। এ কমিটিতে বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে যারা প্রকৃত ছাত্রলীগ তাদের যেন স্থান দেওয়া হয়Ñসে দাবি করেন তারা। জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১১ ও ১২ মে ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে নিজেরা কমিটি করতে ব্যর্থ হলে ৩১ জুলাই আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংগঠনিক অর্পিত ক্ষমতাবলে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি এবং গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক করে দুই সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করেন। পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ কমিটিও করে দেন তিনি।
এদিকে, একবছর পর সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদনের পর ৩০১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের সাংগঠনিক নেত্রী, আজ আমাদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন করেছেন। সে অনুযায়ী ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ করা হয়েছে। এর আগে দুপুরের দিকে তালিকা নিয়ে গণভবনে যান সংগঠনটির দুই কেন্দ্রীয় নেতা। তারা ৩০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির সদস্যদের সম্পর্কে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবহিত করেন। পরে তিনি অনুমোদন দেন।
৩০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি হয়েছেন আল নাহিয়ান খান জয়। তা ছাড়া সহ-সভাপতি পদে রয়েছেন মোট ৬১ জন। সিনিয়র সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছেন মামুন বিন সাত্তার। এ পদে আছেন মোট ১১ জন। সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক পদে রয়েছেন লেখক ভট্টাচার্য। এ পদে রয়েছেন মোট ১১ জন। এ ছাড়া প্রচার সম্পাদক পদে আছেন শফিকুল আলম রেজা। উপপ্রচার সম্পাদক পদে রয়েছেন সাতজন। দপ্তর সম্পাদক হয়েছেন আহসান হাবিব। উপদপ্তর সম্পাদক পদে রয়েছেন পাঁচজন। গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক হয়েছেন আবু হাসনাত সরদার হিমেল। উপগ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে আছেন চারজন। শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক পদে আছেন আবদুল্লাহ আল মাসুদ লিমন। উপশিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক পদে রয়েছেন চারজন। সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদ পেয়েছেন খালিদ হাসান রবিন এবং উপসাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে আরও আছেন ছয়জন। সমাজসেবা সম্পাদক পদ পেয়েছেন শেখ স্বাধীন শাহেদ। উপসমাজসেবা সম্পাদক পদে আছেন চারজন। ক্রীড়া সম্পাদক পদ পান আল আমিন সিদ্দিক সুজন। উপক্রীড়া সম্পাদক পদে আছেন তিনজন। আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পদে আছেন মো. রাকিনুল হক চৌধুরী। উপআন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পদে আছেন পাঁচজন। পাঠাগার সম্পাদক হয়েছেন জাভেদ হোসেন। উপপাঠাগার সম্পাদক পদে আছেন চারজন। তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক পল্লব কুমার বর্মন। উপতথ্য ও গবেষণা সম্পাদক পদে আছেন তিনজন। অর্থ সম্পাদক পদে আছেন মো. রাকিব হোসেন। উপঅর্থ সম্পাদক পদে আছেন চারজন। আইনবিষয়ক সম্পাদক পদে আছেন ফুয়াদ হোসেন শাহাদাত। উপআইন বিষয়ক সম্পাদক পদে আছেন চারজন। পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক পদে আছেন শামীম পারভেজ। উপপরিবেশবিষয়ক সম্পাদক পদে আছেন তিনজন। স্কুল ও ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক পুতুল চন্দ্র রায়। উপস্কুল ও ছাত্রবিষয়ক পদে আছেন তিনজন। বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক সাদুন মোস্তফা। উপবিজ্ঞানবিষয়ক পদে রয়েছেন চারজন। তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক শাকিল আহমেদ জুয়েল বাবু। উপতথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক পদে আছেন পাঁচজন। ধর্মবিষয়ক সম্পাদক তাজ উদ্দিন। উপধর্ম পদে আছেন চারজন। গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক পদে আছেন আবদুল্লাহ হীল বারী। উপগণসম্পাদক বিষয়ক সম্পাদক পদে আছেন তিনজন। ত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক সম্পাদক পদে আছেন ইমরান জমাদ্দার। উপত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক সম্পাদক পদে আছেন চারজন। স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবাবিষয়ক সম্পাদক শাহরিয়ার ফেরদৌস হিমেল। উপস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবাবিষয়ক সম্পাদক পদে আছেন চারজন। গণযোগাযোগ ও উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক পদে আছেন শেখ শামিম তূর্য। উপগণযোগাযোগ ও উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক পদে আছেন চারজন। সাহিত্যবিষয়ক সম্পাদক আসিফ তালুকদার। উপসাহিত্য সম্পাদক পদে আছেন তিনজন। নাট্য ও বিতর্ক সম্পাদক পদে আছেন জুয়েল মোল্লা। উপনাট্য ও বিতর্ক সম্পাদক পদে আছেন তিনজন। বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়বিষয়ক সম্পাদক আসিফ ইকবাল অনিক। উপবেসরকারী বিশ^বিদ্যালয়বিষয়ক সম্পাদক পদে আছেন পাঁচজন। আপ্যায়ন সম্পাদক পদে আছেন আশরাফুল ইসলাম ফাহাদ। উপআপ্যায়ন সম্পাদক পদে আছেন চারজন। মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক মেহেদী হাসান তাপস। উপমুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক আছেন তিনজন। মানবসম্পদ উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক পদে আছেন নাহিদ হাসান শাহীন। উপমানবসম্পদ উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক পদে চারজন। ছাত্র বৃত্তি সম্পাদক আতাউল গণি কৌশিক। উপছাত্র বৃত্তি সম্পাদক পদে চারজন। কৃষি শিক্ষা সম্পাদক হয়েছেন মাকসুদুর রহমান মিঠু। উপকৃষি শিক্ষা সম্পাদক পদে আছেন তিনজন। কর্মসূচি ও পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন। উপকর্মসূচি ও পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক পদে আছেন চারজন। প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক হায়দার মো. জিতু। উপপ্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক পদে তিনজন। কর্মসংস্থানবিষয়ক সম্পাদক মো. রনি। উপকর্মসংস্থানবিষয়ক সম্পাদক পদে আছেন চারজন। এ ছাড়া সহ-সম্পাদক পদে ৪৭ জন ও সদস্য পদে আছেন ১২ জন।
বিতর্কিতদের কমিটিতে স্থান : ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে স্থান পেয়েছেন চাকরিজীবী, নিষ্ক্রিয়, বিবাহিত, অছাত্র, মাদক মামলার আসামি, হত্যা মামলার আসামিসহ নানা অপরাধীরা। জানা গেছে, সহ-সভাপতি পদে আছেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল। যিনি হত্যা মামলার আসামি। সহ-সভাপতি শাহরিয়ার কবির মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। সহ-সভাপতি পদে বরকত হাওলাদারকে শিক্ষকের গায়ে হাত তোলায় ঢাবি থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়। আরেক সহ-সভাপতি পদে তানজিল ভূঁইয়া তানভীরের বয়স ৩০ এর ঊর্ধ্বে। সহ-সভাপতি আতিকুল রহমান খানের বিরুদ্ধে রয়েছে মাদক ও ইয়াবা সেবনকারী ও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ। পহেলা বৈশাখী কনসার্টে আগুন দেওয়ার অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে। আরেক সহ-সভাপতি মাহমুদুল হাসানের বিরুদ্ধে রয়েছে তার পরিবার জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। দপ্তর সম্পাদক আহসান হাবীব সাবেক চাকরিজীবী এবং তার বিরুদ্ধে বিশ^বিদ্যালয়ের মল চত্বরে বৈশাখী কনসার্টে আগুন দেওয়ার অভিযোগ আছে। সহ-সভাপতি সুরঞ্জন ঘোষের বয়স ত্রিশের ঊর্ধ্বে। সংগঠনটির ২ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ চৌধুরীকে ২০১৪-১৫ সেশনে পরীক্ষায় নকলের দায়ে ঢাবি থেকে তিন বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছিল। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে রয়েছে পহেলা বৈশাখী কনসার্টে আগুন দেওয়ার অভিযোগও। সহ-সভাপতি পদ পাওয়া আরেফিন সিদ্দিকী সুজনকে একসময় ইয়াবা সেবন ও মাদক রাখার জন্য হল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। সহ-সভাপতি সোহেল রানার বয়স ত্রিশের ঊর্ধ্বে। তিনি ছাত্রলীগে নিষ্ক্রিয় ছিলেন বলে জানা গেছে। আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক রাকিনুল হক চৌধুরী ছোটন বর্তমান কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরীর আপন ছোট ভাই বলে জানা গেছে। তিনি ছাত্রলীগে নিষ্ক্রিয়।
পদবঞ্চিতদের ক্ষোভ : ছাত্রলীগের অর্ধশত পদপ্রত্যাশী পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে স্থান না পাওয়াতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ ও সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সোমবার বিকালে মধুর ক্যান্টিন থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। পরে ক্যাম্পাসের বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তারা বিভিন্ন জায়গা প্রদক্ষিণ করেন।
মিছিলে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রলীগের গত কমিটির কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক দেলোয়ার শাহজাদা, প্রচার সম্পাদক সাইফ বাবু, কর্মসূচি ও পরিকল্পনাবিষয়ক উপসম্পাদক রাকিব হোসেন, জসিম উদ্দিন হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহেদ খান, রোকেয়া হলের সভাপতি বিএম লিপি আক্তার, কুয়েতমৈত্রী হলের সভাপতি ফরিদা পারভীন, সাধারণ সম্পাদক শ্রাবণী শায়লা, শামসুন নাহার হল ছাত্রলীগের সভাপতি নিপু তন্বী, সাধারণ সম্পাদক জিয়াসমিন শান্তা প্রমুখ। পদবঞ্চিত গত কমিটির প্রচার সম্পাদক সায়েফ বাবু বলেন, তারা একটি বিতর্কিত কমিটি ঘোষণা করেছেন। এ কমিটিতে শিবির-কোটাধারীদের স্থান দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যারা ক্যাম্পাসে বিগত ১০ বছরে ছাত্রলীগের মিছিল-মিটিং করেছেন, ডাকসু নির্বাচনসহ কোটা সংস্কার আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন তাদের এ কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়নি। আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি দাবি জানাতে চাই এ কমিটিতে বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে যারা প্রকৃত ছাত্রলীগ তাদের যেন স্থান দেওয়া হয়।
এদিকে, সন্ধ্যার পর বিতর্কিতদের কমিটিতে স্থান এবং সক্রিয়দের পদবঞ্চিত করায় মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করতে গেলে হামলার শিকার হয়েছেন পদবঞ্চিতরা। এতে প্রায় অর্ধশত পদবঞ্চিত নেতা উপস্থিত ছিলেন। তারা জানান, ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা এ হামলায় জড়িত।
![]() সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected] |