logo
প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, মঙ্গলবার, মে ১৪, ২০১৯
দেখে দেখে ছাগল পালন করে দক্ষ খামারি
আবদুর রহমান মিন্টু, রংপুর

নেই প্রশিক্ষণ, অন্যকে দেখে আর অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য আবদুর রশীদ হয়ে উঠেছেন একজন দক্ষ খামারি। এখন তার অবসর সময় কাটে ছাগলের পরিচর্যা করে। শখের বশে কেনা একটি ছাগল দিয়ে গত ৮ বছরে বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েকগুণ। এরই মধ্যে ছাগল বিক্রি করেছেন প্রায় ৫ লাখ টাকার। প্রতি ঈদে ছাগল বিক্রি করেও বর্তমানে ছোট বড় মিলে তার ব্লাক বেঙ্গল জাতের ছাগল আছে ৪৩টি। নগরীর রাধাবল্লভ এলাকায় ভাড়া বাড়িতে আবদুর রশীদ গড়ে তুলেছেন এ ছাগলের খামার। চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে নগরীর নবাবগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ি থেকে অবসরগ্রহণ করেন আবদুর রশীদ। চাকরিতে থাকাকালীন তিনি রাতে দায়িত্ব পালন করছেন হাইওয়েতে। তাই দিনের বেলা অনেক সময় হাতে থাকত; কিন্তু কোনো কাজ থাকত না। এ চিন্তা থেকে ২০১১ সালে একটি ব্লাক বেঙ্গল জাতের ছাগলের বাচ্চা ৭০০ টাকা দিয়ে ক্রয় করেন। তখন থেকে চাকরির পাশাপাশি দিনের বেলা ছাগলের পরিচর্যা করতেন। মাঝেমধ্যে আশপাশের খোলা মাঠে কিছু সময়ের জন্য ছাগলের পাল বের করেন। তার স্ত্রী এবং দুই সন্তানও ছাগল পালনে যথেষ্ট সহযোগিতা করেন। এভাবে ছাগলের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। তবে প্রথম দিকে ছাগল লালন-পালনে তাকে বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। ছাগলের অসুখ হলেই শরণাপন্ন হতে হতো সদর ভেটেরিনারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের কাছে। রাধাবল্লভে অবস্থিত ডায়াবেটিক সমিতির মাঠে ছাগলগুলোকে ঘাস খাওনোর সময় আবদুর রশীদ ছাগল পালনের বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, প্রথম দিকে ছাগল পোষাটা শখ ছিল। শখ এখন নেশায় পরিণত হয়েছে। এরই মধ্যে তার বেশকিছু ছাগল চুরি হয়েছে আর অসুখেও মারা গেছে কিছু। তিনি জানান, একটু যতœ নিলে এখান থেকে বাড়তি আয় করা সম্ভব। এক মাস আগে ৪টি খাসি ছাগল ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। ৬ মাসের মধ্যে একটি ছাগল বিক্রির উপযোগী হয়ে ওঠে। তিনি জানান, ছাগলের রোগবালাই বলতে সর্দিজ্বর এবং পাতলা পায়খানা। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে এখন কোনো ছাগলের অসুখ হলেই আগে থেকে তা তিনি বুঝতে পারেন। সময়মতো ওষুধ খাওয়ালেই রোগাক্রান্ত ছাগল ভালো হয়ে যায়। তার অভিযোগ ছাগলের খাদ্য গমের ভুসির দাম বেশি হওয়ায় ছাগল লালন-পালনের খরচ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে প্রতি দিন তার ছাগলের জন্য প্রায় ৮ কেজি ভুসি লাগে। ৩৭ কেজির ভুসির বস্তা কিনতে তার ব্যয় হয় ১ হাজার ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ১ হাজার ১০০ টাকা। তিনি বলেন, যদি ছাগল বেঁধে না রেখে ছেড়ে দিয়ে পালন করা যেত তাহলে তোলা খাবার কম লাগত; কিন্তু বর্তমানে ছাগলের যে দাম ছেড়ে দিয়ে চোখের আড়াল হলেই সেটি চুরির আশঙ্কাই থাকে বেশি। তারপরও নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও সংসারে যে কোনো আর্থিক সংকটে অনেকবার ছাগল বিক্রির টাকা দিয়ে পরিত্রাণ পেয়েছেন। আবদুর রশীদ জানান, আল্লাহ তাকে যতদিন সুস্থ রেখেছেন ততদিন ছাগল পালন অব্যাহত রাখবেন। মো. আবদুর রশীদের পিতৃভূমি জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর উপজেলার রায়কালি ইউনিয়নে। চাকরিসূত্রে তিনি পরিবার নিয়ে রংপুরে বাস করেন। তিনি পুলিশের চাকরি করেছেন ৩৯ বছর। এখন অবসরপ্রাপ্ত। আজ থেকে প্রায় আট বছর আগে রংপুর সিটি করপোরেশন এলাকাধীন শহরের ডায়াবেটিক হাসপাতালের পাশেই ভাড়া বাড়িতে মাত্র ১টি বাংলাদেশি ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগী দিয়ে তার পথচলা শুরু করেন যা এখন একটি পরিপূর্ণ ছাগল খামারে রূপ নিয়েছে। বর্তমানে খামারে মোট ছাগলের সংখ্যা ৪২টি। আবদুর রশীদ বলেন, সম্পূর্ণ দেশি জাতের ছাগল, ব্ল্যাক বেঙ্গলের প্রতি বছর ছাগীপ্রতি বছরে কমপক্ষে ৪ থেকে ৬টি বাচ্চা হয়। এর মাংস অনেক সুস্বাদু ও পুষ্টিকর এবং চামড়ার গুণগতমান অনেক ভালো হওয়ায় এ জাতীয় ছাগল পালন বেশি লাভজনক। বিগত কয়েক বছরে তিনি ছাগল বিক্রির টাকা থেকে শহরের পাশেই একখ- জমি কিনেছেন। বাচ্চাদের লেখাপড়ার খরচ এবং সংসারের যাবতীয় ব্যয়ভার তিনি খামার থেকে লাভের টাকায় চালাচ্ছেন। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস, রংপুর সদর, রংপুর থেকে তিনি ছাগলের কৃমির ট্যাবলেট, পিপিআর রোগের টিকাসহ অন্যান্য পরামর্শ নিয়মিত গ্রহণ করে থাকেন। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ইউএলও), রংপুর সদর, রংপুর ডা. মো. সরোয়ার হোসেন বলেন, আবদুর রশীদ একজন সফল ছাগল খামারি। তিনি তার ছাগল খামারের খাদ্য ব্যবস্থাপনাসহ রোগবালাই ও নিয়মিত টিকা প্রদানের ব্যাপারে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর, রংপুর সদর; রংপুরের উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এবং ভেটেরিনারি সার্জনের পরামর্শ ও সহযোগিতা গ্রহণ করে থাকেন। ইউএলও খামার মালিক আবদুর রশীদকে তার নিজস্ব জমিতে খামার স্থানান্তরের পর সেখানে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে বিনামূল্যে নেপিয়ার এবং পাকচুং-১ জাতের উচ্চফলনশীল ও অধিক পুষ্টিকর ঘাসের বীজ সংগ্রহ করে ঘাস চাষের পরামর্শ দেন। এ ঘাসগুলো ছাগলের অতি প্রিয় খাবার; যা ছাগলের খাদ্য তালিকায় থাকলে ছাগল তুলনামূলকভাবে অনেক স্বাস্থ্যবান, অধিক উৎপাদনশীল এবং রোগবালাই অনেক কম হয়। ফলশ্রুতিতে খামার হবে আগের তুলনায় অধিক লাভজনক। ইউএলও উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে ছাগলের পিপিআর, ক্ষুরা, তড়কাসহ বিভিন্ন রোগের টিকা নিয়মিত প্রদানের পরামর্শ প্রদান করেন। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. শাহজালাল খন্দকার তাকে ভবিষ্যতে ছাগলের খামারটি শহরের পাশেই তার কেনা নিজস্ব জমিতে স্থানান্তরের পরামর্শ দেন। প্রাণিসম্পদ অফিসের পরামর্শে বিজ্ঞানসম্মতভাবে ছাগলের বাসস্থান নির্মাণের পরামর্শ দেন। যেহেতু ছাগলের প্রিয় খাদ্য গাছের ডগার কচি লতাপাতা, সেজন্য জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আবদুর রশীদকে নিজস্ব জমিতে আম, কাঁঠাল, কড়ই, সজনা, কলাগাছ ইত্যাদি বিভিন্ন জাতের গাছ লাগানোর পরামর্শ দেন যাতে এসব গাছ থেকে তার খামারের ছাগলের খাবারের চাহিদা অধিকাংশে পূরণ হয়।

সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected]