logo
প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, বুধবার, মে ১৫, ২০১৯
জাকাত মনে ও ধনে পবিত্রতা আনে
ড. মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী

জাকাতের শাব্দিক অর্থ পবিত্রতা। এ পবিত্রতার ছোঁয়া কেবল গরিবদের জীবনে সৌভাগ্যের পরশ বুলায় না, ধনীদের জীবনেও আলো ছড়ায়। যত বড় ধনী বা ক্ষমতাবান হোক সমাজে কেউ অন্যের সাহায্য ছাড়া চলতে পারে না। সর্বস্তরের সব মানুষের সহযোগিতা বা শ্রম বিনিয়োগে সমাজ ব্যবস্থা সচল থাকে। তবে সম্পদের বণ্টন ব্যবস্থায় অসমতার কারণে একটি শ্রেণী ধনী ও অর্থবিত্তের মালিক হয়। অন্যদিকে বঞ্চিত মানুষ দারিদ্র্যের কষাঘাতে জীবনের ঘানি টানতে বাধ্য হয়। এর কারণ, সমাজে যারা গরিব ও বঞ্চিত শ্রেণি, তাদের সম্পদ গিয়ে ধনীর কাছে জমা হয়। আল্লাহ পাক এ সত্যটির দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন : ‘আর যাদের সম্পদে নির্ধারিত হক রয়েছে যাচনাকরী ও বঞ্চিতদের।’ (সূরা মাআরিজ, ৭০ : ৩৪)। 

এখন প্রশ্ন হলো, কতখানি বাড়তি সম্পদ ধনীদের কাছে এসে জমা হয়েছে বা কি পরিমাণ সম্পদ বঞ্চিতদের ফিরিয়ে দিলে ধনীর সম্পদ পবিত্র হবে? আল্লাহ তায়ালার বিধান অনুযায়ী সে পরিমাণটি হচ্ছে, এক বছর কাল স্থায়ী প্রয়োজনাতিরিক্ত সম্পদের শতকরা আড়াই শতাংশ। এই জাকাত গরিব ও বঞ্চিত শ্রেণির হক। কোনো অবস্থাতেই গরিবের জন্য ধনীর দয়ার দান নয়। এজন্য 

জাকাতকে ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের অন্তর্ভুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।
জাকাত কোথায়, কাকে দেওয়া যাবে তার আটটি খাত কোরআন মজিদে নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। কি কি সম্পদের ওপর জাকাত ফরজ তাও ফিকাহ শাস্ত্রে বর্ণিত আছে। নামাজ আদায় করার জন্য নামাজের কেরাত, তসবিহ ও মাসয়ালা প্রভৃতি জানা যেমন ফরজ, তেমনি জাকাতদাতার উপর এ সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জন করাও ফরজ। রমজান মাসে যে কোনো ইবাদতের সওয়াব কমপক্ষে ৭০ গুণ বেশি বিধায় সম্পদের হিসাব করে রমজানে জাকাত আদায়ের রেওয়াজ চলে আসছে ইসলামের শুরু থেকে। এ জাকাত দিতে হবে সম্পদের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব করে। সঠিক হিসাব না করে আন্দাজে গরিবদের কিছু লুঙ্গি-শাড়ি দান করলে জাকাত আদায় হবে না। জাকাত আদায় হওয়ার জন্য গ্রহীতাকে মালিক বানিয়ে দেওয়া শর্র্ত। গ্রহীতা যতক্ষণ হস্তগত না করবে ততক্ষণ জাকাত আদায় হবে না। 
কাজেই কেউ যদি নিজের তত্ত্ববধানে কোনো ট্রাস্ট করেন এবং জাকাতের টাকা সেই ট্রাস্টে জমা রাখেন, যতক্ষণ তা জাকাত নেওয়ার উপযুক্ত খাতে হস্তান্তর করা না হবে ততক্ষণ জাকাত আদায় হবে না। 
নিজের ছেলেমেয়ে, নাতি-নাতনি বা অধঃস্তনদের এবং মা-বাবা, দাদা-দাদি, নানা-নানি প্রভৃতি ঊর্ধ্বতনদের জাকাত প্রদান করলে আদায় হবে না। তাদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব জাকাতের ঊর্ধ্বে এবং তা পালন করতে প্রত্যেকে বাধ্য। তাদের বাইরে গরিব আত্মীয়স্বজনকে জাকাত দিলে দ্বিগুণ সওয়াব পাওয়া যাবে। একটি সওয়াব জাকাত দানের, আরেকটি আত্মীয়তার বন্ধন মজবুত করার। (মিশকাত : ১৮৪৩)। আত্মীয়স্বজনের বেলায় গ্রহীতাকে জাকাত বলে দেওয়া জরুরি নয়; বরং ঈদের খরচ বা বখশিশ বলে দান করলেই উত্তম হবে। কারণ, তাতে তারা নিজেকে ছোট ভাবতে বাধ্য হবে না। জাকাত আদায় হওয়ার জন্য গ্রহীতা জাকাত নেওয়ার উপযুক্ত কিনা সেটাই বিবেচ্য বিষয়।
জাকাতের দ্বারা সমাজের গরিব শ্রেণির অনেক উপকার তো চাক্ষুষ দেখা যায়। স্বয়ং জাকাতদাতার জন্যও বহুবিধ উপকার রয়েছে। যেমন জাকাত অন্তরকে লোভ ও কলুষতা থেকে মুক্ত করে। দানশীলতার অভ্যাসের সূত্রে মহত্ব, ব্যক্তিত্ব ও উন্নত চরিত্রের বিকাশ ঘটায়। আল্লাহর দেওয়া নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা আদায় হয়। দুনিয়া প্রেমের চিকিৎসা হয়। ধনীর প্রতি গরিবের হিংসা-বিদ্বেষ দূর হয়। ধনী-গরিবে পারস্পরিক ভালোবাসা ও সহযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি হয়। সর্বোপরি জাকাত কৃপণতার মহৌষধ। ধনীদের মনে সম্পদের প্রতি যে লোভ ও কৃপণতা থাকে নিঃস্বার্থভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে সম্পদ দান করলে মনের লোভ স্বার্থপরতা ও কৃপণতার চিকিৎসা হয়ে যাবে। জাকাত ইসলামি রাষ্ট্র ও সমাজের অর্থনীতির চালিকাশক্তি। কেননা তা দেশের অর্থনীতি গতিশীল রাখতে দেহে রক্ত সঞ্চালনের ভূমিকা রাখে। সবচেয়ে বড় কথা জাকাত বান্দার আর্থিক ইবাদত।  

সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected]