ছয় জেলায় নানা সময় ধর্ষণের ঘটনায় সোমবার রাত ও মঙ্গলবার যাবজ্জীবন কারাদ-, মামলা এবং গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১২ জনকে। এর মধ্যে সিরাজগঞ্জে গণধর্ষণ মামলার ছয়জনের যাবজ্জীবন, নারায়ণগঞ্জে ধর্ষণের চেষ্টায় একজনকে গ্রেপ্তার, চট্টগ্রামে মাদ্রাসা ছাত্রী ধর্ষণে শিক্ষককে গ্রেপ্তার, রূপগঞ্জে প্রেমিকাকে ধর্ষণে প্রেমিকসহ গ্রেপ্তার তিনজন এবং বাঘায় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া টাঙ্গাইলে ছাত্রকে বলাৎকারে মাদ্রাসা শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের খবরÑ

সিরাজগঞ্জ : শাহজাদপুর উপজেলায় গণধর্ষণ মামলার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ছয়জনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদ- দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের বিনাশ্রম কারাদ- দেওয়া হয়েছে। সিরাজগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক ফজলে খোদা মো. নাজির এ রায় দেন। দ-প্রাপ্তরা হলেন- উপজেলার দরগার চর গ্রামের আলহাজ, বুলবুল, তোতা, আলমগীর, জুয়েল রানা ও রতন। ওই আদালতের বিশেষ পিপি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ লাভলু এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি দরগার চর গ্রামের ফরিদ সরকারের স্ত্রী নাজমা খাতুন বাবা-মায়ের সঙ্গে মাসুম বিল্লাহর বাড়িতে ওরস শুনতে যান। ওরস শেষে ফেরার সময় ভুল করে ঘরের চাবি বাবার কাছে রেখে আসে নাজমা। পরে স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে চাবি আনতে যাওয়ার পথে দ-প্রাপ্তরা তাদের পথ রোধ করে। একপর্যায়ে তারা ফরিদকে মারপিট করে তাড়িয়ে দিয়ে তাকে গণধর্ষণ করে। এ ঘটনা স্থানীয়রা টের পেয়ে তাদের উদ্ধার করে এবং তোতা ও আলহাজকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। এ ব্যাপারে ধর্ষিতা নিজেই সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা করেন। 
নারায়ণগঞ্জ : মহানগরের সিদ্ধিরগঞ্জে টিভি ও মোবাইল ফোনে পর্ণ ভিডিও দেখিয়ে সাত বছরের দুই শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে রিয়াজ নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা স্থানীয় একটি মাদ্রাসার প্রথম শ্রেণির ছাত্রী। এ ঘটনায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলা করেন এক শিশুর মা। রিয়াজ পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী থানার পশুরী বুনিয়া এলাকার বেলায়েত আলী সিকদারের ছেলে। মামলার বরাত দিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (অপারেশন) এইচএম জসীম উদ্দিন জানান, অভিযোগকারী ও তার প্রতিবেশী তারা স্বামী-স্ত্রী উভয়ে গার্মেন্টে কাজ করে। তারা কাজে যাওয়ার পর তাদের দুই সন্তানকে ডেকে নিয়ে টিভি দেখার কথা বলে পর্ণ ছবি দেখিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে রিয়াজ। 
চট্টগ্রাম : বাঁশখালীতে ১২ বছর বয়সী এক মাদ্রাসা ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলার আসামি শিক্ষক মো. ফয়জুল্লাহকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। মনকির চর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। র‌্যাব-৭ এর মিডিয়া অফিসার মো. মাশকুর রহমান জানান, ২৪ এপ্রিল ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করে মো. ফয়জুল্লাহ। পরে এ ঘটনায় থানায় মামলা হলেও পলাতক ছিল সে। তাকে বাঁশখালী থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। 
রূপগঞ্জ : রূপগঞ্জ উপজেলায় মায়ের অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে প্রেমিক তার প্রেমিকাকে ধর্ষণ করেছে। এ ঘটনায় ধর্ষিতা কলেজ ছাত্রী রূপগঞ্জ থানায় মামলা করেন। পুলিশ প্রেমিক রনিসহ তার দুই বন্ধু হৃদয় ও রাসেল মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে। উপজেলার তারাব পৌরসভার বরপা রসুলপুর এলাকায় ঘটে এ ঘটনা। রূপগঞ্জ থানার ওসি মাহমুদুল হাসান জানান, চার বছর আগে শরিয়তপুরের সদর এলাকার ওই ছাত্রীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে বরপা রসুলপুর এলাকার এপি খান ডাক্তারের বাড়ির ভাড়াটিয়া কাজল মিয়ার ছেলে মো. রনি মিয়ার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ৮ মে রনি ফোনে ওই ছাত্রীকে জানায়, তার মা অসুস্থ তাকে দেখতে চায়। এ খবরে ওই ছাত্রী বিকালে তার সঙ্গে দেখা করতে রসুলপুরে আসে। সে সুকৌশলে তাকে এপি খান ডাক্তারের বাড়ির নিচতলার একটি কক্ষে নিয়ে যায়। সেখানে রনি ও তার দুই বন্ধু হৃদয় ও রাসেলের সহযোগিতায় তাকে ধর্ষণ করে। পুলিশ ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে গ্রেপ্তারদের নারায়ণগঞ্জ আদালতে প্রেরণ করেছেন। 
বাঘা (রাজশাহী) : বাঘা উপজেলায় ধর্ষণের অভিযোগে রাসেল নামের এক যুবককে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। জানা গেছে, উপজেলার ছাতারি গ্রামের আমিরুল ইসলামের ছেলে রাসেলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল পাশের গ্রামের নবম শ্রেণির এক স্কুল ছাত্রীর। ঘটনার দিন সে ওই ছাত্রীর ঘরে দেখা করতে আসে। এরপর তাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্ষণ করে। এ ঘটনা বুঝতে পেরে স্থানীয় লোকজনসহ পরিবারের লোক তাকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেন। বাঘা থানার ওসি মহাসীন আলী জানান, এ ঘটনায় ধর্ষণ মামলার পর আদালতের মাধ্যমে ওই ধর্ষককে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। 
টাঙ্গাইল : কালিহাতীতে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র বলাৎকারের অভিযোগে আ. জলিল নামের এক মাদ্রাসা শিক্ষককে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করেছে পুলিশ। তিনি উপজেলার রামপুর দারুল কোরআন নিজামিয়া মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক ও ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী থানার দুর্গাপুর গ্রামের জাবেদ আলীর ছেলে। এ ঘটনায় ছাত্রের দাদা কালিহাতী থানায় মামলা করেন। মামলা সূত্রে জানা গেছে, ওই ছাত্র আ. জলিলের রুমে হাজিরা খাতা দেওয়ার জন্য প্রবেশ করলে তিনি তাকে বলাৎকার করেন। শিক্ষককে টাঙ্গাইলের আদালতে হাজির করলে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন বলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই নাসির উদ্দিন জানান।