প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, শুক্রবার, মে ১৭, ২০১৯ | |
পাটের জিন রহস্য উন্মোচনের পর এটা প্রত্যাশা করা গিয়েছিল যে, পাটের সুদিন ফিরবে। সরকারের তরফেও পাট নিয়ে উচ্চাশা পোষণ করা হয় এবং এ খাতের উন্নয়নে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। সরকারের সদিচ্ছার ফলে বন্ধ হয়ে থাকা কয়েকটি পাটকল চালু করা হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন কেটে গেলেও এ খাতের দৈন্যদশার অবসান হওয়ার আশু কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বরং অবস্থা আরও শোচনীয় হয়ে পড়েছে। এদিকে খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকলের পরিস্থিতি নিয়ে আলোকিত বাংলাদেশে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব পাটকলে শুধু কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং শ্রমিকদের বেতন ও মজুরি বাবদ ৭৫ কোটি ১৪ লাখ ৭০০ টাকা বকেয়া হয়ে পড়েছে। এছাড়া পাট ক্রয়সহ অন্যান্য দেনার পরিমাণ আরও অনেক বেশি। এদিকে শ্রমিকদের অব্যাহত ধর্মঘটের কারণে পাটকলগুলোতে লোকসানের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। শ্রমিকদের ধর্মঘট অব্যাহত থাকলে লোকসানের পরিমাণ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তথ্যমতে, খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোতে প্রায় ৩২৫ কোটি টাকা মূল্যের পাটজাত পণ্য মজুত রয়েছে। বিদেশে বাজার মন্দার কারণে প্রায় বছরজুড়ে পড়ে থাকা বিশাল অঙ্কের এ পাটজাত পণ্য বিক্রি হচ্ছে না। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের পাটজাত পণ্যের মূল বাজার হচ্ছেÑ সুদান, ঘানা, সিরিয়া, ইরান ও ভারত। কিন্তু গত এক বছর ধরে ওই দেশগুলোতে বাংলাদেশের পাটজাত পণ্য রপ্তানি বন্ধ রয়েছে।
সার্বিক বিবেচনায়, দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো বহুমুখী সমস্যায় আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা পড়েছে। পাট খাত নিয়ে বহু প্রত্যাশার কথা শোনা গেলেও বাস্তবে তা যে অন্তসারশূন্য বাহুল্য মাত্র, তা এরই মধ্যে স্পষ্ট হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো এমন নাজকু অবস্থায় উপনীত হয়েছে যে, শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দেওয়াও দুরূহ হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় শ্রমিকরা ধর্মঘটে নেমেছেন, যা এখন অগ্নিগর্ভ অবস্থার দিকে মোড় নিতে শুরু করেছে। প্রসঙ্গত, ১৫ এপ্রিল ৯৬ ঘণ্টা ধর্মঘটের কর্মসূচি শুরু হলে বিজেএমসি চেয়ারম্যান ও শ্রম প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে পাটকল শ্রমিক নেতাদের সমঝোতার ভিত্তিতে শ্রমিকরা কর্মসূচি প্রত্যাহার করে কাজে যোগ দেন। কিন্তু প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মজুরি না পাওয়ায় শ্রমিকরা আবারও বিক্ষুব্ধ হয়ে রাস্তায় নামেন। বকেয়া মজুরি, মজুরি কমিশন, গ্র্যাচুইটি, প্রভিডেন্ট ফান্ড, বদলি শ্রমিকদের স্থায়ীকরণসহ ৯ দফা দাবি শ্রমিকদের। পাট শ্রমিকদের দাবিগুলোর যৌক্তিক ভিত্তি রয়েছে; তবে এ নিয়ে বড় ধরনের সহিংসতা সৃষ্টি প্রত্যাশিত নয়। অন্যদিকে কর্তৃপক্ষের উচিত পাট খাতে সমস্যা এবং শ্রমিকদের দাবিগুলো ঝুলিয়ে না রেখে সমাধানের পথ খুঁজে বের করা।
পাট আমাদের নিজস্ব অর্থকরী ফসল; তাই এ খাতের উন্নয়নে প্রভূত পৃষ্ঠপোষকতা আবশ্যক। দেশ-বিদেশে বিপুল বাজার থাকলেও কেন এ খাতের দৈন্যদশা, তা নিয়ে বিষদ অনুসন্ধান জরুরি। সরকার বিভিন্ন সময়ে পাটজাত পণ্য ব্যবহারে উৎসাহ জুগিয়ে আসছে, বেসরকারি পর্যায়েও পাটপণ্যের বহুমুখী ব্যবহার বিস্তারে উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু তা যে বিপুলভাবে আদৃত হয়নি, এটা স্পষ্ট। অন্যদিকে বিদেশে বিপুল চাহিদা থাকলেও গত এক বছর ধরে কেন পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি থেমে আছে, বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া দরকার। চলছে পবিত্র রমজান, সামনে ঈদুল ফিতর। এ অবস্থায় মানবিক কারণেই শ্রমিকদের বেতন-ভাতা সুরাহা হওয়া জরুরি। যৌক্তিক সিদ্ধান্ত এবং পরিকল্পনার মাধ্যমে পাট খাতের শ্রীবৃদ্ধি নিশ্চিত হোকÑ এটাই এখন সময়ের দাবি।
![]() সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected] |