logo
প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, শুক্রবার, মে ১৭, ২০১৯
আজ ১২তম তারাবিতে সূরা ইসরা এবং সূরা কাহফ (১-৭৪) পড়া হবে। পারা হিসেবে পড়া হবে ১৫তম পারা। আজকের তারাবিতে পঠিতব্য অংশের বিষয়বস্তু তুলে ধরা হলো
আজকের তারাবি ১২

দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশের ইসলাম পাতায় ‘আজকের তারাবি’ শিরোনামে প্রতিদিন তারাবি নামাজে কোরআন মজিদের যে অংশটুকু তেলাওয়াত করা হবে তার সারমর্ম ২৭ রমজান পর্যন্ত ছাপানো হবে। মসজিদের সম্মানিত ইমাম বা কমিটির দায়িত্বশীলদের খেদমতে তারাবির আগে বা পরে এ অংশটুকু মুসল্লিদের উদ্দেশে পড়ে শোনানোর অনুরোধ জানাচ্ছি।

১৭. সূরা ইসরা (মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ১১১, রুকু ১২)
ইসরা অর্থ রাত্রে নিয়ে যাওয়া। এই সূরায় মেরাজের কাহিনীর উল্লেখ আছে। নবী মুহাম্মদ (সা.) কে রাতে মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসায়, অতঃপর সেখান থেকে ঊর্ধ্বাকাশে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সূরায় সে কাহিনীর প্রতি ইঙ্গিত থাকায় সূরাটির নাম ‘ইসরা’। মেরাজের ঘটনা ছাড়াও সূরার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে :
বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির কারণে ইহুদিরা বিভিন্ন সময় শাস্তিতে নিপতিত হয়েছে। মূলত ফেতনা সৃষ্টি ইহুদিদের চারিত্রিক সমস্যা। (৪-৮)। 
সূরায় কোরআনুল কারিমের বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্যের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। এরপর মানুষের একটি স্বভাবের কথা বলা হয়েছে যে, সে বড়ই ত্বরাপ্রবণ। মানুষকে পৃথিবীর বিভিন্ন নিদর্শন দেখে চিন্তাভাবনা করার দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। তকদিরে যা আছে তাই হবে এবং যেমন কর্ম তেমনই হবে ফলÑ এ বিশ্বাস দৃঢ় করার প্রতি আহ্বান জানানোর পর সামাজ জীবনের প্রায় ১৩টি ইসলামি শিষ্টাচারের বর্ণনা দেওয়া হয়েছ। প্রকৃতার্থে আখলাক ও শিষ্টাচারের মাধ্যমেই একজন ব্যক্তি বা একটি সমাজ সম্মান-মর্যাদার উপযুক্ত হয়। ২৩নং আয়াত থেকে ৩৯নং আয়াত পর্যন্ত খুব গুরুত্বসহ শুধু এ কথাই বলা হয়েছে, আল্লাহর হক ও বান্দার হক আদায় করো। বিশেষত, মা-বাবার সামনে ‘উফ’ শব্দটি পর্যন্ত উচ্চারণ করতে নিষেধ করা হয়েছে।
এরপর মুশরিকদের বিভিন্ন ভ্রান্ত বিশ্বাস রদের পর সূরায় কোরআনুল কারিমের মাহাত্ম্য, সত্যতা, অলৌকিকত্ব, কোরআন অল্প অল্প করে অবতীর্ণ হওয়ার হিকমত, আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষকে বিশেষ সম্মান দান, মানুষকে রুহ, আত্মা ও জীবনের নেয়ামত প্রদান, নবী করিম (সা.) কে তাহাজ্জুদ নামাজের হুকুম এবং মুসা (আ.) ও ফেরআউনের কাহিনি প্রসঙ্গে আলোচনা রয়েছে।
সূরার শেষে বলা হয়েছে, মহান আল্লাহ সব ধরনের শরিক এবং সন্তান-সন্ততি থেকে পবিত্র, আর তিনি আল আসমাউল হুসনা তথা সব সুন্দরতম নামের অধিকারী, পবিত্র নামগুলো তো তারই জন্য। 
১৮. সূরা কাহফ (মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ১১০, রুকু ১২)
কাহফ অর্থ গুহা। যেহেতু সূরায় গুহাবাসীর কাহিনি বর্ণনা করা হয়েছে তাই সূরার নাম কাহফ। সূরাটির বহু ফজিলতের কথা একাধিক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। সূরা কাহফের শুরু ও শেষের দশ আয়াত মুখস্থ করলে দাজ্জালের ফেতনা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। নবীজি (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন সূরা কাহফ তেলাওয়াত করে, তার জন্য দুই জুমার মধ্যবর্তী স্থান আলোঝলমলে করে দেওয়া হয়। 
সূরায় মৌলিকভাবে তিনটি কাহিনি এবং তিনটি উপমা রয়েছে। প্রথম কাহিনিটি আসহাবে কাহফ সম্পর্কিত। কয়েকজন ঈমানদার যুবককে মূর্তি পূজায় বাধ্য করা হচ্ছিল। কিন্তু তারা ঈমান রক্ষার জন্য বেরিয়ে পড়েন। একটি পাহাড়ের গুহায় তারা আশ্রয় নেন। গুহায় আল্লাহ তায়ালা তাদের ৩০৯ বছর ঘুম পাড়িয়ে রাখেন। ঘুম ভাঙার পর তাদের একজন খাদ্য সংগ্রহের জন্য শহরে এলে লোকজন তাকে চিনে ফেলে। তিন শতাব্দীর ব্যবধানে পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন ঘটে গিয়েছিল। শিরকপন্থিদের কর্তৃত্ব শেষ হয়ে গিয়েছিল। এক আল্লাহে বিশ্বাসীরা তখন ক্ষমতায়। ঈমানের জন্য কোরবান এই নওজোয়ানরা তখন দেশ ও জাতির কাছে সাহসী বীর খেতাব পায়। (৯-২৬)।
দ্বিতীয় কাহিনিটি হজরত মুসা ও খিজর (আ.) এর, আর তৃতীয় কাহিনি ফুলকারনাইনের। কাহিনি দুটি ১৬তম পারার আলোচ্য বিষয়ের অধীনে আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ।
এ কাহিনিগুলো ছাড়াও সূরা কাহফে তিনটি উপমার উল্লেখ রয়েছে। 
প্রথম উপমাটি একটি গল্পের আকারে উল্লেখ করা হয়েছে। এক ব্যক্তি ছিল অঢেল সম্পদের মালিক। সম্পদের প্রাচুর্য দেখে সে আখেরাতের ব্যাপারে গাফেল হয়ে যায়। কেয়ামত অস্বীকার করে বসে। তার এক বন্ধু ছিল ঈমানদার, সে তাকে অনেক বোঝায়। কিন্তু বিত্তশালী বন্ধুটি সদুপদেশ শোনেনি। এরপর এক সময় তার ধনসম্পদ ও জনবল সব বিনাশ হয়ে যায়। ফলে আফসোস করতে করতেই তার জীবন শেষ হয়। (৩২-৪৪)। মূলত আল্লাহর প্রতি অবিশ্বাসের পরিণাম কখনোই সুখকর হতে পারে না।
দ্বিতীয় যে উপমাটি মহান আল্লাহ তায়ালা এই সূরায় বর্ণনা করেছেন তা হলো, ‘আর তাদের সামনে দুনিয়ার জীবনের উপমা বলে দাও, দুনিয়ার উপমা হলো, যেমন আমি আসমান থেকে পানি বর্ষণ করলাম। ফলে জমিনের উদ্ভিদের সঙ্গে মিলে তা ব্যাপক উৎকর্ষ সাধন করল। (জমিন ফলে ফুলে ভরে গেল।) এরপর (কী হলো?) সবকিছু শুকিয়ে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেল। বাতাসের প্রবাহে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল।’ মূলত পৃথিবীর সবকিছুই অস্থায়ী ও নশ্বর। এসব নেয়ামত দেখে শুধু মূর্খ লোকেরাই ধোঁকার শিকার হতে পারে। প্রকৃত বুদ্ধিমানরা জানেন, এ জীবনের যাবতীয় উপকরণ সাময়িক সৌন্দর্যমাত্র, চিরস্থায়ী জীবনের জন্য কাজে লাগবে শুধুই নেক আমল। (৪৫-৪৯)।
সূরায় বর্ণিত তৃতীয় উপমাটি হলো, অহংকার ও ধোঁকার। উপমটি আদম (আ.) এর সঙ্গে ইবলিসের কাহিনী আলোচনার মধ্য দিয়ে বর্ণনা করা হয়েছে। ইবলিস অহংকারবশত আল্লাহর হুকুম সত্ত্বেও আদম (আ.) কে সিজদা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। তার ধারণা ছিল, আমিই শ্রেষ্ঠ, আর যে শ্রেষ্ঠ সে কীভাবে তার নিচের কাউকে সিজদা করবে? (৫০)।
এ ঘটনার অন্তরালে মহান আল্লাহ মানুষকে শিক্ষা দিচ্ছেন, কখনোই অহংকার ও আত্মম্ভরিতার শিকার হবে না এবং আল্লাহর হুকুমের সামনে যুক্তিতর্ক খাটাবে না, কেননা বন্দেগির দাবি হলো নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ ও আনুগত্য। যুক্তি উপস্থাপন ও অস্বীকার তো বন্দেগির খেলাফ।

রাশেদুর রহমান
পেশ ইমাম ও খতিব, বুয়েট সেন্ট্রাল মসজিদ

সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected]