logo
প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, শুক্রবার, মে ১৭, ২০১৯
সংসদীয় কমিটিতে উপস্থিত হননি এমডি
ওয়াসার প্রতিবেদনেই ময়লা পানির তথ্য
নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা ওয়াসার পানি শতভাগ সুপেয় বলে সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান দাবি করলেও ওয়াসার প্রতিবেদনে রাজধানীর ১০টি অঞ্চলের ৫৯টি এলাকায় ময়লা পানির তথ্য উঠে এসেছে। গেল তিন মাসে ওয়াসা লিংক ১৬১৬২-এ ওয়াসা এসব এলাকা থেকে অভিযোগ পেয়েছে। ওইসব এলাকা উল্লেখ করে ১৩ মে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে ওই প্রতিবেদন দেয় ওয়াসা, যা বৃহস্পতিবার আদালতে উপস্থাপন করা হয়। এ দিকে অনুমতি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খানকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তিনি উপস্থিত হননি। এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন কমিটির সদস্যরা।

প্রতিবেদনে এলাকাগুলো রাজধানীর ১০টি অঞ্চলের ৫৯টি এলাকায় ময়লা পানির তথ্য উঠে এসেছে। মডস জোন-১ : যাত্রাবাড়ী, বাসাবো, মুগদা, রাজারবাগ, কুসুমবাগ, জুরাইন, মানিকনগর, মান্ডা, ধোলাইপাড় ও মাতুয়াইল। মডস জোন-২ : ভাগলপুর, লালবাগ, বকশীবাজার ও শহীদনগর। মডস জোন-৩ : জিগাতলা, ধানমন্ডি, শুক্রাবাদ, কলাবাগান, ভূতেরগলি ও মোহাম্মদপুর। মডস জোন-৪ : শেওড়াপাড়া, পীরেরবাগ, মণিপুর, পাইকপাড়া, কাজীপাড়া ও মিরপুর। মডস জোন-৫ : মহাখালী ও তেজগাঁও। মডস জোন-৬ : সিদ্ধেশ্বরী, শাহজাহানপুর, খিলগাঁও, মগবাজার, নয়াটোলা, রামপুরা, মালিবাগ ও পরীবাগ। মডস জোন-৭ : কদমতলী, ধনিয়া, শ্যামপুর, রসুলবাগ, মেরাজনগর, পাটেরবাগ, শনিরআখড়া, কোনাপাড়া ও মুসলিম নগর। মডস জোন-৮ : বাড্ডা, আফতাবনগর, বসুন্ধরা ও ভাটারা। মডস জোন-৯ : উত্তরা, খিলক্ষেত, ফায়েদাবাদ, মোল্লারটেক ও রানাভোলা। মডস জোন-১০ : কাফরুল, কাজীপাড়া, মিরপুর, কচুক্ষেত ও পল্লবী।
এসব এলাকার পানিতে ময়লা পানির প্রবণতা সবচেয়ে বেশি বলে উল্লেখ করা হয়েছে ওয়াসার এমডি স্বাক্ষরিত ওই প্রতিবেদনে। 
হাইকোর্টের আদেশে মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটি প্রতিবেদন দিয়ে বলেছে, এ ১০টি জোনের প্রত্যেক এলাকা থেকে ৩৫৫টি নমুনা সংগ্রহ করা হবে। ফলে মোট নমুনার সংখ্যা দাঁড়াবে ১ হাজার ৬৫টি। এ ১ হাজার ৬৫টি নমুনা করে তিনটি ল্যাবরেটরিতে রোগজীবাণু ও ভৌত রাসায়ণিক সংক্রান্ত পরীক্ষা করতে খরচ হবে ৭৫ লাখ ৬১ হাজার ৫০০ টাকা।
বৃহস্পতিবার বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চে উপস্থাপন করা হয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও পানি পরীক্ষায় এ মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটির প্রতিবেদন। 
এরপর আদালত এ বিষয়ে মতামত জানতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগের (মাইক্রোবায়োলজি) চেয়ারম্যান ড. সাবিতা রেজওয়ানা রহমানকে আসতে বলেছেন আদালত। আগামী ২১ মে সকাল সাড়ে ১০টায় এ অধ্যাপককে আসতে বলা হয়েছে বলে জানান রিট আবেদনকারী আইনজীবী।
আদালতে স্থানীয় সরকারের পক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু। রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী তানভীর আহমেদ। আর ওয়াসার পক্ষে শুনানিতে ছিলেন এম মাসুম।
রিট আবেদনকারীর আইনজীবী তানভীর বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ওয়াসার পানি পরীক্ষার জন্য কত টাকা ব্যয় হবে, সেটা জানানোর কথা ছিল। সেটা আজকে প্রতিবেদন আকারে দিয়েছে।  গেল তিন মাসে ২৯২ গ্রাহকের অভিযোগের মধ্যে ঢাকার ১০টি জোনের ৫৯টি এলাকার পানি সবচেয়ে দূষিত বলে ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। 
নমুনা পরীক্ষার জন্য ৭৫ লাখ ৬১ হাজার ৫০০ টাকা খরচের হিসাব দেওয়ার কথা জানিয়ে এ আইনজীবী বলেন, এ টাকা যেহেতু বেশি, তাই কোর্ট মনে করছে, যদি কম নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয় ধারাবহিকভাবে, সেক্ষেত্রে খরচ কমানো যায় কি না? কিংবা সামগ্রিক ফলটা আসবে কি না?
কোর্ট এবং আইনজীবী যেহেতু কেউই এ বিষয়ে এক্সপার্ট না এবং একজন এক্সপার্টের মতামত দরকার, তাই কমিটিতে যে তিনজন আছেন তাদের মধ্য থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সাবিতা রিজওয়ানা রহমানের মতামত জানতে তাকে ২১ মে সাড়ে ১০ ১০টায় আসতে বলা হয়েছে। 
আইনজীবী তানভীর বলেন, আমার একটি আবেদন ছিল। ওয়াসার এমডি সম্প্রতি গণমাধ্যমে কথা বলেছেন যে, ওয়াসার পানি শতভাগ সুপেয়। এ কারণে মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হচ্ছে। সেই কারণে উনি যাতে আর কোনো স্টেটমেন্ট না দেন, সেজন্য আবেদনটা করেছিলাম। কারণ উনার স্বাক্ষরিত যে রিপোর্টটা, সেখানে ৫৯টি এলাকার পানি উনি নিজেই বলেছেন দূষিত। যেহেতু উনি এক জায়গায় বলেছেন, শতভাগ সুপেয় পানি আবার উনার দেওয়া প্রতিবেদনে ৫৯টি এলাকার পানি সবচেয়ে দূষিত, সেক্ষেত্রে এটা তো স্ববিরোধী বক্তব্য বাংলাদেশের পানি সরবরাহ, পয়ঃনিষ্কাশন, স্বাস্থ্যবিধি ও দরিদ্রতা নিয়ে সম্প্রতি বিশ্ব ব্যাংকের একটি প্রতিবেদন ও প্রতিবেদন নিয়ে প্রকাশিত খবর যুক্ত করে গেল বছর ১৪ অক্টোবর হাইকোর্টে রিট আবেদনটি করেন তানভীর আহমেদ। ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত পানি পরীক্ষার নির্দেশনার পাশাপাশি রুলও জারি করেন। গেল বছর ৬ নভেম্বর হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশে ঢাকা ওয়াসার পানি পরীক্ষার জন্য চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়।
এ কমিটির দেওয়া এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নমুনা সংগ্রহ করে তার নির্দিষ্ট পরীক্ষার পর বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন তৈরি করতে একটি তহবিলের পাশাপাশি ল্যাবরেটরিসহ ঢাকা ওয়াসার সামগ্রিক প্রচেষ্টা দরকার। এসব কাজের জন্য যদি তহবিল গঠনও করা হয় এবং বিরতিহীনভাবে ওয়াসার তিনটি ল্যাবরেটরিতে একযোগে কাজ করলে এ প্রতিবেদন তৈরি করতে কমপক্ষে ৪ মাস সময় প্রয়োজন
এ দিকে অনুমতি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খানকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তিনি উপস্থিত হননি। এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেন কমিটির সদস্যরা। এ বিষয়ে বৈঠকে উপস্থিত স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে এমডির অনুপস্থিতির কারণ জানতে চাওয়া হলে তিনি কোনো উত্তর দিতে পারেননি। পরে কমিটির পক্ষ থেকে পরবর্তী বৈঠকে তার উপস্থিতি নিশ্চিত করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
কমিটি সূত্র জানায়, ঢাকা ওয়াসার পানির মান ও চলমান প্রকল্পগুলো নিয়ে আলোচনার জন্য ওয়াসার এমডিকে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। বৃহস্পতিবার সকালে নির্ধারিত সময়ে কমিটির সভাপতি মো, আবদুস শহীদের সভাপতিত্বে কমিটির বৈঠক শুরু হলেও তিনি উপস্থিত হননি। অনুপস্থিতির কারণ সম্পর্কে উপস্থিত সচিবের কাছে কমিটির পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ওনাকে (এমডি) পত্রের মাধ্যমে জানানো হয়। ওভার টেলিফোনেও বিষয়টি অবহিত করা হয়। অনুপস্থিতির কারণ সম্পর্কে তিনি জানেন না। তাকে যথাযথভাবে উপস্থিত হওয়ার জন্য বার্তা দিলেও তিনি কেন আসেননি, তার প্রকৃত কারণ তিনিই বলতে পারবেন। সূত্র আরও জানায়, সচিবের বক্তব্যের পর কমিটির সভাপতি আবদুস শহীদ, কমিটির সদস্য ও প্রধান হুইপ নুর-ই-আলম চৌধুরী এবং ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসসহ উপস্থিত কমিটির সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অনুপস্থিতির কারণ তার আগেই জানানো ছিল বলে তারা মন্তব্য করেন। কমিটির পক্ষ থেকে অনুপস্থিতির কারণ জানানোর পাশাপাশি পরবর্তী বৈঠকে তার উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য বলেন। এছাড়া বৈঠকে জনবহুলপূর্ণ ঢাকাবাসীকে সুপেয় পানি সরবরাহ করার জন্য ঢাকা সিটি করপোরেশনের ন্যায় ঢাকা উত্তর ওয়াসা ও ঢাকা দক্ষিণ ওয়াসা করার সুপারিশ করা হয়।

সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected]