
প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, রবিবার, মে ১৯, ২০১৯ | |
তারাবিহ অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ নামাজ, যার দ্বারা বান্দার জীবনের গুনাহ ক্ষমা করা হয়। তারাবিহ নামাজের ফজিলত ও মর্যাদা সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসে ঈমানের সঙ্গে শুধু সাওয়াবের আশায় রাত জেগে ইবাদত করবে, তার অতীতের সব (সগিরা) গোনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ২০০৮, সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৭৫৯, সুনানে দারেমি, হাদিস নং ১৮১৭, মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং ৯৪৪৫, মুসনাদে হুমাইদি, হাদিস নং ১০৩৭) সকল মুহাদ্দিসের মতে রাত জেগে ইবাদত বলতে তারাবিহ নামাজের কথা বলা হয়েছে।
রাসুল (সা.)-এর যুগে আনুষ্ঠানিকভাবে জামাতে তারাবিহ নামাজ পড়ার ব্যবস্থা ছিল না। উম্মতের প্রতি অতিশয় করুণা ও দয়াশীলতার কারণেই তিনি তারাবিহর নামাজ নিয়মিত জামাতে আদায় করেননি। কারণ তিনি কোনো আমল নিয়মিত করলে তা ফরজ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কাজেই তারাবিহ ফরজ হয়ে গেলে দুর্বল উম্মতের জন্য নিয়মিত তারাবিহ আদায় করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ত। এ ব্যাপারে হাদিসে এসেছে, নবী করিম (সা.) রমজানের একরাতে মসজিদে তারাবিহ
পড়লেন। সাহাবা-এ-কেরামও তাঁর সঙ্গে জামাতে শামিল হলেন। দ্বিতীয় রাতে নামাজির সংখ্যা আরও বেড়ে গেল। এরপর তৃতীয় বা চতুর্থ রাতে নবী করিম (সা.) তারাবিহর জন্য মসজিদে এলেন না। ফজরের পর সবাইকে লক্ষ করে বললেন, ‘আমি তোমাদের আগ্রহ ও উপস্থিতি লক্ষ করেছি, কিন্তু এ নামাজ তোমাদের ওপর ফরজ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় আমি তোমাদের কাছে আসিনি।’ (সহিহ বুখারি হাদিস নং ২০১২, সহিহ মুসলিম হাদিস নং ৭৬১)। হজরত আবু বকর (রা.) এর খেলাফত কাল ও হজরত উমর (রা.) এর খেলাফতের প্রথম দিকে এ অবস্থায়ই ছিল। এরপর হযরত উমর (রা.) মসজিদে নববীতে সাহাবিদের খ- খ- জামাতে ও একাকী তারাবিহর নামাজ পড়তে দেখে সবাই মিলে এক জামাতে তারাবিহ পড়ার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। এরপর তিনি হজরত উবাই ইবনে কা’ব (রা:) এর পিছনে সবাইকে শামিল করে দিলেন। (সহিহ বুখারি হাদিস নং ২০১০)
তারাবিহ শব্দের অর্থ ও নামকরণের কারণ : হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) বলেন, তারাবিহ শব্দটি তারবিহাতুন এর বহুবচন। তারবিহাতুন অর্থ একবার বিশ্রাম গ্রহণ করা। রমজান মাসে ইশার নামাজের পর যে (২০ রাকাত) সুন্নাত নামাজ পড়া হয়, তা হলো তারাবিহর নামাজ। এ নামাজের নিয়ম হলো প্রতি দুই রাকাত পর সালাম ফিরানো এবং প্রতি চার রাকাত পর বসে বিশ্রাম গ্রহণ করা। এ নামাজকে কিয়ামে রমজানও বলা হয়। যখন থেকে সাহাবা-এ-কেরাম এ নামাজ সম্মিলিতভাবে জামাতে আদায় করতে শুরু করেন তখন থেকেই তারা চার রাকাতের পর বিশ্রাম নিতেন। তাই এ নামাজের নাম তারাবিহ বলা হয় (ফাতহুল বারী, কিতাবু সালাতিত তারাবিহ ৪/২৯৪, তুহফাতুল আলমায়ী ২য় খ-, ২৮৯ পৃ., কামুসুল ফিকহ ২য় খ-, ৪৪৮ পৃ., আলবাহরুর রায়েক: ২য় খ-, ১১৬ পৃষ্ঠা)।
তারাবিহ নামাজের বিধান : তারাবিহ নামাজ নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই সুন্নতে মুয়াক্কাদা। এ নামাজ পুরুষ মসজিদে জামাতের সঙ্গে আর মহিলা ঘরে আদায় করা বেশি সাওয়াবের কাজ। এ নামাজে কুরআন শরিফ খতম করা অধিক সাওয়াবের কাজ। তবে সূরা তারাবিহর মাধ্যমে আদায় করলেও নামাজ হয়ে যাবে।
ফুকাহায়ে কেরাম বলেনÑপুরুষ মসজিদে জামাতের সঙ্গে তারাবিহর নামাজ পড়া সুন্নাতে মুয়াক্কাদা কেফায়া। কোনো মহল্লায় যদি কেউ-ই জামাতের সঙ্গে পড়ে তাহলে সবাই গুনাহগার হবে। আর যদি কিছু লোক মসজিদে জামাতের সঙ্গে আদায় করে আর কেউ কেউ ঘরে একা একা আদায় করে তাহলে সবাই গুনাহগার হবে না। তবে এ কথা অবশ্যই স্মরণ রাখতে হবে যে, যারা একা একা পড়লেন তারা জামাতে পড়ার সাওয়াব থেকে বঞ্চিত হলেন। (কামুসুল ফিকহ: ২য় খ-, ৪৫০ পৃষ্ঠা)
তারাবিহ নামাজের সূচনা থেকেই ২০ রাকাত আদায় করা হতো। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন যে রাসূলে পাক (সা.) রমজান মাসে ২০ রাকআত (তারাবিহ) নামাজ আদায় করতেন এবং এরপর তিন রাকাত বেতরের নামাজও আদায় করতেন। (এ হাদিসটি মোসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, ২য় খ-, হাদিস নং ৭৬৯২, বায়হাকি (খ. ২ প.৪৯৬)। ইমাম তাবরানির আল-মুজমালুল কাবীর (খ:১১, পৃ:৩১)। আল-আওসাত লিততাবরানি (খ:১, পৃ. ৪৪৪)। আল ইসতিযকার (খ:৫, পৃ: ১৫৬) ইত্যাদিসহ হাদিসের নির্ভরযোগ্য বহু কিতাবে উল্লেখ রয়েছে)।
হযরত উমর (রা.)-এর খিলাফতকালে সাহাবা-এ-কেরামের ইজমা দ্বারা রমজান মাসে ২০ রাকাত তারাবিহর নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করার রীতি প্রচলন হয়। নতুবা মূল তারাবিহর সূচনা হজরত রাসূল (সা.) থেকেই হয়েছে। (আল মুগনি ১ম খ-, ৮৩৩ ও ৮৩৪ পৃষ্ঠা)।
![]() সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected] |