একাত্তর সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স ন্যূনতম ১২ বছর ৬ মাস নির্ধারণ করে জারি করা সরকারি পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। এ সংক্রান্ত এক রিটের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করে রোববার এ রায় দেন হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলে বেঞ্চ। রিট আবেদনকারীর পক্ষে বক্তব্য উপস্থাপন করেন ব্যারিস্টার ওমর সাদাত ও ব্যারিস্টার এবিএম আলতাফ হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেছুর রহমান।

মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ১৯৮৮ সালের ২৬ জুন ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরে চাকরিতে যোগ দেন মাহমুদ হাসান। জন্মতারিখ অনুযায়ী ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বরে তার বয়স ১২ বছর ৪ মাস ১২ দিন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর ২ মার্চ ভূতাত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের এক অফিস আদেশে মাহমুদ হাসানকে বলা হয়, গত বছর ১৭ জুলাই তার বয়স ৫৯ বছর পূর্ণ হতে চলেছে। সরকারি বিধি অনুযায়ী ১৮ জুলাই থেকে তার অবসরোত্তর ছুটি (পিআরএল) শুরু হবে। এ অবস্থায় তিনি ছুটি ভোগ করতে চাইলে তাকে আবেদন করতে বলা

হয়। এরপর বিদ্যুৎ, জ্বলানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ এক অফিস আদেশে জানায়, ২০১৮ সালের ১৭ জানুয়ারি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় মুক্তিযোদ্ধাদের ন্যূনতম বয়স ১২ বছর ৬ মাস নির্ধারণ করে যে সংশোধিত পরিপত্র জারি করেছে তার সঙ্গে ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের পরিচালক মাহমুদ হাসানের বয়স সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। 
এ ব্যাপারে ব্যারিস্টার এবিএম আলতাফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ১৯৭৪ সালের পাবলিক সার্ভিস রিটায়ারমেন্ট অ্যাক্ট অনুযায়ী ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের পরিচালক মাহমুদ হাসানের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ৬০ বছর পর্যন্ত চাকরির সুযোগ পাওয়ার কথা। ফলে তার প্রতি যে অফিস আদেশ দেওয়া হয়েছে তা আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। যে কারণে তিনি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জারি করা গেজেট, সংশোধিত পরিপত্র ও অফিস আদেশটি চ্যালেঞ্জ করে ২০১৮ সালে জুলাই মাসে হাইকোর্টে রিট করেন। ওই বছর ১৫ জুলাই আদালত ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে সরকারি পরিপত্র ও অফিস আদেশটির কার্যকারিতা ছয় মাসের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেন এবং পরিপত্র ও অফিস আদেশ কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। প্রসঙ্গত, একাত্তর সালে মুক্তিযোদ্ধাদের ন্যূনতম বয়স বিষয়ে ২০১৬ সালে প্রথম গেজেট প্রকাশ করে সরকার। ওই গেজেটে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধার ন্যূনতম বয়স হতে হবে ১৩ বছর। পরে গত ১৭ জানুয়ারি আরেক পরিপত্রের মাধ্যমে প্রকাশিত সংশোধিত গেজেটে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ন্যূনতম বয়স হতে হবে ১২ বছর ৬ মাস।