প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, মঙ্গলবার, মে ২১, ২০১৯ | |
এক শিবিরে স্বস্তির নিঃশ্বাস, হাসির রেখা আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠার ইঙ্গিত। অন্য শিবিরে আচমকা যেন ভাটার টান। বুথফেরত সমীক্ষায় মেলা আভাস কতটা প্রভাব ফেলেছে ভারতের রাজনীতিতে, দুই পক্ষের মেজাজে মেঘ-রোদের খেলায় বেশ পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে তা। শুরু হয়ে গেছে ইভিএম কারচুপির আশঙ্কা প্রকাশ করাও।
অধিকাংশ সমীক্ষার ইঙ্গিত, ৩০০-এর বেশি আসন জিতে সরকার ধরে রাখছে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন এনডিএ। দু-একটি সমীক্ষায় এনডিএকে ৩০০-এর বেশ কিছুটা কম আসনও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা এনডিএ পাবে নাÑ এমন আভাস কোনো সমীক্ষাই দেয়নি।
বিরোধী শিবিরের প্রায় সব নেতাই বুথফেরত সমীক্ষার দেওয়া পূর্বাভাসকে নস্যাৎ করেছেন। বহুবারই যে এসব সমীক্ষার দেওয়া আভাস ভুল প্রমাণিত হয়েছে, সে কথা তারা মনে করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু দিল্লিতে অ-বিজেপি সরকার গঠনের উপযুক্ত রাজনৈতিক বিন্যাস তৈরি করার জন্য যে তৎপরতা শুরু হয়েছিল বিরোধী শিবিরে, তা আচমকা থমকে গেছে। একা কুম্ভ হয়ে সে তৎপরতা জিইয়ে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী তথা তেলুগু দেশম সুপ্রিমো চন্দ্রবাবু নায়ডু।
মঙ্গলবার এনডিএ’র সব শরিককে দিল্লিতে নিমন্ত্রণ করেছেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। অশোক
হোটেলে ডিনার পার্টির আয়োজন করেছেন নরেন্দ্র মোদীর প্রধান সেনাপতি। ফলপ্রকাশ পরবর্তী স্ট্র্যাটেজি নিয়ে একদফা আলোচনা সেরে নিতেই যে শরিক দলগুলোর নেতাদের এ আমন্ত্রণ জানিয়েছেন অমিত শাহ, তা নিয়ে রাজনৈতিক শিবিরের খুব একটা সংশয় নেই। তাৎপর্যপূর্ণভাবে ভোট শেষ হওয়ার পরে নয়, বুথফেরত সমীক্ষাগুলোর ফলাফল সামনে আসার পরে এ ডিনার পার্টির আয়োজন হয়েছে। বিজেপি সূত্রের খবর, মঙ্গলবারের নৈশভোজের টেবিলকে অঘোষিতভাবেই বিজয় উদ্?যাপনের টেবিল করে তুলবে বিজেপি। পরবর্তী সরকার গঠন নিয়ে প্রয়োজনীয় নানা আলোচনাও সেই আবহেই প্রাথমিকভাবে সেরে নেওয়া হবে।
সমীক্ষার ফলাফল বিজেপিকে স্বস্তিতে না রাখলে অমিত শাহ এ পার্টির আয়োজন করতেন কি না, তা নিয়ে অনেকেরই সংশয় রয়েছে। এনডিএ গরিষ্ঠতায় পৌঁছতে পারছে না, এমন কোনো আভাস পাওয়া গেলে কিন্তু এ রকম তৃপ্ত ভঙ্গিতে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত কিছুতেই অপেক্ষা করতেন না অমিত শাহ। রোববার রাত বা সোমবার সকাল থেকেই বিজেপির ক্রাইসিস ম্যানেজাররা সংখ্যা জোগাড়ের জন্য গোটা দেশে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দিতেন সে ক্ষেত্রে। মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
স্বাভাবিকভাবেই গেরুয়া শিবিরের মেজাজে যে স্বস্তির রং, তার ঠিক বিপরীত ছবিটাই দেখা যাচ্ছে বিরোধী শিবিরের একটি অংশে। বিজেপিবিরোধী শক্তিগুলোকে এক ছাতার তলায় আনার বিষয়ে এখনই আর খুব একটা উদ্যোগী হতে দেখা যাচ্ছে না কংগ্রেসকে। যেসব আঞ্চলিক বা রাজ্য দলের নেতা বৈঠকের ইচ্ছা প্রকাশ করছেন, রাহুল গান্ধী বা সোনিয়া গান্ধী তাদের সঙ্গে দেখা করছেন ঠিকই। কিন্তু সরকার গড়ার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য যে ধরনের তৎপরতা জরুরি, ১০ জনপথ বা ২৪ আকবর রোডে তা আপাতত অনুপস্থিত।
আচমকা যেন একটু সাবধানী বহুজন সমাজ পার্টির (বিএসপি) সুপ্রিমো তথা উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতীও। গত এক-দেড় মাস ধরে বিজেপিকে এবং মোদী-শাহ জুটিকে একের পর এক ইস্যুতে অত্যন্ত চড়া ভাষায় আক্রমণ করছিলেন মায়া। শুধু উত্তরপ্রদেশের বিষয় নিয়ে নয়, মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে বিজেপির সংঘাতের বিষয় নিয়েও মুখ খুলছিলেন বিএসপি সুপ্রিমো। কিন্তু রোববার সন্ধ্যায় বুথফেরত সমীক্ষার ফল সামনে আসার পর থেকে যেন একটু সাবধানী দলিত হৃদয়েশ্বরী। দিল্লি গিয়ে সোনিয়া-রাহুলের সঙ্গে বৈঠক করার পরিকল্পনা আপাতত বাতিল করে দিয়েছেন মায়াবতী। উত্তরপ্রদেশে যার হাত ধরে লড়লেন তিনি, সেই অখিলেশ যাদবকেও মায়ার দেখা পেতে হয়েছে তার বাড়ি গিয়ে।
হাল ছাড়ছেন না শুধু চন্দ্রবাবু নায়ডু। শনিবার, রোববার, সোমবারÑ দেশের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্ত পর্যন্ত অক্লান্ত ছুটছেন তিনি। সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি এবং সিপিআই-এর সুধাকর রেড্ডির সঙ্গে বৈঠক করেছেন নায়ডু। রোববার প্রথমে লখনউ গিয়ে বৈঠক করেছেন এসপি সভাপতি অখিলেশ যাদব এবং বিএসপি সুপ্রিমো মায়াবতীর সঙ্গে। সে দিনই দিল্লিতে দুই বার বৈঠক করেছেন রাহুল গান্ধীর সঙ্গে, একবার সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে। বৈঠক করেছেন এনসিপি প্রধান শারদ পওয়ার, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আম আদমি পার্টির (আপ) প্রধান অরবিন্দ কেজরীওয়াল এবং লোকতান্ত্রিক জনতা দলের প্রধান শারদ যাদবের সঙ্গেও।
সোমবার চন্দ্রবাবু নায়ডু এসেছেন কলকাতায়। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল চেয়ারপার্সন মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি। ভোটের ফল প্রকাশের পরবর্তী রণকৌশল নিয়ে আলোচনা করতেই যে এ বৈঠক, তা-ও স্পষ্টই জানানো হয়েছে।
কেন এখনও শুধু শুধু নিজের ক্লান্তি বাড়াচ্ছেন চন্দ্রবাবু? কটাক্ষ ছুড়েছে বিজেপির শরিক শিবসেনা। দলের মুখপাত্র ‘সামনা’য় এ কটাক্ষ ছোড়া হয়েছে অন্ধ্রের মুখ্যমন্ত্রীর দিকে। কটাক্ষ বিজেপিও ছুড়েছে। বিদায়ী সরকারের মন্ত্রী তথা বেগুসরায়ের বিজেপি প্রার্থী গিরিরাজ সিংহের শ্লেষাত্মক মন্তব্যÑ‘মমতা ব্যানার্জিকে নিয়ে রাজনৈতিক আইসিইউতে চলে যাওয়া উচিত চন্দ্রবাবু নায়ডুর।’ আর নিজের অবস্থান নমনীয় করে ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেডি প্রধান নবীন পট্টনায়কের ইঙ্গিত, বিজেপি নিয়ে আপাতত কোনো ছুঁৎমার্গ নেই তার। ওড়িশার উন্নয়নে যারা সাহায্য করবেন, তাদের সঙ্গেই হাত মেলাতে প্রস্তুতÑ নবীনের এ মন্তব্যকে মোদীর প্রতি স্পষ্ট বার্তা হিসেবেই দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
শেষ পর্যন্ত কার পক্ষে গেল দেশের রায়, সে কথা বৃহস্পতিবার বিকালের আগে হলফ করে বলার অবস্থায় কেউই নেই। কিন্তু বুথফেরত সমীক্ষা যে একটা আবহ তৈরি করে দিয়েছে, তা অস্বীকার করার অবস্থায় প্রায় কেউই নেই। মমতা ব্যানার্জি বা চন্দ্রবাবু নায়ডুরা এখনও বুথফেরত সমীক্ষাকে সম্পূর্ণ নস্যাৎ করারই পক্ষপাতী। কিন্তু বিহারে বিজেপির ‘অবাধ্য’ শরিক নীতীশ কুমার ভোল বদলে ফেললেন ৪-৫ ঘণ্টার মধ্যে। শেষ দফার ভোটগ্রহণের দিন দুপুরেই নীতীশ আচমকা সুর চড়িয়েছিলেন বিজেপির বিরুদ্ধে। নাথুরাম গডসে সম্পর্কে সাধ্বী প্রজ্ঞার মন্তব্যকে হাতিয়ার করে আচমকা বেশ বিরূপ প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন। কিন্তু রোববার সন্ধ্যার পরে অবস্থান সামলে নিয়ে খুব স্পষ্ট করে দিয়েছেনÑ এনডিএ ছাড়ার প্রশ্নই নেই। মুখে যে যা-ই বলুন, বুথফেরত সমীক্ষার দেওয়া আভাসকে নস্যাৎ করতে পারছেন না কেউই এবং ভোটের ফল প্রকাশের আগে পর্যন্ত ওই সমীক্ষার দেওয়া আভাসই নিয়ন্ত্রণ করছে ভারতের জাতীয় রাজনীতির নানা ¯্রােতকে। সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা
![]() সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected] |