logo
প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, মঙ্গলবার, মে ২১, ২০১৯
আজকের তারাবি ১৬
রাশেদুর রহমান


আজ ১৬তম তারাবিতে সূরা ফুরকান (২১-৭৭), সূরা শুআরা এবং সূরা নামল (১-৫৯) পড়া হবে। পারা হিসেবে আজ পড়া হবে ১৯তম পারা। আজকের তারাবিতে পঠিতব্য অংশের বিষয়বস্তু তুলে ধরা হলোÑ
দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশের ইসলাম পাতায় ‘আজকের তারাবি’ শিরোনামে প্রতিদিন তারাবি নামাজে কোরআন মজিদের যে অংশটুকু তেলাওয়াত করা হবে তার সারমর্ম ২৭ রমজান পর্যন্ত ছাপানো হবে। মসজিদের সম্মানিত ইমাম বা কমিটির দায়িত্বশীলদের খেদমতে তারাবির আগে বা পরে এ অংশটুকু মুসল্লিদের উদ্দেশে পড়ে শোনানোর অনুরোধ জানাচ্ছি।
২৫. সূরা ফুরকান (২১-৭৭)
পারার সূচনায় মুশরিকদের কিছু আপত্তি এবং অনর্থক দাবি-দাওয়ার জবাব দেওয়া হয়েছে। মুশরিকরা বলত, ‘কেন আমাদের কাছে ফেরেশতা পাঠানো হয় না কিংবা কেন আমরা স্বচক্ষে আমাদের রবকে দেখতে পাই না?’ জবাবে বলা হয়েছে, ফেরেশতাদের মুশরিকরা মৃত্যুর সময় দেখতে পাবে, যখন ফেরেশতারা তাদের জান কবজ করতে আসবেন। সেদিন তাদের আফসোস ছাড়া করার আর কিছুই থাকবে না। কেয়ামতের দিনটা হবে জালেমদের জন্য অতি ভয়ানক। তারা আফসোস করবে আর আঙুল কামড়ে বলবে, হায়, যদি নবীর পথে চলতাম। সেদিন নবী আল্লাহর কাছে শেকায়েত করে বলবেন, ‘হে রব, আমার জাতি কোরআনকে বর্জন করেছিল।’ এরপর অল্প অল্প করে কোরআন নাজিলের একটি বিশেষ হেকমত বয়ান করা হয়েছে।
পারার দ্বিতীয় রুকুতে কয়েকজন নবী ও তাদের জাতির আলোচনা করে নবী মুহাম্মদ (সা.) কে সান্ত¡না দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া দলিল-প্রমাণসহ আল্লাহপাকের কুদরত এবং একত্ববাদের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। সূরার শেষে ‘ইবাদুর রহমান’ তথা রহমানের বিশেষ বান্দাদের কিছু গুণের বিবরণ দেওয়া হয়েছে। গুণগুলো হলোÑ বিনয় ও নম্রতা, জাহান্নামের আজাবের ভয়, মিতব্যয়িতা, মূর্খদের মার্জনা করা, রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগি করা, তওবা-ইস্তেগফার করা, আল্লাহপাকের কালাম যথাযথ শ্রবণ করা এবং তা থেকে উপকৃত হওয়া। নেক বিবি ও বাচ্চা লাভের জন্য দোয়া করা, নিজে সঠিক পথ লাভ এবং অন্যদের সঠিক পথের সন্ধান প্রদানের তৌফিক কামনা করা এবং জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য নিয়মিত প্রার্থনা করতে থাকা। শিরক, অন্যায়, হত্যা, মিথ্যা সাক্ষ্য, জেনা ব্যভিচার থেকে বেঁচে থাকা। গানবাজনা এবং খারাপ কাজের আসরে না যাওয়া। (৬৩-৭৭)। উল্লেখিত গুণের অধিকারী ব্যক্তি জান্নাতে বিশেষ পুরস্কারে ভূষিত হবেÑ এ মর্মে ঘোষণার মাধ্যমে সূরা সমাপ্ত হয়েছে।
২৬. সূরা শুআরা (মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ২২৭, রুকু ১১)
সূরার সূচনায় পবিত্র কোরআনের নিয়ামতের বিবরণ দেওয়া হয়েছে। এরপর উম্মতের প্রতি নবী মুহাম্মদ (সা.) এর দয়া-মায়ার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি এ কথাও বলা হয়েছে, মুশরিকরা কোরআন ও নবীর আদর্শ অনুযায়ী জীবনযাপন করে না। সুতরাং আগের কাফেরদের মতোই হবে তাদের পরিণাম। এ প্রসঙ্গ ধরেই সূরায় মুসা (আ.) (১০-৬৮), ইবরাহিম (আ.) (৭০-৮৯), নূহ (আ.) (১০৫-১২২), হুদ (আ.) (১২৩-১৪০), সালেহ (আ.) (১৪১-১৫৯), লুত (আ.) (১৬০-১৭৫), শুআইব (আ.) (১৭৬-১৯১) এবং তাদের জাতির আলোচনা করা হয়েছে। উল্লেখিত প্রতিটি সম্প্রদায়কেই আল্লাহ তায়ালা বহু নেয়ামত দান করেছিলেন। কিন্তু তারা নেয়ামতের কদর করেনি। ফলে তারা সবাই ধ্বংস হয়েছে। এসব ঘটনায় আমাদের জন্য যে শিক্ষা রয়েছে তা হলো, ১. সত্য ও হকের অনুসারীরাই সফল হয় আর জালেমদের কপালে ধ্বংস ছাড়া আর কিছুই থাকে না। ২. মানুষের উচিত সব সময় আল্লাহর প্রতি মনোনিবেশ করে থাকা। ৩. আল্লাহ যাকে হেদায়েত দিতে চান সেই শুধু হেদায়েত পায়। ৪. সম্পদের বড়াই, অপচয়, আহংকার, অকৃতজ্ঞতা এবং কুপ্রবৃত্তির চাহিদা পূরণে মেতে থাকার পরিণতি কখনও ভালো হয় না। ৫. মানুষের হক নষ্ট করার অর্থই হলো আল্লাহর আজাব-গজব ডেকে আনা। বিভিন্ন জাতি ও সম্প্রদায়ের আলোচনার পর সূরার শেষ রুকুতে পবিত্র কোরআনের আলোচনা করা হয়েছে, কোনো নেক উদ্দেশ্য ছাড়াই যারা শুধু কাব্য-কবিতার পেছনে ছোটে, ঈমান-আখলাক শুদ্ধ করে না, তাদের নিন্দা করা হয়েছে এবং মুশরিকদের কিছু আপত্তির জবাব দেওয়ার মাধ্যমে সূরাটির ইতি ঘটেছে। 
২৭. সূরা নামল (মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ৯৩, রুকু ৭)
পিঁপড়াকে আরবিতে নামল বলে। সূরাটিতে পিঁপড়া সংশ্লিষ্ট একটি ঘটনা থাকায় সূরার নাম নামল। সূরা নামলের সূচনা হয়েছে কোরআনুল কারিমের পরিচয় ও বড়ত্বের আলোচনার মাধ্যমে। এরপর সংক্ষিপ্তাকারে নবী মুসা, সালেহ এবং লুত আলাইহিমুস সালামের ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। দাউদ (আ.) এবং তার ছেলে সুলাইমান (আ.) এর ঘটনাও রয়েছে এ সূরায়। আর তা কিছুটা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। মানুষ, জিন, পাখি সবকিছুকে আল্লাহ তায়ালা সুলাইমান (আ.) এর বশবর্তী করে দিয়েছিলেন। তিনি বিভিন্ন প্রাণী ও পাখির ভাষাও বুঝতেন। একদিন সুলাইমান (আ.) তার দলবলসহ পিঁপড়ার একটি বাসার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি শুনতে পেলেন, একটি পিঁপড়া অন্য পিঁপড়াগুলোকে বলছে, ‘জলদি নিজ নিজ গর্তে ঢুকে পড়। সুলাইমান  ও তার লস্কর নিজেদের অজান্তেই তোমাদের পিষে ফেলতে পারে।’ সুলাইমান (আ.) পিঁপড়াটির কথা শুনে মুচকি হাসেন এবং আল্লাহর শুকর আদায় করেন। (১৫-১৯)। সুলাইমান (আ.) এর দরবারে হুদহুদ পাখিও থাকত। একদিন পাখিটি সুলাইমান (আ.) কে সংবাদ দিল, সাবা সম্প্রদায়ের রানি এবং তার কওম সূর্য পূজা করে। সুলাইমান (আ.) চিঠির মাধ্যমে সাবার রানিকে নিজের দরবারে উপস্থিত হতে বললেন। ওই রানি নিজের পার্থিব ঐশ্বর্য নিয়ে গর্ব করত। কিন্তু সুলাইমান (আ.) এর  দরবারে এসে অভিনব ও নয়নাভিরাম সব সাজ-সরঞ্জাম দেখে রানির কাছে নিজ শক্তি-সামর্থ্যকে তুচ্ছ মনে হতে থাকে। পরে রানি ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করে। (২০-৪৪)। এরপর সালেহ ও লুত (আ.) এর ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণের মাধ্যমে ১৯তম পারা সমাপ্ত হয়েছে। (৪৫-৫৮)।

 রাশেদুর রহমান
পেশ ইমাম ও খতিব, বুয়েট সেন্ট্রাল মসজিদ

সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected]