logo
প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, শুক্রবার, মে ২৪, ২০১৯
সাম্য ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় জাকাত
মওলানা মোহাম্মদ মোশাররফ হোসাইন

জাকাত ইসলামের পাঁচটি ভিত্তির মধ্যে একটি। জাকাত ফরজ হয় দ্বিতীয় হিজরিতে। আল্লাহ তায়ালা কোরআনে কারিমের বহু জায়গায় জাকাতের কথা উল্লেখ করেছেন। যেমন ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা নামাজ কায়েম কর, জাকাত আদায় কর এবং রুকু কর রুকুকারীদের সঙ্গে’ (সূরা বাকারা : ৪৩)। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাম্য প্রতিষ্ঠায় জাকাতের বিধান সম্পর্কে ইরশাদ করেন, তাদের মধ্যে যারা ধনী তাদের থেকে গ্রহণ করা হবে, আর তাদের মধ্যে যারা দরিদ্র বা অভাবি তাদের মধ্যে বণ্টন করা হবে। 

ইসলাম সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের ধর্ম। একজনের হাতে বিপুল অর্থসম্পদ জমা হওয়াকে ইসলাম পছন্দ করে না। ইসলাম চায় ধনী-গরিব সবাই স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করুক। এ উদ্দেশেই জাকাতের বিধান প্রবর্তন করা হয়েছে। আবদুল্লাহ বিন উমর (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আমাকে মানুষের সঙ্গে যুদ্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যতক্ষণ না তারা সাক্ষ্য দেয় আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসূল আর নামাজ কায়েম করে এবং জাকাত আদায় করে। (বোখারি, মুসলিম)। জারির ইবনে আবদুল্লাহ হতে বর্ণিত, তিনি 

বলেন, আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাতে বাইয়াত গ্রহণ করি নামাজ কায়েম করা, জাকাত আদায় করা এবং প্রত্যেক মুসলমানের কল্যাণ কামনার শর্তে। (বোখারি, মুসলিম)।
আবু সায়ীদ (রা.) বর্ণনা করেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের নসিহত করছিলেন। তিনবার শপথ করে তিনি বললেন, যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বে, রমজানের রোজা রাখবে, জাকাত প্রদান করবে এবং সব ধরনের কবিরা গুনা থেকে বিরত থাকবে আল্লাহ তায়ালা তার জন্য অবশ্যই বেহেশতের দরজা খুলে দিয়ে বলবেন, তোমরা নিরাপদে তাতে প্রবেশ কর। (নাসায়ি : ২৩৯৫)। 
হযরত আবুদ্দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা নিজেদের মালের জাকাত প্রদান করে সে মালের হেফাযতের ব্যবস্থা কর আর কেউ রোগাক্রান্ত হলে সদকা দিয়ে আরোগ্য লাভের ব্যবস্থা কর। অর্থাৎ জাকাত দানের মধ্যে বিপদাপদ থেকে সম্পদের হেফাজতের গ্যারান্টি রয়েছে আর সদকা দিলে রোগশোক দূর হয়ে যাওয়ার নিশ্চয়তা রয়েছে।
জাকাতের এমন গুরুত্বের কারণেই যারা জাকাত দেয় না তাদের পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। 
আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা যাকে সম্পদ দিয়েছেন অথচ সে তার জাকাত আদায় করে না, কিয়ামত দিবসে তার সম্পদকে দুই চোখবিশিষ্ট বিষাক্ত সাপে পরিণত করা হবে। তারপর সাপটিকে কিয়ামতের সে দিবসে তার গলায় জড়িয়ে দেওয়া হবে। সাপ তার দুই মুখে দংশন করতে করতে বলতে থাকবে, আমি তোমার বিত্ত, আমি তোমার গচ্ছিত সম্পদ। সুনানে নাসায়িতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি জাকাত আদায় করে না, সে কিয়ামতের দিন একটি অগ্নিখ- নিয়ে উপস্থিত হবে, যা দ্বারা তার কপালে ও পিঠে দাগ দেওয়া হবে। বুরাইদা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে সম্প্রদায় জাকাত প্রদান করবে না আল্লাহ তাদের দুর্ভিক্ষের মতো বিপদে নিপতিত করবেন। 
জাকাত আদায়ের মাধ্যমে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে দূরত্ব কমে যায়। সমাজের উভয় শ্রেণির মাঝে ভালোবাসা ও সৌহার্দ্যরে সেতুবন্ধন রচিত হয়। দূর হয় পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ। কারণ গরিবরা যখন ধনীদের সম্পদ দ্বারা উপকৃত হয় এবং তাদের সহানুভূতি লাভ করে, তখন তাদের সহযোগিতা করে এবং তাদের স্বার্থ ও সম্মান রক্ষায় সচেষ্ট হয়। জাকাত আদায় করলে আল্লাহ তায়ালা ধনসম্পদ এবং ধনসম্পদের বরকত বাড়িয়ে দেন। যেমন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, সদকা করার কারণে কখনও সম্পদ কমে না। দান-খয়রাত করলে সম্পদের পরিমাণ কমলেও সম্পদের বরকত কমে না। আল্লাহ তায়ালা এ সম্পদকে তার ভবিষ্যতের জন্য বরকতময় করে দেন এবং তার দান-খয়রাতের কারণে তাকে এর চেয়ে উত্তম সম্পদ দান করেন। জাকাত একটি সমাজ বা দেশের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও গতিশীলতাকে স্বাভাবিক রাখার নিশ্চয়তা বিধান করে। জাকাতভিত্তিক অর্থব্যবস্থাই বর্তমান অর্থব্যবস্থার সব ধরনের ত্রুটি-বিচ্যুতি ও নানাবিধ সমস্যার যুৎসই সমাধান। জাকাত মানবাত্মাকে কৃপণতা থেকে মুক্ত করে। জাকাত ইবাদতে মালি বা অর্থনৈতিক ইবাদত। এ ইবাদত আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং তার অনুগ্রহ ও রহমতকে ত্বরান্বিত করে। 
লেখক : খতিব, কালেক্টরেট জামে মসজিদ, চাঁদপুর

সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected]