
প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, শনিবার, মে ২৫, ২০১৯ | |
ইসরাইল রাষ্ট্রের স্বপ্নদ্রষ্টা থিওডোর হারজেল হলেও আজ থেকে ১০২ বছর আগে ব্রিটিশ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লর্ড আরথার বালফোরের লেখা চিঠিই মূলত ইহুদি রাষ্ট্র গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। ১৯১৭ সালের ২ নভেম্বর জায়নবাদী নেতা ব্যারন রথচাইল্ডকে বালফোর এই বলে চিঠি লিখেন যে, মহামান্য ব্রিটিশ সরকার ফিলিস্তিনে ইহুদি জনগণের জন্য জাতীয় আবাসভূমি গড়ে তোলার জন্য ইতিবাচক দৃষ্টি পোষণ করে, আর এই লক্ষ্য অর্জনে তার সর্বোত্তম প্রয়াস প্রয়োগ করা হবে এবং এটাও পরিষ্কার যে, এমন কিছু করা হবে না, যা ফিলিস্তিনে বিদ্যমান অ-ইহুদি সম্প্রদায়ের নাগরিকদের ধর্মীয় অধিকার কিংবা অন্য কোনো দেশে ইহুদিদের বিরাজমান অধিকার অ-রাজনৈতিক অবস্থান ক্ষুণœ করতে পারে। ইতিহাসের পাতায় এটি বেলফোর ঘোষণা হিসেবে পরিচিত।
১৯৩০ সালে পোল্যান্ড থেকে আসা ইহুদিরা গাজা থেকে দুই মাইল উত্তরে কিবুটাস এলাকায় কৃষি খামার স্থাপন ও জমি ক্রয়ের কাজ শুরু করে। তখন ফিলিস্তিনি মুসলমান ও ইহুদিদের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় থাকলেও ক্রমান্বয়ে ফিলিস্তিনিরা জমি হারাতে শুরু করে। ইসরাইল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার সময় প্রায় সাত লাখের মতো ফিলিস্তিনি ভূমিচ্যুত হয়েছে। তারা ভেবেছিল দ্রুত সমস্যার সমাধান হলে বাড়ি ফিরে আসতে পারবে। কিন্তু ইসরাইল তাদের আর কখনোই বাড়িতে ফিরতে দেয়নি। ইসরাইলের সাবেক প্রেসিডেন্ট শিমন পেরেজ বছর দশেক আগে বিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ফিলিস্তিনিদের কেন এই দশা হলো সেজন্য তাদের নিজেদেরই প্রশ্ন করা উচিত। পেরেজ আরও বলেন, অধিকাংশ জমি ফিলিস্তিনিদের হাতেই থাকত। তাদের একটি আলাদা রাষ্ট্র হতো। কিন্তু তারা সেটি প্রত্যাখ্যান করেছে। ১৯৪৭ সালে তারা ভুল করেছে। আমরা কোনো ভুল করিনি। তাদের ভুলের জন্য আমরা কেন ক্ষমা চাইব?
বলা দরকার যে, বেলফোর ঘোষণার পরপরই ১৯১৭ সালের নভেম্বর মাসে তুরস্ক সেনাদের হাত থেকে ফিলিস্তিন দখল করে নেয় ব্রিটিশ সরকার। ১৯৩৩ সালে জার্মানি শাসক হিটলারের ইহুদি বিদ্বেষ মনোভাব ইসরাইল রাষ্ট্র স্থাপনের চিন্তাভাবনা আরও ত্বরান্বিত হতে থাকে। ১৯৩৯-১৯৪৫ সালে সংঘটিত হওয়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন প্রায় ৬০ লাখ ইহুদি দমন করা হয়, যা ইতিহাসে হলোকাস্ট নামে পরিচিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এ হলোকাস্টই ইহুদি রাষ্ট্র গঠনের মূল হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করে সমগ্র ইউরোপ তথা ব্রিটিশরা। অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে এ কথা বলতে আমরা বাধ্য যে, ইউরোপে ইহুদি বিদ্বেষের জন্য তারা নিজেরাই দায়ী হলেও এর উচ্চ মাশুল দিতে হয়েছে ফিলিস্তিনি জনগণকে। এরই সঙ্গে ১৯৪৭ সালে ২৯ নভেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনি আবাসভূমকে ইহুদি ও আরবদের মধ্যে দুই ভাগ করার অনুমোদনই মনে হয় কফিনের শেষ পেরেকটি পুঁতে দেওয়া হয়। সর্বোপরি ১৯৪৮ সালের ১৪ মে ফিলিস্তিনে ব্রিটিশ শাসনের অবসান হলে ইসরাইলের প্রথম প্রধানমন্ত্রী বেন গুরিয়ান আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরাইলকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা দেন। সঙ্গে সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি এত বড় অন্যায়কে স্বীকৃতি দিয়ে পাকাপোক্ত করতে কোনো রকম দ্বিধাই করেননি। পাশাপাশি ফিলিস্তিনের জনগণের ওপর মহাবিপর্যয় নেমে আসে। লাখ লাখ মানুষ হয় বাস্তুহারা। ১৯৪৮ সালের পর ১৯৬৭ সালে ইসরাইলের দখলদারি আরও পাকাপোক্ত হয় গোলান উপত্যকা, পূর্ব জেরুজালেম ও পশ্চিমতীর দখলের মধ্য দিয়ে। নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ হওয়া ফিলিস্তিনির জনগণ অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছে বিশ্বের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে। যার দায় বিশ্ব মোড়লদেরই নিতে হবে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসনের সাহায্যে ইসরাইল আবারও ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর তাদের দখল অভিযান অব্যাহত রেখেছে। গত বছর ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য সব ধরনের মানবিক সাহায্য-সহযোগিতা পুরোপুরি বন্ধ ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। ইউএনআরডব্লিউএকে তহবিল দেওয়া বন্ধ করে দেয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। তখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, ফিলিস্তিনিরা যতক্ষণ পর্যন্ত না ইসরাইলের সঙ্গে শান্তিচুক্তিতে সম্মত হবে, তার দেশ ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো সহযোগিতা দেবে না ফিলিস্তিনিকে। এরপর ফিলিস্তিনি শরণার্থীরা আরও দুর্ভোগের মধ্যে পড়ে।
ফিলিস্তিনিদের নিজ বাসভূমি থেকে ভূমিচ্যুত করে এবং ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে বিশ্ব মোড়ল রাষ্ট্রগুলো যে পাপ ও অন্যায়ের সূচনা করেছে তার খেসারত দশকের পর দশক ধরে দিতে হচ্ছে ফিলিস্তিনি মুসলমানদের। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সংজ্ঞায় বলা আছে, কোনো রাষ্ট্র স্থাপনে ভূসীমানা নির্ধারণ করতে হবে আগে। অথচ কোনো ধরনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ না করেই বিশ্বশক্তির প্রত্যক্ষ মদদে অত্যন্ত প্রতাপের সঙ্গে টিকে আছে ইসরাইল রাষ্ট্র, যা শুধু রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সংজ্ঞাকেই অমান্য করেনি, অমান্য করেছে মানবতাকে, মানবজাতিকে তথা মুসলমানদের। তাই যুগ যুগ ধরে শরণার্থী শিবিরে বসবাস করা ফিলিস্তিনি মুসলমানদের তাদের নিজ বাসভূমে ফিরিয়ে আনতে এবং মানবতাকে প্রাধান্য দিয়ে এখনই কাজ করতে হবে। হ
শিক্ষার্থী
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
![]() সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected] |